জীবন ও সম্পদহানি রোধে পুরান ঢাকাকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা জরুরি

  23-02-2019 05:21PM

পিএনএস, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান ঃ পুরান ঢাকা বলতে আমরা বুঝি ঘিঞ্জি একটি জনবহল এলাকা। যেখানে যাতায়াত খুবই কষ্টকর। পুরো রাস্তায় জ্যাম লেগে থাকে প্রায় সারাক্ষণ। রাজধানীর গুলিস্তান থেকে সদরঘাট পর্যন্ত মূল সড়কের দুপাশে যাতায়াতে বর্ণনাতীত কষ্ট শিকার করতে হয়। ওই এলাকায় কেউ গেলে পুরো দিন হাতে রেখে তবেই সময় বের করে যান। ওই এলাকার চিত্র দেখলে মনে করার কোনো কারণ নেই যে, এটি রাজধানীর কোনো অংশ। অথচ এটি রাজধানীর অন্যতম স্থান। আদতে পুরান ঢাকা আবাসিক, না শিল্প এলাকা- সেটা বুঝা মুশকিল।

এককথায় পুরান ঢাকা সবচেয়ে বেশি ঘিঞ্জি ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। অবাক করা কাণ্ড হলো, ঢাকায় প্রতিবর্গ কিলোমিটারে ৩ লক্ষাধিক লোকের বসবাস। ভাবা যায়! অপরিকল্পতি নগরায়ণের কুফল এটা। পরিকল্পিতভাবে সবকিছু না হওয়ায় এলাকাটি মনুষ্য বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বুড়িগঙ্গার তীরবর্তী এলাকায় মানুষ নানা রকমভাবে দূষিত পরিবেশে ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাস করছে।

এ এলাকায় সবচেয়ে বড় ফল, ওষুধ, পারফিউম, বিস্ফোরকদ্রব্য, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আছে প্রসাধনী, প্লাস্টিক, বিভিন্ন ধরনের জুতা, সল্যুসন, শ্যাম্পু, লোশন, ক্রিমসহ নানা পণ্যের সমাহার। দেশের সবচেয়ে বড় রাসায়নিক ব্যবসাকেন্দও এখানে। আছে আরো বহু ধরনের কারখানা ও গুদাম। এখানে প্রায় প্রতিটি বাড়ির নিচে কারখানা, গোডাউন আর উপরে মানববসতি। এখানে বিস্ফোরকের ওপর বসবাস করছেন নাগরিকরা। এখানের প্রতিটি স্থান ব্যবহার করা হয় বাণিজ্যিক কাজে।

এখানের প্রায় সব বাড়ির নিচে গড়ে তোলা হয়েছে কারখানা ও গুদাম। যেগুলোয় রয়েছে অতি দাহ্য বস্তু। যেখানে আগুন লাগলে মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে। বের হওয়ার পথগুলো সরু হওয়ায় জনজীবনে এর প্রভাব পড়ছে। ঘটছে অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা। এতে প্রাণ যায় অসংখ্য মানুষের। এমনকি মারা পড়ছেন পথচারীরাও। সরু ও ঘিঞ্জি হওয়ায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়িগুলো এসব গলিতে ঢুকতে পারে না।

২০ ফেব্রুয়ারি রাতে পুরান ঢাকার এমন এক আগুনের ঘটনায় প্রাণ যায় ৮১ জনের। এর মধ্যে ৭০জন পরুষ, ৭জন নারী, ৪টি শিশু রয়েছে। আহত অর্ধশত। নিখোঁজ অনেকে। একইভাবে কয়েক বছর আগে এখানেই নিমতলীতে আগুনে পুড়ে মারা যান ১২০ জন। তখন বলা হরেছিল ওই এলাকা থেকে রাসায়নিক দ্রব্যের কারখানা ও গুদাম সরিয়ে নেওয়া হবে। সরিয়ে না নেওয়ার ফলে শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটল। কথা ও কাজে মিল না থাকায় এতগুলো প্রাণ অকালে ঝরল।

জানা গেছে, এসব এলাকায় প্রায়ই ছোটখাটো দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ও সম্পদের ক্ষতি হচ্ছে। গত বছরের ১৬ জুন লালবাগের ইসলামবাগের বাগানবাড়ি এলাকায় আগুনে ১৬টি কারখানা ও ২০টি গুদাম পুড়ে যায়। একই বছরের আগস্ট লালবাগের আলীঘাটে আগুনে বেশ কয়েকটি ঘর পোড়ে। ২০১৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ইসলামবাগের একটি চারতলা বাড়ির নিচতলায় থাকা প্লাস্টিক কারখানা থেকে আগুন ছড়িয়ে তিনজন নিহত হন। আগুনের ঘটনা এলাকায় যে প্রায়ই ঘটে আর সম্পদ ও জীবনহানি ঘটে চলেছে, সে উদাহরণ তো আমাদের সামনেই।

দুখজনক হলেও সত্য, যখনই কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, তখনই আমরা কদিন সোরগোর করি। এরপর সব তথৈবচ। এবার যেন আগের মতো না ঘটে, সেটা সতেচন জনগোষ্ঠীর দাবি ও প্রত্যাশা। রাসায়নিক খারখানা ও গুদামগুলো নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরের পাশাপাশি পুরান ঢাকার রাস্তাগুলো পরিকল্পিতভাবে প্রশস্ত করা হোক। বাড়িগুলোকে করা হোক রাসায়নিক দ্রব্যের গুদামমুক্ত। দ্রুত এ কাজগুলো সম্পন্ন করার মধ্য দিয়ে পুরান ঢাকায় অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা ও জীবনহানি রোধ করা জরুরি। সচেতন মানুষ চায়, এক্ষেত্রে কথা ও কাজের মিল শতভাগ নিশ্চিত হবে।

প্রতিবেদক- বিশেষ প্রতিনিধি, পিএনএস

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন