সারা দেশের নৌ ধর্মঘট প্রত্যাহার

  23-10-2020 01:28AM

পিএনএস ডেস্ক : খাদ্যভাতা প্রদানসহ ১১ দফা দাবিতে চলমান ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছেন পণ্যবাহী নৌযান শ্রমিকরা। বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) সচিবালয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত বৈঠকে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মো. শাহ আলম ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।

শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ানের সভাপতিত্বে বৈঠকে সরকার, নৌযান মালিক ও শ্রমিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ১ দফা দাবি আদায়ে গত ২০ অক্টোবর রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘট শুরু হয়। বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের আওতাধীন আটটি সংগঠন এ ধর্মঘটের ডাক দেয়। মালিকরা মূলত খাদ্যভাতা (খোরপোষ ভাতা) দেয়ার দাবি মেনে নেয়ার প্রেক্ষাপটে নৌযান শ্রমিকরা ধর্মঘট থেকে সরে এসেছেন।

বৈঠকে নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি বলেন, আমরা যা পেয়েছি তা দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন। তারপরও দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা তা মেনে নিয়ে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিচ্ছি।

ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলম বলেন, তিন দিন ধর্মঘটের কারণে রাষ্ট্র বিব্রত হয়েছে, এজন্য আমরা দুঃখিত। শ্রমিকদের কাছে আমার আহ্বান, তারা যেন দ্বিগুণ উৎসাহে কাজ শুরু করেন।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার চেয়ারম্যান মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বলেন, শ্রমিক, মালিক ও সরকারের মধ্যে আলোচনায় সমঝোতা হয়েছে। আমরা চাই মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকুক।

শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘক্ষণ আলোচনার মধ্য দিয়ে নৌযান শ্রমিক ও শ্রমিকরা সমস্যা সমাধান করে ফেলেছেন। ‘মিয়া বিবি রাজি তো কিয়া কারেগা কাজী’। মিয়া-বিবি রাজি হয়ে গেলে মা-বাবা কী করে ধান-দুর্বা দিয়ে বরণ কুলা দিয়ে তাড়াতাড়ি ঘরে উঠিয়ে নেয়। আমরাও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ঐক্যমত পোষণ করছি। নেতৃবৃন্দ চলমান ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছেন। এই ধর্মঘট প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে জনজীবনে শান্তি ফিরে আসবে। মানুষের ভোগান্তির অবসার ঘটবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ১ অক্টোবর থেকে শূন্য টন থেকে এক হাজার টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন জাহাজে কর্মরত শ্রমিকরা মাসিক এক হাজার টাকা হারে খোরপোষ ভাতা পাবেন। এছাড়া এক হাজার এক টন থেকে এক হাজার ৫০০ পর্যন্ত ধারণক্ষমতার জাহাজের শ্রমিকরা মাসিক এক হাজার ২০০ টাকা এবং এক হাজার ৫০১ টন থেকে সর্বোচ্চ টন পর্যন্ত ধারণক্ষমতার জাহাজের শ্রমিকরা এক হাজার ৫০০ টাকা হারে মাসিক খোরপোষ ভাতা পাবেন বলে জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী। এ বিষয়ে নৌযান মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে চুক্তি হয়েছে বলেও জানান তিনি।

নৌ শ্রমিকদের ১১ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- বাল্কহেডসহ সব নৌযান ও নৌপথে চাঁদাবাজি-ডাকাতি বন্ধ করা, ২০১৬ সালে ঘোষিত গেজেট অনুযায়ী নৌযানের সর্বস্তরের শ্রমিকদের বেতন প্রদান, ভারতগামী শ্রমিকদের ল্যান্ডিং পাস এবং মালিক কর্তৃক খাদ্যভাতা প্রদান, সব নৌযান শ্রমিকের সমুদ্র ও রাত্রিকালীন ভাতা নির্ধারণ।

এছাড়া এনডোর্স, ইনচার্জ, টেকনিক্যাল ভাতা পুনর্নির্ধারণ; কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ ১০ লাখ টাকা নির্ধারণ; প্রত্যেক নৌশ্রমিককে মালিক কর্তৃক নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র ও সার্ভিস বুক প্রদান, নদীর নাব্যতা রক্ষা ও প্রয়োজনীয় মার্কা, বয়া ও বাতি স্থাপন; মাস্টার-চালক পরীক্ষা, সনদ বিতরণ ও নবায়ন, বেআইনি নৌচলাচল বন্ধ করা; নৌ পরিবহন অধিদফতরের সব ধরনের অনিয়ম ও শ্রমিক হয়রানি বন্ধ এবং নৌযান শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিও জানিয়েছেন তারা।

বৈঠকে শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব কে এম আব্দুস সালাম, শ্রম অধিদফতরের মহাপরিচালক এ কে এম মিজানুর রহমান, নৌ পরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালক কমোডর আবু জাফর মো. জালাল উদ্দিন, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেকসহ নৌযান মালিক ও শ্রমিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন