সিরিয়ায় যাওয়া জঙ্গিদের নিয়ে বিমানবন্দরে সতর্কতা জারি

  26-03-2019 04:10PM

পিএনএস ডেস্ক : আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের হয়ে লড়াই করতে সিরিয়ায় যাওয়া বাংলাদেশি জঙ্গিরা দেশে ফিরতে পারেন—এ আশঙ্কায় বাংলাদেশের বিমানবন্দরগুলোতে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিইউ) কর্মকর্তারা এই তথ্য জানিয়েছেন।

পুলিশ সূত্র বলছে, সিরিয়ায় গত শনিবার আইএসের (ইসলামিক স্টেট) সর্বশেষ ঘাঁটির পতন হয়। সেখানে মার্কিন সমর্থিত বাহিনী সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সের (এসডিএফ) হাতে আটক আট শ বিদেশি জঙ্গি বন্দীর খবর পাওয়া যাচ্ছে। ওই বন্দীদের যাঁরা যে দেশের তাঁদের সে দেশে নিয়ে বিচারের আহ্বান জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তবে ঢাকায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, আইএসে যোগ দেওয়া বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে এনে বিচারের কোনো ইচ্ছে সরকারের​ নেই।

পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ থেকে যাঁরা সিরিয়ায় গেছেন, তাঁদের কারও কারও দেশে ফিরে আসার চেষ্টা রয়েছে। বিমানবন্দরগুলোতে আগেই তাঁদের ছবিসহ প্রয়োজনীয় সব তথ্য দেওয়া হয়েছে। তাঁরা যেন কোনোভাবেই গ্রেপ্তার এড়াতে না পারেন, সে বিষয়টি বিমানবন্দরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আবারও বিমানবন্দরকে সতর্ক করা হয়েছে।

মনিরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে আসতে হলে এই জঙ্গিদের পাসপোর্ট বা ট্রাভেল ডকুমেন্টস লাগবে। ধারণা করা হচ্ছে, আইএসে যুক্ত হওয়ার পরপর তাঁরা পাসপোর্ট খুইয়েছেন। সে ক্ষেত্রে তাঁরা এখন তুরস্ক দূতাবাসে যোগাযোগ করতে পারেন। তাই দূতাবাসকেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। তবে কারা কারা ফেরার চেষ্টা করছেন, তা নিশ্চিত করেননি মনিরুল ইসলাম।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী দুই ভাই ইব্রাহিম হাসান খান ও জুনায়েদ হাসান খান ফিরতে চান, সে বিষয়টি তারা নিশ্চিত হয়েছে। এই দুই ভাই যদিও ঢাকা হয়ে সিরিয়ায় গেছেন, তাঁদের পরিবার সৌদি আরবে থাকেন বহু বছর। বাংলাদেশ ছাড়ার আগে তাঁরা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসায় থাকতেন। একইভাবে সপরিবার সিরিয়ায় চলে যাওয়া চিকিৎসক রোকনউদ্দিনের ফেরার চেষ্টার খবর পাওয়া যাচ্ছে। ঢাকা শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক রোকনউদ্দিন, তাঁর স্ত্রী নাইমা আক্তার, মেয়ে রমিতা রোকন ও রেজওয়ানা রোকন ও জামাতা সাদ কায়েস ইসলামিক স্টেটে যোগ দিতে দেশ ছেড়েছিলেন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হিসাবে, বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী ৪০ জন আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত হতে দেশ ছেড়েছেন। তাঁদের অর্ধেকই মারা গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাকি ২০ জনের কে কোথায়, সে সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।

কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের একটি সূত্র জানায়, সরাসরি এ দেশ থেকে যাঁরা সিরিয়া গেছেন, তাঁদের বাইরে অন্য কোনো দেশ থেকেও বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীরা আইএসে যোগ দিয়ে থাকতে পারেন। এমন অন্তত একজনের বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া গত শনিবার সিরিয়ার বাঘুজে আইএসের সর্বশেষ যে ঘাঁটির পতন হলো, সেখানে বাংলাদেশের চার-পাঁচজন থাকার কথা। তাঁদের ভাগ্যে ঠিক কী ঘটেছে, এখনো তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

গত মাসে কুর্দিশ নিউজ এজেন্সি (আনহা) সিরিয়ায় এসডি​এফের হাতে বন্দীদের ওপর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া দন্তচিকিৎসক আরাফাত রহমান তুষারের সাক্ষাৎকার রয়েছে। তাতে তিনি বলেন, ‘খেলাফত আন্দোলন শেষ। যে খলিফার ডাকে তাঁরা দেশ ছেড়েছিলেন, তাঁরই খবর নেই।’ তবে সিরিয়ায় কতজন বাংলাদেশি জঙ্গি বন্দী আছে এবং কতজন জীবিত আছে সে বিষয়ে বাংলাদেশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের কাছে নিশ্চিত তথ্য নেই।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক এয়ার কমোডর (অব.) ইশফাক এলাহী চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ থেকে যাঁরা সিরিয়ায় গেছেন, তাঁরা তাঁদের রাষ্ট্রীয় পরিচয় অস্বীকার করেই আইএসের প্রতি আনুগত্য দেখিয়েছিলেন। তাঁদের ফিরিয়ে আনা কোনোভাবেই উচিত হবে না। কোনোভাবেই আর তাঁদের সংগঠিত হওয়ার কোনো সুযোগ দেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, সিরিয়ায় আইএসের পতনের ঘোষণা এসেছে ঠিকই; সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ কিছু ভিডিও এখনো রয়েছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে আইএসের কর্মী-সমর্থকেরা আবার ফিরে আসার হুমকি দিচ্ছেন।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন