গণমাধ্যমজুড়ে শুভঙ্করের ফাঁকি- ১০

  17-11-2019 05:48PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : হালে গণমাধ্যমের গণমুখী চরিত্র অনেকটা ফ্যাকাশে রূপ ধারণ করছে। ফলে ক্রমেই এটি জনমানুষের আস্থা হারাচ্ছে। অনেকে তো টিভি দেখাই বন্ধ করে দিয়েছেন। কেন বন্ধ করে দিয়েছেন, সেটার ব্যাখ্যা না করলেও যারা লবণ দিয়ে ভাত খান, তাদের বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।যদিও স্বাধীন মতপ্রকাশ নিয়ে নানাজনের নানা মত রয়েছে।তবে এটি যে প্রশ্নবিদ্ধ, সে বিষয়টি অস্বীকার করা যাবে না।

মুক্ত, স্বাধীন ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার স্বরূপ ফিরে পেতে সাংবাদিক সমাজ দীর্ঘদিন আন্দোলন করে আসছে।দল-মত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের সময় ব্যানারে এ বিষয়গুলো অধিক গুরুত্ব পায়।সব নেতাদের মুখে এ দাবিগুলো স্থান পায়। সবাই এ অধিকার ফিরে পেতে এবং সাংবাদিকদের উপর পরিচালিত হামলা এবং অপঘাতে নিহত সাংবাদিকদের ন্যায়বিচারের দাবি জানান।ঘরে-বাইরে-কর্মস্থল-রাজপথে কোথাও যখন সাংবাদিকরা নিরাপদ নন, তখন এ দাবিটি জোরদার হয়।

কেউ মারা গেলে তার পরিবারের এ হত্যার ন্যায়বিচার পাওয়া সাংবিধানিক অধিকার।অথচ সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির বিচার নিয়ে রাজপথে সব ধরনের অহিংস আন্দোলন হয়েছে।সব শ্রেণীর মানূষ এ দাবিতে সোচ্চার ছিল। তার পরও এক যুগ হতে চলেছে, বিচার তো দূরে কথা; আজও এটি আলোর মুখ দেখেনি।

সমাজের অগ্রসর মানুষ হিসেবে পরিচিত এবং এত আন্দোলন-সংগ্রামের পরও বহুল আলোচিত একটি মামলার এমন হাল হলে অন্যদের মামলার কী গতি, সে প্রশ্ন সহজেই সামনে চলে আসে। এর থেকে সহজে বুঝা যায় যে, গণমাধ্যমে কর্মরতদের কোন চোখে দেখা হয়। যে যা-ই বলুক না কেন, গণমাধ্যমের এ হেন অবস্থা কারো কাম্য নয়।

মুক্ত ও স্বাধীন মত প্রকাশের পর বুয়েট ছাত্র আবরারের কী পরিণতি হয়েছে, তা তো সবার জানা।এটা বলে দিচ্ছে, সমাজে তা প্রকাশের স্বাধীনতা কতটা ঝুঁকিতে। গণমুখী সাংবাদিকতার বদলে বর্তমানে কথিত উন্নয়ন সাংবাদিকতার চর্চা হচ্ছে। এর আড়ালে চলছে সিন্ডিকেট সাংবাদিকতা।যেখানে ‘ধরি মাছ, না ছুঁই পানি অবস্থা।’ তোয়াজ-তোষামদি যার অন্যতম বাহন।

এ সাংবাদিকতার আড়ালে মূল পেশা বাধাগ্রস্ত হওয়ায় মানুষ বাস্তব সত্য খুঁজে না পেয়ে মিডিয়ার প্রতি নাখোশ।যা ঘটেছে এবং বাস্তব সত্য, তা মিডিয়ায় না দেখে তারা হতাশ। এ হতাশটা পেশার পাশাপাশি দেশ ও জাতির সর্বনাশ ডেকে আনছে। সমাজের সঠিক চিত্র গণমাধ্যমে ফুটে না উঠলে পেশার মর্যাদার পাশাপাশি দেশ ও জাতির যারপরনাই ক্ষতি হয়।প্রচলিত আইন-বিধিবিধানের পর আছে মালিকপক্ষের চাওয়ার-পাওয়া, এর বাইরে গিয়ে পেশাদার সাংবাদিকরা যতটা পারেন, মুক্ত বুদ্ধির চর্চা মাথায় রেখেই পেশাগত দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট।

গণমধ্যমের চেয়ে গণমাধ্যকর্মীর জীবনের নিরাপত্তা এবং জীবনহানির পর বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রা এ পেশার মানুষকে স্বাভাবিকভাবেই ঝুঁকিতে ফেলেছে। সাগর-রুনি সাংবাদিক দম্পতির বিচারে বাণী নীরবে কাঁদায় সাংবাদিক হত্যার বিচার নিয়ে শুভঙ্করের ফাঁকির দিকটি পেশাদার মনে বিরূপ প্রভাব ফেলছে।অবাধ, মুক্ত ও স্বাধীন সাংবাদিকতার পথকে আরো সহজ করতে অপঘাতে নিহত সাংবাদিকদের বিচার দ্রুতকরণে দায়িত্বশীলদের নড়েচড়ে বসা দরকার।

গণমাধ্যম সমাজের আয়না। সে আয়নায় সম্ভব সবকিছুর সঠিক প্রতিফলন ঘটানো জরুরি। সঠিক তথ্য উপস্থাপন না হলে সংশ্লিষ্ট মিডিয়া বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়।পাঠক ও দর্শক ক্রমাগত আস্থা হারানোর কুফলে অনেকে টিভি দেখছেন না। নিখুঁত সাংবাদিকতার চর্চা অব্যাহত রাখতে যা যা করণীয়, তার সবই করা সময়ের দাবি। সে দাবি পূরণে মুক্ত, স্বাধীন ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার পথ উন্মুক্ত করে দেওয়া অতীব জরুরি।

শেষ

প্রতিবেদক : বিশেষ প্রতিনিধি- পিএনএস

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন