পিএনএস ডেস্ক : জীবন বাঁচানোর আকুতি জানিয়ে ভিডিও ভাইরাল হওয়া সেই সুমী আক্তার সৌদি আরব থেকে অবশেষে ঢাকায় ফিরেছেন। শুক্রবার সকাল সোয়া ৭টায় এয়ার এরাবিয়ার একটি ফ্লাইটে সুমি দেশে আসেন। এছাড়া বৃহস্পতিবার রাত ১১.২০ মিনিটে সৌদি এয়ারলাইন্স (এসভি-৮০৪) বিমান যোগে সৌদি থেকে দেশে ফিরেছেন আরও ৮৬ বাংলাদেশি।
সুমি শুক্রবার সকালে দেশে ফিরলেও তাকে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে দেয়া হয়নি। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের পরিচালক জহিরুল ইসলাম বিমানবন্দরে উপস্থিত থেকে তাকে গ্রহণ করেন। এসময় প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপস্থিত থেকে বিমানবন্দরের আনুষ্ঠিকতা সম্পাদনে সহযোহিতা করেন।
বিমানবনন্দরে গণমাধ্যমের অনেক সাংবাদিক থাকলেও সুমিকে স্বাভাবিকভাবে বের না করে কঠোর গোপনীয়তা ও নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় গাড়িতে করে পঞ্চগড়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন কল্যাণ বোর্ডের একটি টিম। এমনকি সুমির স্বামী নুরুল ইসলাম বিমানবন্দরে এলেও তার সঙ্গেও দেখা করতে দেয়া হয়নি। সুমির বাড়ি পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার বৈরাতি সেনপাড়া গ্রামে।
বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সুমিকে বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহামুদ হাসান এর মাধ্যমে তার বাবা রফিকুল ইসলাম- মা মল্লিক বেগমের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
গত ৩০ মে রিক্রুটিং এজেন্সি মেসার্স রুপাসী বাংলা ওভারসীজের মাধ্যমে গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে সৌদি আরবে গমন করেন। সেখানে নির্যাতনের শিকার হলে সুমির আকুতির ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর নুরুল ইসলাম রাজধানীর পল্টন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
ভিডিওতে সুমি বলেন, 'ওরা আমারে মাইরা ফালাইব, আমারে দেশে ফিরাইয়া নিয়া যান। আমি আমার সন্তান ও পরিবারের কাছে ফিরতে চাই। আমাকে আমার পরিবারের কাছে নিয়ে যান। আর কিছু দিন থাকলে আমি মরে যাব।’
থানায় জিডি করার পর ২২ অক্টোবর জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষন ব্যুরোতে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন নুরুল। কোন উপায়ান্তর না পেয়ে সুমিকে নিরাপদে দেশে ফেরত আনতে ২৭ অক্টোবর ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামে আবেদন করেন সুমির স্বামী নুরুল ইসলাম। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ব্র্যাকের সহায়তায় ২৯ অক্টোবর প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বরাবর লিখিত অভিযোগ করা হয়। পরে জেদ্দা কনস্যুলেটের হস্তক্ষেপে সুমিকে নিয়োগকর্তার বাড়ি থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। শুরুতে সুমির নিয়োগকর্তার দাবিকৃত ২২ হাজার সৌদি রিয়াল পরিশোধ না করা পর্যন্ত তাকে ফাইনাল এক্সিট- অর্থাৎ দেশে ফিরতে দেয়া হবে না বলে জানালেও পরে নাজরান শহরের শ্রম আদালতে বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়।
ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল ইসলাম বলেন, সৌদি আরবে সুমির মতো কতজনের দুরাবস্থা সে তথ্য কারও কাছে নেই। আমাদের দূতাবাসের বা সরকারেরও নজরদারির কোন ব্যবস্থা নেই। আমাদের রাষ্ট্রদূত বললেন ১৩ হাজার মেয়ে চার বছরে ফিরে এসেছে। কতজন আরও বিপদে আছে আমরা জানি না। তবে সুমি উদ্ধারের ঘটনায় আবারও প্রমাণিত হলো কোনভাবে যদি পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে তাহলে নারীরা তাদের সত্যিকারের অবস্থাটা জানাতে পারেন।
শরিফুল হাসান বলেন, আট বছর আগে যখন সৌদি আরবে নারী কর্মী পাঠানোর কথা উঠে তখন থেকে একটা দাবি ছিল নারী কর্মীরা যাতে মোবাইলটা ব্যবহার করতে পারেন। সরকার সেই প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে একজন নারীর পাসপোর্ট নিয়ে নেয়া হয়। আর অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাকে মুঠোফোন ব্যবহার করতে দেয়া হয় না। ফলে বিপদে পড়লও কাউকে জানাতে পারেন না। অথচ শুধু যদি মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে দেয়া হতো পরিস্থিতি বদলে যেতো।
গত চার বছরে ১৫২ জন মেয়ে মারা গেল, তাদের ৬৬ জন আত্মহত্যা করলো, শুধু এই বছরেই ৫৩ জন নারীর লাশ আসলো তাদের কেউ কেউ হয়তো বেঁচে যেতেন। কাজেই মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে দেয়া হোক।
বৃহস্পতিবার রাত ১১.২০ মিনিটে সৌদি এয়ারলাইন্স (এসভি-৮০৪) বিমান যোগে সৌদি থেকে দেশে ফিরেছেন আরও ৮৬ বাংলাদেশি।
বিমানবন্দেরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের তথ্য অনুযায়ী, নভেস্বর মাসের দু সপ্তায় এক হাজার ৬৪৭ জন বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন।
গতকাল ফেরাদের একজন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লিটন। পাসপোর্টে প্রথম তিন মাসের ভিসার মেয়াদ থাকা সত্বেও শূন্য হাতে দেশে ফিরতে হয়েছে তাকে। লিটন মাত্র দেড় মাস আগে রিক্রুটিং এজেন্সি এরোমা ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে গিয়েছিলেন সৌদি আরবে। কিন্তু চলমান অভিযানে দেশে ফেরতে হলো লিটনকে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আরেক ছেলে দুলাল হোসেন জানান, চার লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা খরচ করে ছয় মাস পূর্বে গিয়েছিলেন সৌদিতে। কিন্তু তারও ভাগ্যে একই পরিণতি। বাজার করতে যাবার পথে পুলিশ ধরে এক কাপড়েই পাঠিয়ে দেয়।
সাত মাস আগে সৌদি যাওয়া নওগাঁর জুয়েলের গল্পটাও একই রকম। জুয়েলের অভিযোগ আমার আকামা থাকা সত্বেও তাদে দেশে ফেরত পাঠানো হলো তাকে।
জুয়েলের সঙ্গে সঙ্গী হয়ে দেশে ফিরেছেন মুন্সিগঞ্জের রুহুল আমিন। ছিলেন এক বছর। টাঙ্গাইলের নাসিম তিন লাখ আশি হাজার টাকা খরচ করে পাঁচ মাস আগে গিয়েছিলেন। চার লাখ টাকা দিয়ে মেহেরপুরের সোহাগ গিয়েছেন চার মাস পূর্বে। নরসিংন্দীর কাউসার দশ মাসকুমিল্লার আশিকুর রহমান ও মানিক ময়িা গিয়েছেন নয় মাস পূর্বে।
দেশে ফেরত আসা কর্মীদের অভিযোগ, কফিলকে (নিয়োগকর্তা) আকামর টাকা প্রদানের পরেও তাদের আকামা তৈরি করে দেয়া হয়নি। আর পুলিশ ধরলে দায়িত্ব না নিয়ে দেশ পাঠিয়ে নির্দেশ প্রদান করেন কফিল।
পিএনএস/জে এ
সুমিসহ সৌদি থেকে ফিরলেন আরও ৮৬ বাংলাদেশি
15-11-2019 03:11PM