প্রতারক সাহেদের টর্চার সেল থেকে ছাড় পাননি বয়স্করাও!

  13-07-2020 07:17PM

পিএনএস ডেস্ক: বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে দেশের সবার নজর এখন রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান প্রতারক সাহেদের গ্রেফতারের দিকে। শুধু তাই নয় সেইসঙ্গে প্রতারক সাহেদকে ধরতে র‍্যাবের একাধিক টিম দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযানে নেমেছে।
রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদের কাছে পাওনাদাররা টাকা চাইতে গেলে টর্চার সেলে নিয়ে তাদের নির্যাতন করা হতো বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। তাদের ভাষ্যে- তার টর্চার সেল থেকে রেহাই পাননি কেউ, এমনকি বৃদ্ধরাও।

৬৫ বছর বয়সী জয়নাল আবেদিন রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদের প্রতিষ্ঠানে বালু সরবারাহ করতেন। শুরুর দিকে কিছু টাকা পরিশোধ করলেও এখনো পাওনা রয়েছে প্রায় ১৫ লাখ টাকা। এই টাকার জন্য তিনি ঘুরছেন প্রায় তিন বছর ধরে। পাওনা টাকা চাইতে গেলে সাহেদ তাকে টর্চার সেলে নিয়ে নির্যাতন করেছেন বলে জানান তিনি।

ভুক্তভোগী জয়নাল আবেদিন বলেন, ভয়ে এতোদিন নিশ্চুপ ছিলেন। রিজেন্ট হাসপাতালের প্রতারণা প্রকাশ হওয়ার পর ভুক্তভোগীরা মুখ খুলতে শুরু করেছে। টাকা চাইতে গেলেই অকথ্য ভাষায় গাল-মন্দ করতো সাহেদ। আবার তার টর্চার সেলে নিয়ে শারিরীক নির্যাতন করতো।

এদিকে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার নামে প্রতারণাসহ তার বিরুদ্ধে অর্ধশতাধিক মামলা রয়েছে। এরইমধ্যে সাহেদের বিরুদ্ধে এমন শত শত মানুষের অভিযোগ জমা পড়ছে পুলিশ ও র‌্যাবের কাছে। তবে সাহেদকে এখনো গ্রেফতার করা যায়নি।

করোনা আক্রান্ত রোগীদের রিজেন্ট হাসপাতালে চিকিৎসার নামে প্রতারণার মামলায় রিমান্ডে থাকা আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে সাহেদ সম্পর্কে নতুন নতুন তথ্য পাচ্ছে তদন্তকারীরা। পুলিশ বলছে, দেশের বিভিন্ন থানায় সাহেদের নামে আরো ২৩টি মামলার সন্ধান পাওয়া গেছে। তাদের হিসাবে সাহেদ অন্তত ৫৬টি মামলার আসামি। তিনি যাতে পালাতে না পারে সেজন্য তার পাসপোর্ট জব্দ করেছে পুলিশ।

অনুসন্ধানে তার বিরুদ্ধে বেড়িয়ে আসছে আরো চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। প্রতারক সাহেদের হাত থেকে রেহায় পাননি ভ্যানচালক, পুলিশ, ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মকর্তারাও। নানা উপায়ে এমন শত শত মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। সাহেদের প্রতারণার শিকার হয়ে ভুক্তভোগীদের অনেকেই এখন বাড়িছাড়া। তার প্রতারণার ফাঁদ শুধু রাজধানীতেই নয়, রয়েছে দেশজুড়ে।

তার প্রতারণার শিকার হয়ে বাড়িছাড়াদের একজন সিলেটের পাথর ব্যবসায়ী হাজী সামসুল। সাহেদের কাছে তিনি পাবেন ৩০ লাখ টাকা। দেনার দায়ে বাড়ি ছেড়ে ঢাকার হোটেলে এসে উঠেছেন তিনি। ভেঙে গেছে মেয়ের বিয়েও।

সামসুুল হক বলেন, সাহেদ আমাকে পথে বসিয়েছে। ব্যাংক ঋণের চাপে এখন আমি বাড়িছাড়া হয়ে পথে পথে ঘুড়ি। উত্তরা পশ্চিম থানায় এসেছি কয়েক বার। কিন্তু সাহেদের বিরুদ্ধে মামলা তো দূরের কথা কোনো সাধারাণ ডায়েরিও (জিডি) করতে পারিনি।

প্রতারণা শিকার বালু ব্যবসায়ী ইউসুফ আলী সাহেদের কাছে পাবেন ৮০ লাখ টাকা। তিনি বলেন, আমি টাকা চাইতে এলে তার টর্চার সেলে নিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দিতো। কয়েকবার নির্যাতনও করেছে সে। জীবন বাঁচাতে চুপ থেকেছি।

সূত্র জানিয়েছে, প্রতারণা করতে সাহেদ ভ্যানচালক থেকে শুরু করে সরকারের বড় বড় কর্মকর্তা কাউকেই বাদ দেয়নি। বদলির কথা বলে পুলিশ কর্মকর্তার কাছ থেকেও টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। নারীদের ব্যবহার করে ফাঁসিয়েছেন অনেক কর্মকর্তাকে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচয়ই বেশি ব্যবহার করতেন সাহেদ। এছাড়াও তিনি কখনো মেজর, কর্নেল, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও রাজনৈতিক নেতা বলে প্রতারণা করে আসছিলেন।

এদিকে, সাহেদের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক। এরইমধ্যে তিন সদস্যে একটি দলও গঠন করা হয়েছে।

এদিকে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, সাহেদকে ধরতে পুলিশের সব কয়টি ইউনিট কাজ করছে। তাকে না ধরা পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে। আইজিপি বলেন, তাকে ধরা দিতেই হবে। বাইরে পালিয়ে যাওয়ার সব পথ বন্ধ। পাসপোর্ট জব্দ ও সব প্রবেশ পথে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, সাহেদকে ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সারাদেশে অভিযান পরিচালনা করছে। তাকে আত্মসমর্পণ করতে হবে। পালানোর সব পথ বন্ধ।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন