নৌযান শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘট স্থগিত

  17-04-2019 02:02AM

পিএনএস ডেস্ক : সারাদিনের অচলাবস্থা শেষে স্বস্তি ফিরেছে নৌপথে। মঙ্গলবার রাতে কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে নৌযান শ্রমিকরা তাদের ধর্মঘট স্থগিত করেন।

শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ানের সঙ্গে নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের নেতাদের বৈঠকের পর এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। বুধবার স্বাভাবিকভাবে নৌযান চলাচল করবে।

এর আগে নৌযান শ্রমিকদের ডাকা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে দেশের নৌপথ অচল হয়ে পড়ে। গত সোমবার মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া এ ধর্মঘটের কারণে যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ থাকে। এতে যাত্রী, ব্যবসায়ীসহ সংশ্নিষ্টদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়।

সব ধরনের নৌযান ও নৌপথে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও ডাকাতি বন্ধ এবং নৌযান শ্রমিকদের জন্য ২০১৬ সালে সরকার ঘোষিত বেতন স্কেলের পূর্ণ বাস্তবায়নসহ ১১ দফা দাবিতে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন সোমবার রাত ১২টা ১ মিনিট অর্থাৎ, মঙ্গলবার প্রথম প্রহর থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ডাক দেয়।

দেশের সব রুটের অভ্যন্তরীণ ও সমুদ্রগামী যাত্রী ও পণ্যবাহী নৌযান এ কর্মসূচির আওতায় ছিল। এ ছাড়া নিয়োগপত্র ও খোরাকি ভাতা প্রদানসহ ১৩ দফা দাবিতে একই সময় ধর্মঘটের ডাক দেয় বাংলাদেশ জাহাজি শ্রমিক ফেডারেশনের অধীন বাংলাদেশ লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়নের একাংশ।

গত সোমবার শ্রম পরিদপ্তর কার্যালয়ে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের সঙ্গে মালিক-শ্রমিক নেতাদের ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হয়। সেখানে নৌযান শ্রমিক নেতাদের একাংশ ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছিল। তবে নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা ওই বৈঠক বর্জন করেছিলেন। তারা ধর্মঘট অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন।

এ অবস্থায় সোমবার মধ্যরাত থেকে রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালসহ সব নৌবন্দরে যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী নৌযান এবং সমুদ্রবন্দরগুলোতে পণ্যবাহী নৌযান ও লাইটার জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে 'লঞ্চ মালিক সমিতি' যাত্রীবাহী লঞ্চ চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিলে মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে স্বল্পসংখ্যক লঞ্চ সদরঘাটসহ বিভিন্ন লঞ্চ টার্মিনালে আসা-যাওয়া করে। সমিতির সাবেক সহসভাপতি গোলাম কিবরিয়া টিপু এমপির উপস্থিতিতে 'এমভি টিপু-৭' লঞ্চ দুপুরে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের পন্টুনে ভেড়ে। বিকেলে লঞ্চটি সদরঘাট থেকে যাত্রী নিয়ে ছেড়েও যায়।

মঙ্গলবার সরেজমিন ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ঘুরে নৌযান ধর্মঘটের কারণে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগের চিত্র মিলেছে। দিনভর চাঁদপুর, বরগুনা, হাতিয়া, বেতুয়া, বোরহানউদ্দিন, বরিশাল, ঝালকাঠিসহ প্রায় সব রুটের যাত্রীবাহী লঞ্চগুলোকে পন্টুনে অচল অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে। নৌযান শ্রমিক-কর্মচারীদেরও অলস সময় কাটাতে দেখা যায়।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) পরিবহন পরিদর্শক দিনেশ কুমার সাহা জানান, সকালে সদরঘাটে অনেক যাত্রী এসেছিলেন। কিন্তু লঞ্চ না চলায় তারা ফিরে যান। তবে দুপুরে যাত্রীবাহী লঞ্চ মালিকরা তাদের নৌযান চালানোর সিদ্ধান্ত জানালে সদরঘাট পন্টুনে ভিড়তে শুরু করে দক্ষিণাঞ্চল থেকে ছেড়ে আসা কয়েকটি লঞ্চ।

নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের ১১ দফা দাবির মধ্যে আরও রয়েছে, ভারতগামী শ্রমিকদের ল্যান্ডিং পাস দেওয়া ও হয়রানি বন্ধ করা; নদীর নাব্য রক্ষা করা; নদীতে প্রয়োজনীয় মার্কা, বয়া ও বাতি স্থাপন করা; সব শ্রমিকদের ফ্রি খাবারের ব্যবস্থা অথবা খাদ্যভাতা দেওয়া; কর্মস্থল কিংবা দুর্ঘটনায় মৃত্যুতে শ্রমিকদের ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া; প্রত্যেক নৌশ্রমিককে মালিকের কাছ থেকে নিয়োগপত্র দেওয়া এবং মাস্টার পরীক্ষার সনদ দেওয়াসহ তার নবায়নে অনিয়ম বন্ধ করা।

পিএনএস/মো: শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন