ঢাকা ছেড়েছেন ২৬৯ আমেরিকান, অপেক্ষায় আরও কয়েক শ

  30-03-2020 09:20PM

পিএনএস ডেস্ক : করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারী ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় এক বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকা ছেড়ে গেছেন ২৬৯ আমেরিকান। সঙ্গে তাদের পোষা ৭-৯টি কুকুরও। সোমবার সন্ধ্যায় আমেরিকান কূটনীতিক, তাদের পরিবার এবং দেশটির নাগরিকদের বহনের জন্য ভাড়া করা কাতার এয়ারওয়েজের বোয়িং-৭৭৭ উড়োজাহাজটি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে যায়। কূটনৈতিক ও সরকারি দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। জানিয়েছে, আরও শতাধিক আমেরিকান পরবর্তী ফ্লাইট ধরার অপেক্ষায় রয়েছেন। শিগগির দ্বিতীয় চার্টার্ড ফ্লাইটটি আসছে। শাহজালাল বিমানবন্দরে পরিচালক এএইচএম তৌহিদ উল আহসান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন- ২৬৯ আমেরিকানকে বহনকারী কাতার এয়ারের বিশেষ ফ্লাইটি সন্ধ্যা ৬ টা ৫ মিনিটে ঢাকা ছেড়ে যায়। তাদের বিদায় জানাতে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন ও রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার।

পরে সচিব বলেন, সোমবার ঢাকা ছেড়ে যাওয়া মার্কিনীদের প্রায় ৮০ শতাংশই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান। নিয়মিত ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এরা বাংলাদেশে আটকা পড়েছিলেন। সচিবও আরও বলেন, যেটুকু জেনেছি মার্কিন দূতাবাসের যারা গেছেন তারা যুক্তরাষ্ট্রে থাকা তাদের স্বজনদের সেবা–শুশ্রুষার জন্য গেছেন।

রোববার মার্কিন দূতাবাস এক ভিডিও ব্রিফিংয়ে জানায়, চার্টার্ড ফ্লাইটটি ঢাকা থেকে আমেরিকানদের বোঝাই করে নিয়ে যাচ্ছে। এতে একটি আসনও খালি নেই। করোনা আতঙ্কে নাগরিকরা ফিরতে চেয়েছেন। তাদের ব্যক্তিগত পছন্দ (পারসোনাল চয়েজ) কে গুরুত্ব দিয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্ট তাদের ফেরানোর পদক্ষেপ নিয়েছে। মার্কিন সরকার কাউকে ফেরার জন্য জোর করছে না। দূতাবাস এ-ও জানায়, পদক্ষেপটি সাময়িক। যেসব কূটনীতিক যুক্তরাষ্ট্র ফিরে গেছেন তা একান্তই তাদের পরিবারের স্বার্থে এমনটা জানিয়ে ভার্চুয়াল সংবাদ ব্রিফিংয়ে মার্কিন দূতাবাসের মূখপাত্র বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তারা ঢাকা ফিরবেন। ব্রিফ্রিংয়ে আরও জানানো হয়- করোনা পরিস্থিতিতেও মার্কিন দূতাবাসের কার্যক্রম সচল থাকছে। ঢাকায় আমেরিকান নাগরিকদের জন্য কসনুল্যার সেবা ২৪ ঘন্টাই খোলা। তবে সাধারণের ভিসা সার্ভিস বন্ধ রয়েছে। দূতাবাস এবং সরকারি দায়িত্বশীল সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে, প্রথম ফ্লাইটে স্থান সঙ্কুলান না হওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র ফিরতে আগ্রহী মার্কিন নাগরিক এবং বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকানের তালিকা দীর্ঘ হওয়ায় আরও একটি ফ্লাইট চার্টার্ড করার চিন্তা করা হচ্ছে। দ্রুতই ফ্লাইটটি আনা হবে বলেও দূতাবাসের করোনা আপডেট সংক্রান্ত নোটিশে জানানো হয়েছে। তবে ঠিক কবে নাগাদ ফ্লাইটটি ঢাকা থেকে রওনা করতে পারে তা এখনও ঠিক হয়নি। সূত্র মতে, উদ্ভূত বিশেষ পরিস্থিতিতে মার্কিন দূতাবাসের মধ্যম সরির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কূটনীতিক বাংলাদেশ ছাড়লেও রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার ঢাকাতেই থাকছেন।

এশিয়া, ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিক, কূটনীতিকরাও ঢাকা ছাড়ছেন

ওদিকে কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, কেবল আমেরিকান নয়, ঢাকায় থাকা ইউরোপ, এশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিকরাও ঢাকা ছাড়ছেন। উদ্বিগ্ন কূটনীতিকরা তাদের পরিবার-পরিজনকে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠাচ্ছেন। গত ২৬ শে মার্চ ভোর রাতে একটি স্পেশাল ফ্লাইট পাঠিয়ে ২৩০ নাগরিককে সরিয়ে নিয়েছে মালয়েশিয়া। ফেরত নেয়া ওই নাগরিকদের দলে দূতাবাসের কর্মরত কূটনীতিক ও কর্মচারীরাদের পরিবারের সদস্যরাও ছিলেন। একই দিন দুপুরে ড্রুক এয়ারের দুটি স্পেশাল ফ্লাইটে ১২৬ জন ভুটানিজ নাগরিককে থিম্পু ফিরিয়ে নেয়া হয়। ফেরত যাওয়া ওই দলে ব্যবসায়ী, পেশাজীবি ছাড়াও ঢাকাস্থ ভুটান দুতাবাসে কর্মরত কূটনীতিক ও স্টাফদের পরিবারের সদস্যরা ছিলেন। ভুটান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যফেয়ার্স অবশ্য দাবি করেছেন- এখনও দূতাবাসের কোনো কর্মী বাংলাদেশ ছেড়ে যান নি। তবে তারাও উদ্বিগ্ন, ভাইরাসটির আক্রমণ বাংলাদেশে কতটা ভয়ঙ্কর হয় সেই শঙ্কায়।
ওদিকে ঢাকায় অবস্থানরত ১০৪ জন জার্মান নাগরিক এবং ঢাকাস্থ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ডেলিগেশন কার্যালয়ের ৯ কূটনীতিক-স্টাফ সহ ইইউভুক্ত ৬ শতাধিক নাগরিক ঢাকা ছাড়তে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ নিয়ে ঢাকায় ইইউ দেশের কূটনীতিকেরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দু'দফা বৈঠক করেছেন। জরুরি বার্তা বিনিময়ো চলছে। তারা তারা চার্টার্ড ফ্লাইটে তাদের নাগরিকদের সরিয়ে নিতে চান। তাদের প্রস্তাবে ঢাকার সম্মতি রয়েছে। বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনায় সরকারের পক্ষ থেকে কারিগরি সহায়তা দেয়ার আশ্বাসও দেয়া হয়েছে।

লঙ্কানদের আপাতত ঢাকায় থাকতে হচ্ছে, প্রেসিডেন্টের টুইট:
ঢাকায় থাকা ৪৫০ শ্রীলঙ্কার নাগরিক কলম্বো ফিরতে দেশটির প্রেসিডেন্টের কাছে বিশেষ বিমান পাঠানোর আবেদন করেছিলেন। কিন্তু না, কোভিড১৯ পরিস্থিতির ভয়াবহতার বিষয়টি উল্লেখপূর্বক লঙ্কান প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে টুইট বার্তায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সবাইকে স্ব স্ব অবস্থানে ধৈর্য্যের সঙ্গে অপেক্ষার অনুরোধ জানিয়েছেন। ফলে বাংলাদেশে অবস্থানরত লঙ্কানরা আপাতত ফিরতে পারেছেন না। উল্লেখ্য করোনার কারণে দেশটিতে লকডাউন বহাল রয়েছে।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন