ক্যাসিনোর মতোই বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযান জরুরি

  22-09-2019 04:43PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : আগে সিন্ডিকেট বাজারে কারসাজি করত রোজাকে সামনে রেখে। হালে সিন্ডিকেট নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যকে টার্গেট করে তাদের আরাধ্য কাজ পুরোদমে চালিয়ে যাচ্ছে।নজরদারি ও জবাবদিহিতার্ অভাবে তারা ক্রেতা সাধারণের পকেট কেটে পার পেয়ে যাচ্ছে। আদা, পিঁয়াজ ও রসুন নিয়ে তারা আখেরি কামাই করেছে। এদের বিরুদ্ধে র্যা বের সাঁড়াশি অভিযান অপরিহার্য।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে দেশে বছরে ২২ লাখ টন পিঁয়াজের চাহিদা। গত মৌসুমে দেশে পিঁয়াজ উৎপাদন হয় ১৯ লাখ ৩০ হাজার টন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের হিসাবে গত জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সাত পর্যন্ত আমদানি হয়েছে ৪ লাখ ৯২ হাজার টন পিঁয়াজ। গত মৌসুম থেকে এখন পর্যন্ত পেঁয়াজের জোগান এসেছে ২৪ লাখ ২২ হাজার টন। এ পরিমাণ পেঁয়াজ আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত খাওয়ার পরও ২ লাখ টন উদ্বৃত্ত থাকার কথা।অথচ…

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ীদের আড়ৎ, ঢাকার শ্যামবাজারের ব্যবসায়ীদের আড়তে চলতি বছরে কখনো একটু সময়ের জন্য আদা, পিঁয়াজ ও রসুনের সামান্যতম ঘাটতি চোখে পড়েনি এসব এলাকায় বসবাসকারীদের। প্রতিদিন গভীর রাত থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত এ পণ্যগুলো বহনকারী ট্রাকের জন্য পথচারীরা হাঁটতেও পারেন না। এ সময় এসব গলি দিয়ে রিকশাসহ অন্য যানবাহন চলাচল করতে পারে না। এটা নিত্যদিনের চিত্র।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ প্রতিটি বাজারে এমনকি মহল্লার মুদি দোকানগুলোও আদা, পিঁয়াজ ও রসুনের বস্তায় ঠাসা। অথচ হঠাৎই রমজানের মাঝখানে প্রথমে রসুন ৬০ টাকা থেকে ১২০ টাকা, আদা রোজার পর ৬০ থেকে ৮০ টাকার স্থলে ১০০ টাকা, বর্তমানে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা, পিঁয়াজ ৩০-৩৫ থেকে ৭৫ টাকায় নিয়ে যায় সিন্ডিকেট।

বলা হয় ভারতে দাম বেড়েছে। ভারতের দাম বাড়া সে পিঁয়াজ না আসা পর্যন্ত আমাদের দেশে দাম বাড়বে কেন? আর আমদানি করতে হবেই বা কেন? দেশে তো পিঁয়াজের ঘাটতি নেই।তার পরও কেন এই আমদানি-আমদানি খেলা। কেন টিসিবির মাধ্যমে ৪৫ টাকায় ২ কেজি করে বিক্রি!সরষের ভূত না তাড়িয়ে বরং এর মধ্য দিয়ে সিন্ডিকেটকে আস্কারা দেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা।

কোরবানীর ঈদের সময় এবং এর পর বাজারে যেসব আদা দেখা গেছে, এর বেশির ভাগই চামড়া পচা ছিল।কৃত্তিম সংকট সৃষ্টি করে আদার দাম বাড়ানোর জন্য এগুলো বাজারে না দিয়ে বস্তাবন্দী অবস্থায় দীর্ঘদিন গুদামজাত করে রাখার কারণে পচন ধরে।বাছবিচার না করে এগুলো কিনতে দেখা যায় ক্রেতাদের। অথচ বাজারে এসব পণ্যের মোটেও কমতি নেই, নেই অভাব-ঘাটতি।

কথা হলো, বাজারে যে দ্রব্যের মোটেও ঘাটতি নেই, নানা অজুহাতে সেগুলোর দাম বাড়ানোর কারিগরদের জবাবদিহির আওতায় আনতে বাধা কোথায়? সুযোগ বুঝে সময়ে সময়ে সাধারণ মানুষের পকেট থেকে যারা পণ্যের মাধ্যমে অধিক অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে, তারা আর কত পার পেয়ে যাবে? এটা যে প্রকাশ্যে ডাকাতি! ক্যাসিনোর জুয়ায় যায় কিছুসংখ্যক নষ্টভ্রষ্ট। আর সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে নিত্য অতিরিক্ত অর্থ সাবাড় হচ্ছে দেশের আপামর জনতার।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের হিসাবকে যারা বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখাচ্ছে, ওরা ডাকাতের সরদার। সিন্ডিকেটের হোঁতা।অভিজ্ঞ মহলের মতে, দ্রব্যমূল্যকে সহনীয় ও জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে ওদের ক্রসফায়ারে দেওয়া অধিক যুক্তিযুক্ত। অসংঘটিত ক্রেতা সাধারণকে জিম্মি করে যারা আদা, পিঁয়াজ ও রসুনের বাজার অস্থিতিশীল করছে, ক্যাসিনোর মতোই তাদের বিরুদ্ধে র্যা বের সাঁড়াসি অভিযান সময়ের দাবি।

প্রতিবেদক : বিশেষ প্রতিনিধি- পিএনএস

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন