আজ বিভীষিকার কালরাত্রি ২৫ মার্চ

  25-03-2019 08:56AM

পিএনএস ডেস্ক : বছর ঘুরে আবার এলো বিভীষিকার রাত্রি, ভয়াল ২৫ মার্চ। এ দিনটি পালিত হচ্ছে জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে। ১৯৭১ সালের এ দিনে অপারেশন সার্চ লাইটের নামে রাতের অন্ধকারে ঢাকা ও এর আশেপাশের এলাকায় হাজার হাজার নিরস্ত্র মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী। বাঙালিদের কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দিতে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে পরিকল্পিত অভিযানে এই রাতে হত্যা করা হয় অসংখ্য নিরপরাধ মানুষকে। গণহত্যার তান্ডবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজারবাগ পুলিশলাইনসহ গোটা ঢাকা পরিণত হয় মৃত্যুপুরীতে।

মধ্যরাতে ঢাকা পরিণত হয় লাশের শহরে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যমতে পাকিস্তানিদের হাতে ঢাকায় ৭ হাজারের বেশি লোক শহীদ হন, গ্রেফতার হয় আরো ৩ হাজার।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কৃষ্ণপক্ষের রাত । ব্যস্ত শহর ঢাকা প্রস্তুতি নিচ্ছে ঘুমের। ঘরে ঘরে অনেকে তখন ঘুমিয়েও পড়েছে। হঠাৎই যেন খুলে যায় নরকের সবক’টি দরজা। রাত সাড়ে ১১টায় ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের হলো হনন-উদ্যত নরঘাতক কাপুরুষ পাকিস্তান সেনাবাহিনী। ছড়িয়ে পড়ল শহরময়। ‘অপারেশন সার্চ লাইট’। এ নাম নিয়েই মৃত্যুক্ষুধা নিয়ে জলপাই রঙের ট্যাঙ্ক নেমে এলো। আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে গর্জে উঠল অত্যাধুনিক রাইফেল, মেশিন গান ও মর্টার। নিরীহ মানুষের আর্তনাদে ভারি হলো রাতের বাতাস। মানব ইতিহাসের পাতায় রচিত হলো কালিমালিপ্ত আরেকটি অধ্যায়। নিরস্ত্র, ঘুমন্ত মানুষকে বর্বরোচিতভাবে হত্যার ঘটনায় স্তম্ভিত হলো বিশ্ববিবেক।

আজ সেই ভয়াল ও বীভৎস কালরাত্রির স্মৃতিবাহী ২৫ মার্চ। মানব সভ্যতার ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত হত্যাযজ্ঞের দিন। বাঙালী জাতির ইতিহাসে এক নৃশংস, ভয়ঙ্কর ও বিভীষিকাময় কালরাত্রি। তবে এবার জাতির সামনে এই ভয়াল দিনটি এসেছে একটু ভিন্ন মাত্রা নিয়ে। দীর্ঘদিন পরে হলেও স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস এবং একুশে ফেব্রুয়ারির মতোই ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর ঘটানো গণহত্যাকা-ের দিনটি জাতীয়ভাবে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। স্বাধীনতার প্রায় ৪৭ বছর পর ২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে এ প্রস্তাব পাস হয়।

মাত্র এক রাতে এমন নির্বিচারে গণহত্যার ঘটনা বিশ্বে নজিরবিহীন। তাই ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ে সরকার থেকে জাতিসংঘে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন দেশের সমর্থন আদায়ে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ৯ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিকভাবে কেন গণহত্যা দিবস পালন করা উচিত, এর পেছনে সমস্ত তথ্য উপাত্ত, যুক্তি উপস্থাপনে ডকুমেন্টস তৈরি করে পাঠিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিভিন্ন দূতাবাসের মাধ্যমে এসব তথ্য-উপাত্ত বিভিন্ন দেশ বা সংশ্লিষ্টদের কাছে পৌঁছানো হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও দিবস উপলক্ষে প্রদত্ত বাণীতে বলেছেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের বিষয়ে সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন