বন্যাকবলিত এলাকায় খাবারের জন্য হাহাকার, শিশুদের কষ্ট চরমে

  17-07-2019 03:50PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : টানা বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উত্তরাঞ্চলে ১৫টি জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা ইতিমধ্যেই পানির নিচে চলে গেছে। নতুন করে আরো কয়েকটি জেলায় বন্যা ছড়িয়ে পড়ছে। উত্তরাঞ্চলের পাঁচটি জেলায় আগামী কয়েকদিনে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হবে বলে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র নিশ্চিত করেছে।

এদিকে বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় আট দিন পর বান্দরবানের সঙ্গে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ চালু হয়েছে। তবে বানের পানিতে রেললাইন ডুবে যাওয়ায় ময়মনসিংহের সঙ্গে রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। দেশের বড় নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় আরো নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছে অভিজ্ঞ মহল।

বন্যাদুর্গত এলাকায় খাবারের জন্য হাহাকার বিরাজ করছে। খাবারের অভাব তীব্র আকার ধারণ করেছে, তা স্পষ্ট। সরকারি ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। সপ্তাহের বেশি সময় পার হলেও অনেকেই কোনোর প্রকার ত্রাণ পায়নি বলে অভিযোগ করছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে কোনো ধরনের সহযোগিতা না পৌঁছায় তারা পরিবার নিয়ে দিনের পর দিন না খেয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলের নিম্ন আয়ের মানুষ খাদ্যাভাবে চরম বিপাকে পড়েছে। একই অবস্থা দিনমজুরদের। বন্যার কারণে কাজ না থাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে তারা নিদারুণ কষ্টে আছে। সামর্থবানরা বন্যায় বিপাকে পড়ায় তাদের কাছ থেকেও কাঙ্ক্ষিত সহযোগিতা মিলছে না। ফলে বন্যার পানি না যাওয়া পর্যন্ত এ মানুষগুলোর দুর্ভোগ সহজে কাটবে বলে মনে হচ্ছে না।

চরম প্রতিকূল অবস্থায় মড়ার ওপর খাড়ার ঘায়ের ভূমিকায় স্থানীয় এনজিওর কর্মীরা অবতীর্ণ হয়েছে। ঋণের কিস্তি আদায়ে তারা যেন মরিয়া। যেখানে চুলায় হাঁড়ি বসিয়ে পরিবারের লোকজনের জন্য কচু-ঘেচু অথবা শাপলা রান্না করে খাওয়াই দুষ্কর, সেখানে কিস্তির টাকার জন্য হাঁড়ি-পাতিল নিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে বলে জানা গেছে। নিম্ন আয়ের মানুষ এসব নীরবে হজম করছে।

বানভাসি মানুষকে একটু স্বস্তি দিতে সমাজের সামর্থবানদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ানো সময়ের দাবি। অনেকেই ভিটামিটি ছেড়ে যাননি। মাছা তৈরি করে, কেউ কেউ ঘরের চালে উঠে, কেউ বড় নৌকায় পরিবার নিয়ে থাকছেন। অত্যন্ত ও দুর্গম এলাকার এসব মানুষ সহযোগিতা থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত। এ মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানো জরুরি।

সরকারি ত্রাণ ও বিত্তবানদের সহযোগিতাগুলো সব সময় প্রাধান্য পায় সদর, বড় সড়ক, বেড়ি বাঁধ ও আশ্রয় কেন্দ্রগুলোয়। এর বাইরের লোকজন বরাবরই সব ধরনের সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত থাকে। প্রশাসন থেকে শুরু করে হালের কথিত জনপ্রতিনিধিরা তাদের ব্যাপারে সচেষ্ট হলে নিশ্চয় তারা নিরন্ন থাকত না। তীব্র্র খাদ্য সংকটে তারা বিলের শাপলা তুলে সিদ্ধ করে খাচ্ছে।

দেশের নদ-নদীগুলোর পানি এখনো বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কোথাও পানি কমলেও বেশির ভাগ এলাকার পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা বিরাজমান। আবার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, বন্যাকবলিত এসব মানুষের পাশে আগের মতো সম্মিলিতভাবে দাঁড়ানোর দৃশ্য চোখে পড়ছে না। সময়ক্ষেপণ না করে যার-যার অবস্থান থেকে বন্যার্ত মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানো জরুরি। এক মুটো খাবারের জন্য শিশুদের আকুতি পাষাণ হৃদয়কেও গলিয়ে দিচ্ছে। ঘটনাস্থলে না গেলে সহজে যা বোঝা যাবে না।

প্রতিবেদক : বিশেষ প্রতিনিধি- পিএনএস

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন