‘সবচেয়ে কম টেস্টে’ দ্বিতীয় বাংলাদেশ, চিকিৎসক মৃত্যু হারে শীর্ষে

  01-07-2020 07:29PM

পিএনএস(আহমেদ জামিল) : প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস আক্রান্ত ১৭ দেশের মধ্যে গড়ে সবচেয়ে কম নমুনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। অপরদিকে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মৃত্যুহারে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া বাংলাদেশে বিভিন্ন হাসপাতালে করোনার উপসর্গ নিয়ে রোগী ভর্তি হচ্ছেন। কিন্তু তাঁদের পরীক্ষা হচ্ছে না। লাখ লাখ লোক করোনা উপসর্গ থাকলেও পরীক্ষা করাতে পারছে না সহজে। অনেকেই পরীক্ষা ছাড়াই করোনার সব ধরণের ওষধ সেবন করছেন।

সারা দেশে করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু এক হাজার ছাড়িয়েছে বলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জরিপে দেখা গেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মৃত্যুর পর পরীক্ষা করে ব্যক্তির শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসার পর যাঁরা সুস্থ হচ্ছেন, তাঁদের কিন্তু পরীক্ষা করা হচ্ছে না। ফলে রোগীর সংখ্যা যে শনাক্ত ব্যক্তির সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি, এটা এখন আর বলার অপেক্ষা রাখে না। করোনা পরীক্ষার ফি নির্ধারণ করায় বর্তমানে সাধারণ মানুষের জন্য মরার উপর খাড়া গা তৈরি হয়েছে দরিদ্র মানুষের। দেশে আর সরকারিভাবে বিনামূল্যে করোনা পরীক্ষার সুযোগ নেই। করোনা পরীক্ষায় তিন ক্ষেত্রে ২০০ ও ৫০০ টাকা ফি নির্ধারণ করে পরিপত্র ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।

দেশে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৪৫ হাজার ৪৮৩ জন করোনাভাইরাস সংক্রমিত কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে। এই হিসাবে বিশ্বে করোনা রোগী শনাক্তের তালিকায় ১৭তম অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। আর এই ১৭ দেশের মধ্যে গড়ে সবচেয়ে কম নমুনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দ্বিতীয়। অন্যদিকে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মৃত্যুহারে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। সারা বিশ্বে যেখানে চিকিৎসক মৃত্যুর গড় হার শতকরা ২.৫ ভাগ, সেখানে বাংলাদেশে তা ৪ ভাগ।

দেশে চিকিৎসকদের অধিক মৃত্যুহারের কারণ ব্যাখ্যা করে বিশেষজ্ঞরা বলেন, চিকিৎসকরা পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই করোনা রোগীদের সংস্পর্শে আসছেন। নিম্নমানের পিপিই, মাস্ক ইত্যাদি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ। তাদের মতে, দেশের অধিকাংশ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী করোনা রোগী দেখা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার ব্যাপারে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নন। যে অল্প সংখ্যক চিকিৎসক ও নার্সকে অনলাইনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, তা দেশের মোট করোনা রোগী ও জনসংখ্যার তুলনায় অপর্যাপ্ত। অনলাইনে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অনেকেই দাবি করছেন যে প্রশিক্ষণ তাদের দেওয়া হচ্ছে তা নিয়ে রোগীর সেবা করা সম্ভব নয়।

এছাড়া করোনা পরীক্ষার লম্বা সারি ধরতে হচ্ছে সাধরণ মানুষের। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) করোনা পরীক্ষার জন্য অনলাইনে সিরিয়াল নিতে হয়। প্রতিদিনের পরীক্ষার জন্য যে কোটা বরাদ্দ থাকে, তা অনলাইনে মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে পূরণ হয়ে যায়।

একই অবস্থা শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ এবং রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতালের। করোনা পরীক্ষার জন্য আসা মানুষের ভিড় প্রতিদিনই চোখে পড়ছে। সেখানে প্রতিদিন লম্বা লাইন পড়ছে। কয়েক দিন ঘুরতেও হচ্ছে নমুনা দিতে। করোনার উপসর্গ আছে, এমন ব্যক্তিরা পরীক্ষার জন্য যেভাবে তদবির করেন, দালাল ধরেন; তাতে স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যায়, যাঁদের পরিচিত লোক নেই বা অর্থ খরচের উপায় নেই, তাঁদের কী অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে করোনার উপসর্গ নিয়ে রোগী ভর্তি হচ্ছেন। কিন্তু তাঁদের পরীক্ষা হচ্ছে না। সারা দেশে করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু এক হাজার ছাড়িয়েছে বলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জরিপে দেখা গেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মৃত্যুর পর পরীক্ষা করে ব্যক্তির শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে।
পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনু্যায়ী, ২৯ জুন (সোমবার) পর্যন্ত বাংলাদেশে গড়ে প্রতি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে ৪ হাজার ৬৭২ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়। করোনা শনাক্তের দিক থেকে প্রথম ১৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের চেয়ে কম পরীক্ষা করা হয় কেবল মেক্সিকোতে। দেশটিতে প্রতি ১০ লাখে ৪ হাজার ৩৯৫ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়।

৩০ জুন (মঙ্গলবার) বাংলাদেশে ৭ লাখ ৬৯ হাজার ৪৬০টি। আর রোগী শনাক্ত হয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৪৮৩ জন। মোট মৃত্যু এক হাজার ৮৪৭ জনের মৃত্যু হলো।।

২৪ ঘণ্টার নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ২২ দশমিক ৫০ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৪০ দশমিক ৭৫ এবং মৃতের হার ১ দশমিক ২৬ শতাংশ।

অন্যদিকে, প্রতি ১০ লাখে সবচেয়ে বেশি করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে যুক্তরাজ্যে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৮৫২ জনের। এর পরে রাশিয়ায় ১ লাখ ৩৪ হাজার ৫০ জনের পরীক্ষা করা হয় প্রতি ১০ লাখে।

মোট সংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে বেশি করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। এখন পর্যন্ত দেশটিতে পরীক্ষা করা হয়েছে ৩ কোটি ২ লাখের বেশি মানুষের। প্রতি ১০ লাখে দেশটিতে প্রায় ১লাখ ২৭১ জন মানুষের পরীক্ষা করা হয়েছে।

ব্রাজিলে প্রায় ১০ ভাগের এক ভাগ পরীক্ষা করা হয়েছে। প্রতি ১০ লাখে ১৪ হাজার ৪৪৫ জনকে পরীক্ষা করা হয়েছে।

তবে এদিক থেকে এগিয়ে আছে রাশিয়া। প্রতি ১০ লাখে পরীক্ষা করা হয়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৫০ জন । যুক্তরাজ্যও প্রতি ১০ লাখে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৮৫২জন পরীক্ষা করেছে।

ভারতে যদিও ৮৬ লাখ ৮ হাজার ৬৫৪টি পরীক্ষা করা হয়েছে, তবুও দেশটিতে প্রতি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে ৬ হাজার ২৩৮ জন মানুষের করোনা পরীক্ষা করা হয়।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন