সরকারি ত্রাণ অপ্রতুল, তীব্র খাবার সংকটে বানভাসি মানুষ

  18-07-2019 07:44PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : দেশের বড় ২৫টি নদীর পানির বিপদসীমার অনেক উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনার পানির গত ১০০ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করে বিপদসীমার ১৯৫ সে. মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নতুন করে টাঙ্গাইল, নওগাঁ ও ফরিদপুর বন্যাকবলিত হয়েছে। টাঙ্গাইলে বন্যার পানিতে ডুবে পাঁচ শিশুর মারা যাওয়ার খবর ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় এসেছে।

বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উত্তরাঞ্চলে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। জামালপুরে রেললাইন ডুবে যাওয়ায় রেল চলাচল বন্ধ রয়েছে। এর আগে ময়মনসিংহের সঙ্গে রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় রেললাইন ডুবে যাওয়ায়। দেশের নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ওই রেললাইনগুলো ডুবে যায়, ফলে এসব এলাকায় রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকায় যাত্রী সাধারণের ভোগান্তি বেড়েছে।

নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পাশাপাশি অনেক বেড়ি বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় গাইবান্ধা, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ ও জামালপুর জনদুর্ভোগ বেড়ে গেছে। এসব এলাকার মানুষ বাঁধ রক্ষার জন্য আকুল আবেদন জানাচ্ছে। তারা এ-ও বলছে, ত্রাণ চাই না; স্থায়ীভাবে বাঁধ রক্ষার উদ্যোগ চাই। বাঁধগুলোর নতুন নতুন এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় তাদের এ আকুতি।

বন্যায় আক্রান্তরা ঠিক মতো ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ ভূরি ভূরি। বন্যা ঝেঁকে বসার এক সপ্তাহ পার হলেও কোনো প্রকার ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ করছেন দুর্গত অঞ্চলের মানুষ। সরকারের বরাদ্দ করা ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য বলে ভুক্তভুগীরা জানান। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ১০ শতাংশের ভাগ্যেও এসব ত্রাণ জুটছে না।

বন্যা আক্রান্ত এলাকাগুলোয় আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হলেও অনেকেই এর ধারে-কাছেও যাচ্ছে না। তারা কষ্ট উঁচু মাছা তৈরি করে বাড়িতেই থাকছে। অনেকে আবার যৌন হয়রানির ভয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে যাচ্ছে না। গবাদিপশু ও ঘরের মালামাল তছরুপ হওয়ার ভয়ে তারা ঘরবাড়ি ছাড়তে নারাজ। আবার অনেকেই বলছেন, গিয়ে কী লাভ; কোনো সহযোগিতা তো পাচ্ছি না। শুধু নামই লিখে নেয়, কেউ তো কোনো কিছু দিচ্ছে না।

বানভাসিদের অভিযোগ, চুলা জ্বালানোর মতো অবস্থা যেখানে নেই, সেখানে আজ পর্যন্ত আমাদের কাছে কোনোরকম ত্রাণ পৌঁছেনি। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের উপজেলার শমশেরনগর, পতনউষার, মুন্সীবাজার ও রহিমপুর ইউনিয়নের ৩৫টি গ্রামের ৭০ পরিবার পানিবন্দী ছিল। চার দিনেও সরকারি কোনো ধরনের ত্রাণ না আসায় হতদরিদ্র পরিবার সদস্যরা মানবেতর জীবন যাপন করেন। মূলত ত্রাণের এমন চিত্রই সারা দেশের।

বন্যাদুর্গত এলাকায় খাবার সংকট যে তীব্র আকার ধারণ করেছে, তা সহজেই অনুমান করা যায়। কোনো ত্রাণ পাওয়া যাবে বা যাচ্ছে- এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষুধার্ত মানুষগুলো বানের পানির মতোই ছুটে যায়। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হতাশ হয়ে ফিরে আসতে হয়। কেউ কেউ ত্রাণের নামে নামকাওয়াস্তে দু-চারজনের হাতে কিছু প্যাকেট তুলে দিয়ে ছুবি তুলে চলে যায়। বন্যাদুর্গতদের সঙ্গে এমন তামাশাও চলছে।

সুপেয় বিশুদ্ধ পানির অভাবে বন্যাকবলিত এলাকায় ডায়রিয়া দেখা দিয়েছে। ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছে অভিজ্ঞ মহল। চাপকলগুলো ডুবে যাওয়ায় নিরুপায় হয়ে মানুষ বন্যার পানি পান করে বিপাকে পড়েছে। মানবিক দায়িত্ব মনে করে ত্রাণ নিয়ে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানো দরকার। যাদের যা আছে, প্রয়োজনে সম্মিলিতভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করে অসহায় মানুষগুলো পাশে যাওয়া আমার-আপনার অবশ্য কর্তব্য।


প্রতিবেদক : বিশেষ প্রতিনিধি- পিএনএস

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন