কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়া জরুরি

  19-05-2019 03:01PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : ক্ষোভে-দুঃখে কৃষক পাকা ধান ক্ষেতে আগুন দিচ্ছে! রাত-দিন অমানসিক হাড়ভাঙ্গা কষ্ট আর পরিশ্রমের পর আবাদী ধানের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে তারা হতাশ ও ক্ষুব্ধ। মনের দুঃখে আগুন দিচ্ছে পরম কষ্টে আবাদ করা ধানে। ধান ছিটছে রাজপথে! চোখের পানিতে বুক ভিজছে কৃষক সাধারণের।

মধ্যস্থতাকারী সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে ধান না কিনে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকেই ধান ক্রয় করতে হবে। ধানের ন্যায্য মূল্য থেকে কৃষকদের বঞ্চিত করার প্রতিবাদে শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জেএসডি আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে জেএসডি সভাপতি এসব কথা বলেন। এ কথায় যুক্তি আছে বৈকি। সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনা উচিত।

কৃষককে উৎপাদন খরচ থেকে ৩০০ টাকা কমে প্রতি মণ ধান বিক্রি করতে হচ্ছে। পুঁজিপতিরা ব্যাপক ঋণ মওকুফ পাচ্ছে, হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হচ্ছে। মেঘা প্রকল্পের নামে অপচয় হচ্ছে। অথচ ১৭ কোটি মানুষের খাদ্যের যোগানদাতা কৃষকদের ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে না। জেএসডির সভাপতির কথাগুলো সময়ের আলোকে শুধু নয়, সব সময়ের জন্য বাস্তব ও সত্য।

কৃষক দেশের প্রাণ। দেশের মানুষের মুখে তারাই খাবার তুলে দেন। দেশের মানুষকে খাবার জোগান দিতে তাদের বিকল্প নেই। অথচ তাদের নিয়ে ভাবা হচ্ছে না। প্রচণ্ড রোদ, বিরামহীন বৃষ্টি ও বজ্রপাতকে উপেক্ষা করে তারা ফসল ফলান। ধার-দেনা করে অথবা লোন নিয়ে তারা আবাদ করে থাকেন। সে ফসলের ন্যায্য মুল্য না পেলে কষ্ট লাগাই স্বাভাবিক।

খরচের চেয়ে দুই-তিনশত টাকা কম মূল্যে ধান বিক্রির ফলে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ইতিমধ্যে প্রতিবাদ উঠেছে। প্রেস ক্লাবের সামনে ধান ছিটান ক্ষুব্ধ কৃষকরা। টাঙ্গাইলে ক্ষেত্রে ধানে আগুন দেন এক কৃষক! রংপুরে রাস্তায় ধান ফেলে প্রতিবাদ জানান কৃষকরা। কৃষকের সন্তানদের ব্যানারেও ধানের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়।

কৃষিমন্ত্রী বলেছেন, 'সব কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা সম্ভব নয়। ধান রাখার এত গোডাউনও দেশে নেই'। এক মণ পরিমাণ ধান কাটতে কৃষকের যে খরচ হয়, মজুরি দিতে হয় এর চেয়ে বেশি। আবার মজুর সংকটও প্রকট। যে কারণে কৃষকরা ধান নিয়ে বিপাকে। অনেকে ভবিষ্যতে ধানের আবাদ করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নেন। অনেকে ধানের বদলে মাছ চাষের দিকে ঝুঁকছেন।

ন্যায্য মূল্যের ধান সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে কেনা উচিত।আর প্রণোদনা হিসেবে কৃষকদের সার-বীজ ও কীটনাশক বিনামূল্যে অথবা ভর্তুকি হিসেবে দেওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি ৬৮ হাজার গ্রামে আনুপাতিক হারে কৃষকের সংখ্যা নির্ণয় করে ধান কাটার মেশিন বিনামূল্যে সরবরাহ করার বিষয়টি গুরুত্ব্ দিয়ে ভাবা জরুরি।এতে মজুরের পেছনে বাড়তি খরচ কমে যাবে।

আমরা কমদামে চাল কিনতে চাই আবার কৃষক ধানের ন্যায্য দাম না পেলে কষ্ট পাই। কমদামে চাল কিনতে হলে কৃষককে ভর্তুকি দিতে হবে। কৃষক যেন কোনোমতেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। শুধু খেয়ালই নয়, অগ্রাধিকার দিতে হবে কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতে। উদয়-অস্ত বিরামহীন কষ্ট করে যারা মানুষের মুখে খাবার তুলে দেন, তাদের সচল রাখতে দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ সময়ের দাবি।

প্রতিবেদক : বিশেষ প্রতিনিধি- পিএনএস

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন