যাত্রাবাড়ীতে ৩ বছরের সন্তানকে হত্যা করেন পাষুণ্ড বাবা!

  01-07-2020 08:33PM

পিএনএস ডেস্ক : রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানা এলাকার মাতুয়াইল থেকে শিশু সন্তানকে হত্যাকারী বাবাসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব-১০)। নিহত ওই শিশুর নাম মাহিম। তার বয়স ছিল মাত্র ৩ বছর ৭ মাস। জুসের সঙ্গে ঘুমের ওষধ মিশিয়ে তার বাবাই তাকে হত্যা করেছে বলে জানিয়েছে র‍্যাব।

আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-১০ এর অধিনায়ক এডিশনাল ডিআইজি মো. কাইমুজ্জামান খান।

তিনি জানান, গত সোমবার (২৯ জুন) র‌্যাব-১০ এ হাজির হয়ে নিহত শিশু মাহিমের বাবা মো. জুলহাস (৩১) অভিযোগ দাখিল করেন যে, তার ছেলে মাহিমকে গত ২৭ জুন থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাকে কেউ হয়তোবা অপহরণ করে নিয়ে গেছে। অপহরণের বিষয়ে ভুক্তভোগীর বাবা যাত্রাবাড়ী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেছেন।

এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল মঙ্গলবার র‌্যাব-১০ এর কোম্পানি কমান্ডার উপ-পরিচালক আলী রেজা রাব্বী ও স্কোয়াড কমান্ডার সহকারী পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি আভিযানিক দল ডিএমপি ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানাধীন মাতুয়াইল মৃধাবাড়ি রাজমহল হোটেলের সামনে থেকে অপহরণের সঙ্গে জড়িত মো. জুয়েল ব্যাপারীকে (২০) গ্রেপ্তার করে।

পরে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জুয়েল নিহত মাহিমকে অপহরণের কথা স্বীকার করেন। এবং এই অপহরণের সঙ্গে মাহিমের বাবা জুলহাস ওরফে ফারুকেরও সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে জানায়৷ এ কথা জানার পরই র‌্যাব জুলহাসকে মাতুয়াইল দরবার শরীফ মোড় এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।

পরবর্তীতে নিহত ওই শিশুর বাবা জুলহাস এবং অপর অপহরণকারী জুয়েলকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা অপহরণ করে জুসের সঙ্গে ঘুমের ওষধ মিশিয়ে পান করিয়ে মাহিমকে হত্যা করেছে বলে স্বীকার করেন।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে র‍্যাব জানায়, নিহত মাহিমের বাবা জুলহাস আগে থেকেই যৌতুকের টাকা দাবিসহ বিদেশ যাওয়ার জন্য চার লাখ টাকা দাবি করে তার শ্বশুরবাড়িতে। কিন্তু টাকা না পেয়ে বিভিন্ন সময় স্ত্রীকে নির্যাতন করে আসছিল। পারিবারিক কলহ এবং শ্বশুরবাড়ি থেকে টাকা না পেয়ে ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে নিজ সন্তানকে হত্যার জন্য প্রতিবেশী জুয়েলকে নিয়ে পরিকল্পনা করে।

পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক, গত ২৬ জুন জুয়েল ঘুমের ওষধ (৮টি ট্যাবলেট) ক্রয় করে জুলহাসকে দেয়। ২৭ জুন আনুমানিক সাড়ে ১২টায় জুয়েল মাহিমকে তার বাসার সামনে থেকে ফুসলিয়ে তার বাবার কাছে পূর্ব নির্ধারিত স্থান মাতুয়াইল বাসস্ট্যান্ডে নিয়ে যায়। এরপর জুলহাস এবং জুয়েল ভিকটিমকে মাতুয়াইল বাসস্ট্যান্ড থেকে নিয়ে দেইল্লা, ডেমরা নির্জন এলাকায় নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে জুসের সঙ্গে ৮টি ঘুমের ওষধ মিশিয়ে পান করায়। এরপর তারা মাহিমের মৃত্যু নিশ্চিৎ হলে ওইদিন সন্ধ্যায় যাত্রাবাড়ী থানাধীন মাতুয়াইল, মৃধাবাড়ী ময়লার ডিপো সংলগ্ন গ্রিন মডেল টাউন এলাকায় কাশবনের ভেতর বালু চাপা দিয়ে রেখে নিজ বাড়িতে চলে যায়।

এরপর জুলহাস বাচ্চা অপহরণ হয়েছে বলে ২৯ জুন যাত্রাবাড়ী থানায় একটি জিডি করে। জুলহাস বাচ্চা অপহরণ হয়েছে এটা প্রমাণ করার জন্য ২৯ জুন জুয়েলকে দিয়ে মুক্তিপণ চেয়ে নিজের মোবাইলে একটি ম্যাসেজ পাঠায় এবং সেদিনই র‌্যাব-১০ এ এসে জিডির কপিসহ একটি অভিযোগ করে।

র‌্যাব-১০ এর আভিযানিক দল গতকাল রাতে হত্যাকারীদের সঙ্গে নিয়ে তাদের দেখানো জায়গা থেকে শিশু মাহিমের মৃতদেহ উদ্ধার করে। উদ্ধারের পর মৃতদেহ যাত্রাবাড়ী থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে র‍্যাব।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন