‘ভিয়েতনামে হ্যানয় মিশন দখলের চেষ্টা ২৭ বাংলাদেশির’

  06-07-2020 11:21PM

পিএনএস ডেস্ক : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন জানিয়েছেন, প্রতারিত হয়ে ভিয়েতনামে গিয়ে ২৭ বাংলাদেশি হ্যানয় মিশন দখলের চেষ্টা চালিয়েছে এবং বিদেশের মাটিতে বসে দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। ওই ২৭ জন এখনও ভিয়েতনামে অবস্থান করছে। প্রবাসী অধিকার পরিষদ নামের একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তাদের উসকানি দিচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সদ্য সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর।

সোমবার (৬ জুলাই) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। ভিয়েতনাম এমন একটি দেশ, যেখানে বিদেশিদের জন্য তেমন কাজের কোনো সুযোগ নাই। অথচ পাচারকারীরা ওইখানে অনেক বাংলাদেশিদের নিয়ে গেছে, সঠিক সংখ্যাটা আমাদের জানা নেই।’

ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘গত ২ জুলাই আমাদের রাষ্ট্রদূত ও মিশনের কর্মকর্তারা ভিয়েতনাম থেকে দেশে আসার জন্য বাংলাদেশিদের সহায়তা করছিলেন। এমন সময় ২৭ জন বাংলাদেশি ভিয়েতনামে আমাদের মিশনে ঢুকে পড়ে এবং দখল করে নেয়। তারা তখন দাবি করে যে, তাদেরও বাংলাদেশে পাঠাতে হবে। ওই সময় তাদের বলা হয় যে, একটি ফ্লাইট যাচ্ছে, ওই ফ্লাইটে তারা যেতে পারে। কিন্তু তারা সেই ফ্লাইটে আসতে চায় না। আবার তারা কোনো টাকা-পয়সাও খরচ করবে না। এ নিয়ে অনেক দেন-দরবার চলে। শেষে তাদের ভিয়েতনামের একটি হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। তারা এখনও ওই হোটেলেই আছে।’

তিনি বলেন, ‘তারা একটি অপপ্রচার চালাচ্ছে যে, সরকার তাদের কোনো সাহায্য করছে না। প্রথমত, তারা সবাই অবৈধভাবে ভিয়েতনাম গিয়েছে। দ্বিতীয়ত, তাদের কারও কাছেই পাসপোর্ট নেই। তারা পাসপোর্টের বিষয়ে কোনো কথা বলতেও রাজি না। তারা জানিয়েছে যে, পাসপোর্ট তাদের এজেন্টরা নিয়ে গেছে। আবার তারা কোনো আইডিও (পরিচয় পত্র) দেখাতে চায় না। তারা দূতাবাসকে কোনো ধরণের সহযোগিতাই করছে না। ওই ২৭ জনের দাবি হলো যে, তাদের বাংলাদেশে নিয়ে যেতে হবে এবং সরকার বিশেষ ফ্লাইটে করে নিয়ে যাবে। এ বিষয়ে তারা আবার ভিডিওতে আন্দোলন করছে। তারা বলছে যে, পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গার মিশনগুলোকে তারা আক্রমণ করবে। এদের নেতৃত্ব দিচ্ছে প্রবাসী অধিকার পরিষদ একটি নতুন সংগঠন। এর প্রধান হোতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিপি নুর সাহেব বা কেউ।’

তিনি আরো বলেন, ‘যারা অবৈধভাবে বিদেশে যান তাদেরকেও শাস্তির আওতায় আনা উচিত। এটি আলোচনা করে করতে হবে। কারণ বিদেশে গিয়ে তারা আমাদের বদনাম করছে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় তাদের বিদেশে যেতে সাহায্য করে। আর বিদেশে গেলে সমস্যায় পড়লে পররাষ্ট্র মিশনে তারা হামলা চালায় এটা ঠিক নয়।’

তবে নুরুল হক নুর এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তিনি প্রবাসীদের উসকানি দেননি, প্রতিবাদ করেছেন। নুরুল হক নূর বলেন, “আমি খুব অবাক হচ্ছি যে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মতো একজন উচ্চশিক্ষিত লোক, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কাজ করা একজন লোক, তিনি বিভিন্ন সময় যে ধরনের অসংলগ্ন কথাবার্তা বলেন, তাতে আসলে এদেশের মানুষ বিভ্রান্ত হয়, প্রবাসীরা অপমানিত হন। এর আগে তিনি বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ককে ‘স্বামী – স্ত্রীর’ সম্পর্ক বলেছেন। করোনাভাইরাসের প্রকোপের শুরুতে ‘প্রবাসীরা দেশে আসলে নবাবজাদা হয়’ এ ধরনের মন্তব্য করেছেন। কিছুদিন আগে তিনি কথা বলেছেন –‘ প্রবাসীরা দেশে আসলে চুরি ডাকাতি বেড়ে যায়’। এসব অসংলগ্ন , বিভ্রান্তিকর, আপত্তিজনক কথাবার্তা তার মুখ থেকে প্রায়েই আসে। সেটার নিয়মিত চর্চা হিসেবে বোধহয় একথা বলেছেন।”

তিনি আরো বলেন, “আমি বাংলাদেশি একজন নাগরিক, বাংলাদেশের একজন ছাত্র নেতা। আমি কোনও জাতীয় নেতা নই, আমি কোনও রাজনৈতিক দলের প্রধান নই। আমি ভিয়েতনামে বাংলাদেশ দূতাবাস দখল করাবো –এটা কতটুকু হাস্যকর কথা! এই কথা বাংলাদেশের একজন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখ থেকে আসা বাতুলতা ছাড়া আর কিছু না। আমি ‘প্রবাসী অধিকার পরিষদ’ নামে একটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছি, যেটা প্রায় মাস খানেকের মতো ধরে তৈরি হয়েছে। সেখানে এক মাসের মধ্যে আমাদের এতো শক্তি হয়ে গেল যে আমরা একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করবো! এটা খুবই ফালতু কথা।”

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সোমবার (৬ জুলাই) এক বার্তায় জানায়, ২৭ জন বাংলাদেশি মানব পাচারকারীদের দ্বারা প্রতারিত হয়ে এখন ভিয়েতনামে অবস্থান করছে। এর আগে, গত ২ জুলাই ঢাকা-হ্যানয় কর্তৃপক্ষের যৌথ সহযোগিতায় একটি বিশেষ ফ্লাইটে ১১ জন বাংলাদেশি দেশে ফিরেছে। এই ২৭ জন বাংলাদেশিও ওই ফ্লাইটে দেশে ফেরার জন্য তালিকাভুক্ত ছিল। এই ২৭ জন দাবি করে যে, বাংলাদেশ সরকারকে তাদের বিমান ভাড়া দিতে হবে। অথচ অবৈধভাবে বিদেশে যাওয়ার কারণে দেশে ফেরার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিমান ভাড়া দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই।

বার্তায় আরো বলা হয়, এরপর এই ২৭ জন জোড় করে ভিয়েতনামে বাংলাদেশ মিশনের ভেতরে ঢুকে পড়ে এবং মিশন দখল করার চেষ্টা চালায়। এই সময় তারা ভিয়েতনামের আইনও ভঙ্গ করে। তারা বিদেশ বাংলাদেশের সুনাম নষ্ট করার চেলায়। এমনকি ওই ২৭ জন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রতি নেতিবাচক তথ্য প্রচার করে।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন