শহীদ আসাদের মতো ত্যাগীদের বড় বেশি প্রয়োজন

  20-01-2020 07:04PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : যাদের ত্যাগ, রক্ত ও জীবনের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি এ দেশ, স্বাধীন ভূভাগ ও লাল-সবুজের পতাকা, তাদের অন্যতম শহীদ ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান আসাদ। আজ যার জীবনদানের শোকাবহ দিন। তার প্রতি লাখ-কোটি সালাম।

ইতিহাসের পাতা ঘেঁটে দেখা যায়, ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি পাকিস্তানি স্বৈরশাসক আইয়ুব খান সরকারের বিরুদ্ধে এ দেশের ছাত্রসমাজের ১১ দফা কর্মসূচির মিছিলে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে জীবন দেন ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান আসাদ।

ছাত্রনেতা আসাদ শহীদ হওয়ার পর তিনদিনের শোক পালন শেষে, ওই বছরের ২৪ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের ছয়দফা ও ছাত্রদের ১১ দফার পক্ষে সর্বস্তরের মানুষের বাঁধভাঙা জোয়ার নামে ঢাকাসহ সারাদেশে। সংঘটিত হয় উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান। ফলে পতন ঘটে আইয়ুব শাহীর।

এরপর আরেক স্বৈরাচার ইয়াহিয়া খান ক্ষমতায় এসে সাধারণ নির্বাচনের ঘোষণা দেন। সত্তরের সেই অভূতপূর্ব নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। কিন্তু ইয়াহিয়া ক্ষমতা না ছেড়ে নানা টালবাহানা শুরু করে। ফলে স্বৈরাচার হটাতে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়।

প্রতি ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান আসাদ ঊনসত্তরের ২০ জানুয়ারি পাকিস্তানী স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে জীবন দিয়ে আজও ইতিহাস হয়ে আছেন। এ দেশ ও জাতি যতদিন থাকবে, ততদিন এই বীরের নাম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হবে। ইতিহাসে অম্লান থাকবে তার নাম ও অবদান।

আসাদরা যুগে যুগে কালে কালে সময়ের প্রয়োজনে আসেন। যেমনি এসেছিলেন একাত্তরে। এসেছিলেন নব্বইয়ে। যুগের চাহিদা পূরণে, কালজয়ী ইতিহাস রচনায় তারা অকাতরে জীবন বিলিয়ে দেন। এভাবে নিজের অজান্তেই তারা নিজের নাম ইতিহাসের খাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিখে যান।

নব্বইয়ে দশকে ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক’- এই স্লোগান বুকে-পিঠে লিখে ঢাকার রাজপথে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান শ্রমিক নেতা নূর হোসেন। নূর হোসেন ও ডা. মিলনের জীবন ও রক্তের মধ্য দিয়ে একইভাবে স্বৈরাচারের পতন ত্বরান্বিত হয়, গণতন্ত্র মুক্তি পায়।

লড়াই-সংগ্রমের মাধ্যমে জীবন ও রক্ত দিয়ে অধিকার আদায়ের ইতিহাস আমাদের খুবই সমৃদ্ধ। যখনই গণতন্ত্র প্রশ্নবিদ্ধ হয়, স্বৈরাচার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে; তখনই আসাদুজ্জান আসাদরা আমাদের মন, মনন ও মগজে মুক্তির মশাল প্রজ্জ্বলন করে দেন। যে মশাল মুক্তির নিশানা দেখিয়ে দেয়।

শহীদ আসাদ জীবন দিয়ে যে শিক্ষা ও দীক্ষা আমাদের জন্য রেখে গেছেন, সেটি হলো গণতন্ত্রকে রাহুমুক্ত করা, স্বৈরাচারকে উৎখাত করা। শহীদ আসাদ দিবসের অঙ্গীকার হোক, যুগে যুগে কালে কালে যেখানে যখনই স্বৈরাচার মাথাচাড়া দেবে, সেখানেই প্রতিরোধের দেয়াল তৈরি করা।

আজকে যখন আধিপত্যবাদের জয়জকার অনেক ক্ষেত্রেই দৃশ্যমান, তখন বাংলার মানুষের অধিকার আদায় ও রক্ষার সংগ্রামকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য ঘরে ঘরে শহীদ আসাদের মতো ত্যাগীদের বড় বেশি প্রয়োজন। পরিশেষে শহীদ আসাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি।

প্রতিবেদক : বিশেষ প্রতিনিধি- পিএনএস

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন