গণমাধ্যমজুড়ে শুভঙ্করের ফাঁকি- ৩

  04-11-2019 07:13PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার অভাবে দীর্ঘদিন যাবৎ গণমাধ্যমের সংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধা।সাংবাদিকদের জন্য পাঁচ বছর পর পর একটি করে ওয়েজ বোর্ড গঠনের নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। আন্দোলন করে যা আদায় করতে হয়। কিন্তু সে ওয়েজ বোর্ডেও শুভঙ্করের ফাঁকি পরিলক্ষিত হয়। দিন যত যাচ্ছে একেকটি ওয়েজ বোর্ডে সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধা ততই কর্তন করা হচ্ছে!

আগে সংবাদপত্র বের করা কঠিন ছিল।কারণ নিয়ম মেনে সব করতে হতো। এ নিয়ম যেমন সহজ হয়েছে তেমনি আইন না মানার সংস্কৃতিও সহজ হয়ে গেছে।বেতন-ভাতা দূরে থাক, সাংবাদিক-কর্মচারী ছাড়াই দেশের অধিকাংশ সংবাদপত্র বের হচ্ছে।ওয়েজ বোর্ডের বালাই যেখানে নেই।এগুলোর বেশির ভাগ মালিক একসময় সংবাদপত্রের পিয়ন, বিজ্ঞাপন প্রতিনিধি ও ফেস্টার ছিল।

রাজধানীর ফকিরাপুল থেকে শুরু করে মতিঝিল, মালিবাগ, মগবাজার, তেজগাঁও, টিকাটুলি, রামপুরা, কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর, আরামবাগ এলাকার অলিগলিতে একেকটি বিল্ডিংয়ে কয়েকটি সংবাদপপের অফিস। এমনকি একটি সাইনবোর্ডে একাধিক পত্রিকার নাম দেখা যায়। এসব এলাকার একটি কম্পিটার থেকে কয়েকটি পত্রিকার জন্য ট্রেসিং বের করা হয়। একই সংবাদের কেবল হেডিং পরিবর্তন করে এগুলো ছাপানো হয়।

এসব সংবাদপত্রের সবই করেন একজন কম্পিউটার অপারেটর। আর এসব সংবাদপত্র ৫০ থেকে ২০০ কফি বের হয়।যেগুলো ডিএফপিহ বিভিন্ন অফিসে জমা দেওয়া হয়। বিজ্ঞাপন থাকলে এবং পরমায়েশী সংবাদ থাকলে কপির সংখ্যা বাড়ে।তাও ৫০০ বেশি নয়। এসব এলাকার একেকটি প্রেসে ডজনখানেক পত্রিকা ছাপা হয়। এসব সংবাদপত্রকে বলা হয় আন্ডারগ্রান্ড পত্রিকা।

রাজধানী ঢাকার সচিবালয়ের আশপাশ গলি এবং রিপোর্টার্স ইউনিটির চারদিকে এসব সংবাদপত্র দেয়ালে শোভা পায়। সচিবালয়েও কিছুটা চোখে পড়ে। এগুলো সরকারি ছুটির দিন খুব একটা বের করা হয় না।এগুলোকে অনেকে সংবাদপত্র নামের আবর্জনা বলে আত্মতৃপ্তি পায়।এগুলো আবার কোড়পত্রও পায়। আর এটাও নাকি অবৈধ উপায়ে মালকড়ি খরচ করে।

আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকাগুলো আর যা-ই করুক না কেন, তারা কর্মরতদের ঠকায় না।কারণ তাদের কর্মচারী বলতে একজন পিয়ন কাম কম্পিউটার অপারেটর।ফলে এই একজনকে ঠকানোর প্রশ্নই ওঠে না।যত সমস্যা ওয়েজ বোর্ডের নামে সংবাদকর্মীর সংখ্যা এবং পত্রিকার প্রচার সংখ্যা বাড়িয়ে দেখিয়ে সহকর্মীদের ঠকানোর আয়োজন ভালোই চলছে।এক্ষেত্রে মালিকদের অনেকেই গার্মেন্টকে ছাড়িয়ে গেছে।

সংবাদপত্র তথা গণমাধ্যমকে সমাজের দর্পণ বলা হয়। তারা মানুষের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনাসহ সমাজের নানা অসঙ্গিতে নিখুঁভাবে তুলে ধরে তা সমাধানে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিতে আনার চেষ্টা করে।অথচ তারা কতটা অবহেলার শিকার, তার কিঞ্চিতমাত্র সযত্নে প্রতিবেদনগুলোয় তুলে ধরার চেষ্টা করছি মাত্র্। যাদের দায় এসব দেখার, দীর্ঘদিন যাবৎ তাদের জেগে জেগে ঘুমানের কারণে এ খাতটি শিল্প না হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ খাতে পরিণত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে উপনীত।
চলবে-

প্রতিবেদক : বিশেষ প্রতিনিধি- পিএনএস

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন