সরকার ও প্রশাসন সিন্ডিকেটের সঙ্গে চোর-পুলিশ খেলছে

  14-10-2019 04:46PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : সব উদ্যোগকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বহালতবিয়তে পিঁয়াজ সিন্ডিকেট।তারা সরকার ও প্রশাসনকে থোড়াই কেয়ার করছে। খোলাসা করে বললে বলতে হয়, ওরা পাত্তাই দিচ্ছে না। আর পাত্তা না দেওয়ার কারণ, নিশ্চয় ওদের শিকড় অনেক গভীরে। বাণিজ্যমন্ত্রী যতই বলুন না কেন, ব্যবস্থা নেবেন; আদতে ওদের টিকিটিও স্পর্শ করা যাবে না।চলমান পরিবেশ-পরিস্থিতি সেটাই শতভাগ প্রমাণ করছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সোমবার দুপুরে রংপুরের সেন্ট্রাল রোডের নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘বিকল্প পথে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। তার পরও কিছুসংখ্যক অসাধু ব্যবসায়ী সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।’ দেশে এখন পর্যাপ্ত পরিমাণ পেয়াজ মজুদ আছে দাবি করে টিপু মুনশি বলেন, ‘যারা অবৈধভাবে পেঁয়াজ মজুদ করে রেখেছে। সেই সব মজুদকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আমরা শক্ত অবস্থান নিচ্ছি। মাঠে ১০টি টিম কাজ করছে। এখন পেঁয়াজের দাম কমেছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘ঢাকায় ৪৫টি স্থানে টিসিবি ৪৫ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রয় করছে। রংপুরেও টিসিবির মাধ্যমে এ ব্যবস্থা করা হবে। যাতে করে কোনো মানুষ পেঁয়াজ নিয়ে অসুবিধায় না পড়ে।’ বর্তমানে রংপুরের কাঁচা বাজারগুলোয় প্রতি কেজি পেঁয়াজ খুচরা মূল্য এখনো ৮০ থেকে ১০০ দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে পাইকারি বাজারে প্রতি পাঁচ কেজি পেঁয়াজের মূল্য নেওয়া হচ্ছে ৩৫০ টাকা।

বাণিজ্যমন্ত্রী বরেছেন, ‘আমরা শক্ত অবস্থান নিচ্ছি।’ বাণিজ্যমন্ত্রীর এ বক্তব্যকে ফাঁকা আওয়াজ মনে করছে, ভোক্তা সাধারণ। আর তার এ কথার মোটেই গুরুত্ত্ব দিচ্ছে না, অসাধু ব্যবসায়ীসহ সিন্ডিকেট।সিন্ডিকেট এতটাই বেপোয়ারা যে, বাজার নিয়ন্ত্রণে ৪৫টি স্থানে টিসিবি ৪৫ টাকা দরে পিঁয়াজ বিক্রি করেও তাদের সঙ্গে পেরে উঠছে না। এ লজ্জা কোথায় রাখি।

পিঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে জনৈক জনপ্রতিনিধি কিছুদিন আগে রাজধানীর পলাশীর কাঁচাবাজারে অভিযান চালান। মানুষ এটাকে ঠাট্টা করে বলাবলি করছিল ‘পাগলের মাথা খারাপ’ বলে। অভিজ্ঞ মহল মনে করে, মুরোদ থাকলে তিনি শ্যামবাজারের পাইকারি মার্কেটের আড়তে যেতেন। এভাবে জনগণকে বোকা বানিয়ে দায়িত্বশীলরা আখেরি কামাই করে নিচ্ছেন না তো? অথচ সত্যিকার অর্থে আন্তরিক হলে একদিনেই বাজার নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।

অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকার ও প্রশাসন সিন্ডিকেটের সঙ্গে চোর-পুলিশ খেলছে।সরকার ও প্রশাসন দুটির একটি চাইলে বা আন্তরিক হলে, হেন কাজ নেই; যা পারে না। জনগণের প্রতি দায় ও আন্তরিকতার অভাবে সিন্ডিকেট বহালতবিয়তে আর ভোক্তা সাধারণের পকেট কাটা যাচ্ছে। সিন্ডিকেট ধরা না পড়ায় এর কুফল বা ভাইরাস সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে। যার খেসারত দিচ্ছে সাধারণ মানুষ।

বড় কষ্ট লাগছে এটা ভেবে যে, পিঁয়াজ ১২০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে বাজারে।উৎপাদনকারী কৃষক তো কেজিতে ২০ টাকাও পাননি। অথচ মজুদদাররা সিন্ডিকেট করে লালে লাল।সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও সঠিক নজরদারির অভাবে এভাবে মধ্যসত্বভোগীরা আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে।আর এর কুফল ভোগ করে আম জনতা। এভাবে আর কত! মৌসুমে ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা কৃষক এখন পিঁয়াজ কিনছেন কয়েকগুণ বেশি দামে।

পিঁয়াজের উৎপাদন এবং গত বছরের মজুদ মিলিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবমতে, দেশে পিঁয়াজের ঘাটতি মোটেও ছিল না। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ী ও সিন্ডিকেট দায়িত্বশীলদের চোখে ধুলা দিয়ে সব মেছাকার করে দিয়ে ইচ্ছেমতো আখেরি কামাই সারে।আমদানির পরও বাজারে এর প্রভাব যে নেই, সে বাস্তবতা বিরাজমান।অথচ বাজারে কখনো, কোথাও বিন্দুমাত্র পিঁয়াজের ঘাটতি ছিল না।চোরদের না ধরে আমদানি শুরু করে দিয়ে এবং টিসিবিকে দিয়ে বাজারে ন্যায্য মূ্ল্যে পিঁয়াজ ছেড়ে দিয়ে সিন্ডিকেট বৈধতা দেওয়া হয়। বনেদি ব্যবসায়ীরা এটা নাবাকসুলভ আচরণ মনে করছেন।

চোখ থাকতেও কানারা ভূমিকায় দায়িত্ব পালন করলে যা হয়, বর্তমান বাজার সিন্ডিকেটের ক্ষেত্রে সেটাই শতভাগ সত্য। অন্ধরা যেমন কিছুই দেখতে পায় না, দায়িত্বশীল মহল ও টিম তেমনি কিছু খুঁজে পাচ্ছে না।অভিজ্ঞ মহলের মতে, চোরে চোরে মাসতুতু ভাই হলে নাকি এমনটাই হয়।এভাবে আসকারা পেয়ে পেয়ে সব ক্ষেত্রে এবং সর্বত্র সিন্ডিকেট, চোরবাটপার, টাউট, দুর্বৃত্ত ও তস্করে ভরে গেছে। এসবের দমনে আন্তরিক হলে, প্রথমে বাজার সিন্ডিকেটকে দৃষ্টান্তমূলক কঠিন শাস্তির আওতায় আনা সময়ের দাবি।

প্রতিবেদক : বিশেষ প্রতিনিধি- পিএনএস

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন