প্রতারক শাহেদ এখন পালিয়ে আছেন?

  14-07-2020 05:01PM

পিএনএস ডেস্ক:করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে চিকিৎসার নামে প্রতারণা এবং জালিয়াতির মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহেদ ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছেন এখনো। ভয়ংকর ‘সুশীল’ এই প্রতারককে গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, এক সপ্তাহ ধরে তার কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।

বিশ্ব প্রতারক শাহেদ গ্রেপ্তার না হওয়ায় একদিকে জনমনে তৈরি হচ্ছে নানা প্রশ্ন। অন্যদিকে শাহেদকে নিয়ে ও তার অবস্থান নিয়ে নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ছে। শাহেদ আত্মগোপন করার পর পরই গুঞ্জন ওঠে, ঢাকা থেকে পালিয়ে শাহেদ নিজ জেলা সাতক্ষীরায় এক আত্মীয়ের আশ্রয় নেন। এরপর তিনি কলারোয়া উপজেলার কেঁড়াগাছি ইউনিয়নের হঠাৎগঞ্জের সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন। তবে এর সত্যতা আইনশৃঙ্খলাবাহিনী নিশ্চিত করতে পারেনি।

এরই মধ্যে সোমবার গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে, শাহেদ এখন মৌলভীবাজারে অবস্থান করছেন। কুলাউড়া উপজেলার চাতলাপুর সীমান্ত দিয়ে তিনি ভারতে পালিয়ে যেতে পারেন।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, শাহেদ তার মোবাইল ফোনটি স্বল্প সময়ের জন্য খুলেছিলেন। মোবাইল ট্র্যাক করে দেখা গেছে তিনি মৌলভীবাজার জেলায় অবস্থান করছেন। তাই সোমবার বিকেল থেকে কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর ও শ্রীমঙ্গল উপজেলায় পুলিশি তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়। এ বিষয়ে শমশেরনগর পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক (তদন্ত) অরুপ কুমার চৌধুরী বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা গেছে- মো. সাহেদ চাতলাপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতের ত্রিপুরা প্রবেশ করতে পারেন। তাই তাকে ধরার জন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

শাহেদকে ধরতে সোমবার বিকেলে র‌্যাবের একটি টিম শ্রীমঙ্গল লেমন গার্ডেন, লাউয়াছড়া, কুরমা ও সন্ধ্যার পর চাতলাপুর সীমান্ত রোডেও অভিযান চালায়। এছাড়াও বিকেল থেকেই কমলগঞ্জের শমশেরনগরে পুলিশি তৎপরতা শুরু হয়। শমশেরনগর চৌমুহনা থেকে ভারতের ত্রিপুরাগামী সড়কের মুখে শমশেরনগর পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা দাঁড়িয়ে যানবাহন তল্লাশি চলে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান সারওয়ার বিন কাশেমের বলেন, সিলেট বা মৌলভীবাজারের সীমান্তে অভিযান চলছে বলে অনেকেই তার কাছে জানতে চেয়েছেন। র‌্যাব এমন কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযান পরিচালনা করেনি। নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে তারা তল্লাশি চালিয়েছে। প্রতারক শাহেদ গ্রেপ্তারের জন্য ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে র‌্যাবের একাধিক দল কাজ করছে।

করোনার ভুয়া সনদ দেওয়াসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে গত ৬ জুলাই রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযানের পর থেকেই আত্মগোপনে আছেন ওই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান মোঃ শাহেদ। তার বিরুদ্ধে র‌্যাবের মামলার পাশাপাশি প্রতারণার অভিযোগে আরও মামলা হয়েছে। এক ব্যবসায়ীর করা প্রতারণার দুটি মামলায় আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহসম্পাদক পরিচয়ে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে আসা সাহেদের রিজেন্ট হাসপাতালের জালিয়াতির বিষয়টি প্রকাশ্য হওয়ার পর এখন তার নানা অপকর্মের খবর বেরিয়ে আসছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক এরই মধ্যে শাহেদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে। দুদকও তার সম্পদের অনুসন্ধানে নেমেছে। তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

শাহেদকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান শাহেদকে খোঁজা হচ্ছে। তাকে আত্মসমর্পণ করতে হবে, অন্যথায় গ্রেফতার করা হবে। তার বিদেশ যাওয়ার সুযোগ নেই। তার পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে, বর্ডার যাতে ক্রস করতে না পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করি, শিগগিরই তাকে ধরতে সক্ষম হব।

এ প্রসঙ্গে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, শাহেদকে ধরতে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। গোয়েন্দারাও এ বিষয়ে তৎপর রয়েছে। শাহেদ গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন