মাদক-সন্ত্রাস বন্ধে ঢাকা-উদ্যানে বসছে ৩০০ সিসি ক্যামেরা

  29-10-2020 06:45PM

পিএনএস ডেস্ক : ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) বর্ধিত এলাকার একটি ঢাকা উদ্যান। করপোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের অধিভুক্ত এলাকাটিতে মাদক-বাণিজ্য ও চাঁদাবাজি নিয়মিত বিষয়। রয়েছে দেশীয় অস্ত্রের মহড়াও দেখায় গ্যাং কালচার করা কিশোর-যুবকরা। তুলনামূলক নিম্নআয়ের মানুষের বসবাস ঢাকা উদ্যান এলাকায়। ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ২৫টি পোশাক কারখানা রয়েছে এলাকাটিতে। বেতনের সময় তারা শিকার হচ্ছেন ছিনতাইয়ের। এসব কারখানায় কাজ করা নারী শ্রমিকরাও নিয়মিত যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ অহরহ।

সকল সমস্যা সমাধানে এলাকাটিতে নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি হয়ে পড়েছে। সকল দিক বিবেচনায় পুরো এলাকায় সিসি ক্যামেরা বসাতে যাচ্ছেন হাউজিং মালিক সমিতির সভাপতি মনিরুজ্জামান মনির। প্রায় কোটি টাকা খরচে তিন শতাধিক ক্যামেরা বসানো হবে পুরো এলাকায়। যার ব্যয়ভার বহন করছেন তিনি নিজেই।


এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঢাকা উদ্যানকে নিরাপদ ও সকলের কাছে সুন্দর একটি আবাসিক এলাকা হিসেবে তুলে ধরতে চাই। যার জন্য আমি নিজ উদ্যোগে হাউজিংয়ের প্রতিটি রাস্তা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করার জন্য সিসি টিভি ক্যামেরা স্থাপন করার উদ্যোগ নিয়েছি। এরই মধ্যে পরিকল্পনার কাজ শেষ। সিসি ক্যামেরা লাগানোর জন্য তার টানা হচ্ছে। পুরো ঢাকা উদ্যানে ৩০০ অত্যাধুনিক সিসি টিভি ক্যামেরা লাগানো হবে।‘

পুরো এলাকার নিরাপত্তার বিষয়টি একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এতে আমাদের প্রায় ১ কোটি টাকা খরচ হবে। তবুও আমি এটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে করবো। রাজধানীর মধ্যে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার পরে ঢাকা উদ্যান হাউজিংই হবে শতভাগ সিসি টিভি ক্যামেরার আওতায় আসা দ্বিতীয় আবাসিক হাউজিং।‘

কোটি টাকা খরচ করে ক্যামেরা স্থাপনের কারণ বর্নণা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘মোহম্মদপুর ও আদাবরে এলাকা অনেকটা অপরাধ প্রবণ। এছাড়া দুই থানার সীমানা এই এলাকায়। ফলে অপরাধীরা বিভিন্ন অপরাধ ঘটিয়ে সরে পড়ে যেতে পারে। আর এই এলাকায় অধিকাংশ বাসিন্দা নিম্নবিত্ত। যাদের বেশির ভাগের পেশা ছোটখাটো বিভিন্ন চাকরি। আমাদের আশে পাশের কয়েকটি এলাকা মিলিয়ে বেশ কিছু গার্মেন্টস রয়েছে। এই সকল গার্মেন্স ৯০ ভাগ কর্মীই নারী। বিভিন্ন সময়ে আমার কাছে অভিযোগ আসে। গার্মেন্টসের মহিলাদের ধরে হেনস্থা করা। বেশির ভাগ সময়ে ছিনতাইয়ের শিকার হন। ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা বা কম দামের একটা মোবাইল তার কাছে অনেক দামি বা অনেক টাকা।‘

কিশোর গ্যাংয়ের যে ক’টি সক্রিয় গ্রুপ এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলার রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে তার বেশির ভাগই রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায়। আর মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান এলাকায় এ দৌরাত্ম্য এখন প্রায় লাগামহীন। প্রতিদিনই এসব গ্যাং কালচারে জড়িত ছেলেরা জড়িয়ে পড়ছে নানান অপরাধমূলক কাজে। আর তাদের বাধা দিতে গেলে ঘটছে আরেক অঘটন, আবার একটি গ্যাং অপর একটি গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে সহিংসতায়। সমস্যাটিতে বড় করে দেখছেন ঢাকা উদ্যান হাউজিং মালিক সমিতির এ সভাপতি।

তিনি বলেন, ‘এই এলাকায় বিভিন্ন সময়ে দেখা গেছে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত। বিভিন্ন ঘটনা তারা ঘটিয়েছে। কিন্তু তারা কোথা থেকে এসে অস্ত্রের মহড়া চালিয়ে আবার কোথায় চলে যায় কেউ বলতে পারে না। আমরা এই বিষয়েগুলো বিবেচনায় নিয়ে ঢাকা উদ্যানের প্রতিটি সড়কে বাতি জ্বালানো নিশ্চিত করেছি। এমন কি সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নিয়মিত লোক এসে সব লাইট দেখে যান। কোনোটি নষ্ট থাকলে ঠিক করে দেন। সিসি ক্যামেরা লাগানো হলে এ উৎপাত কমে যাবে।‘

সিসি ক্যামেরা ছাড়াও স্থানীয় নানা উন্নয়নে কাজ করছেন তিনি। ‘বেড়িবাঁধের ঢাকা উদ্যান অংশে জ্যামের কারণে মোহাম্মদপুর থেকে গাবতলী পর্যন্ত যানজটের সৃষ্টি হয়। ঢাকা উদ্যানের মূল সড়কটি ৪০ ফিটের। কিন্তু গাড়ির অতিরিক্ত চাপে দুই পাশে গাড়ি রাস্তা পার হতে গিয়ে এই যানজটের সৃষ্টি। এই যানজট কমানোর জন্য বেঁড়িবাধের পাশের খালি যায়গাটি ব্যবহার করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু হাউজিং কিছু লোক অবৈধভাবে দোকান তুলে ভাড়া দিয়ে রেখেছে। আমি ঢাকা উদ্যান হাউজিংটি একটি মডেল এবং আধুনিক আবাসিক হাউজিং করতে চাই কিন্তু হাউজিংয়ের কিছু লোক সহযোগিতা করছে না।‘

ঢাকা উদ্যান মলিক সমিতির বয়স ১৯ বছর। ২০০০ সালে প্রয়াত জহির হাজী এই সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। তিনি ২০১৪ সালে মারা যান। এরপর মনিরুজ্জামানের চাচা সভাপতি হন কিন্তু তিনিও হাউজিং এর জন্য কিছু করেননি। এখানে যারা মালিক সমিতির নেতৃত্বে ছিলেন তারা কেউই হাউজিংয়ের জন্য কাজ করেননি বলে দাবি মনিরের।

তিনি বলেন, ‘নিজেদের পকেট ভারী করার দিকে ব্যস্ত ছিলেন তারা। এমন কি সর্বশেষ কমিটিও দুর্নীতির দায়ে বহিষ্কৃত হয়েছে। এখন আমি মালিক সমিতির দায়িত্ব নিয়ে যখন হাউজিংয়ের ‍উন্নয়নে কাজ শুরু করেছি তখনই কিছু লোক আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার শুরু করছে। তবুও আমি থেমে থাকব না। যত বাধাই আসুক আমি থেমে থাকছি না। ঢাকা উদ্যানের প্রতিটি সড়কের ভাঙ্গা অংশ মেরামত করছি। এমন কি ঢাকা উদ্যানের প্রতিটি সড়কে প্রতিরাতে ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করা হচ্ছে। আমাদের প্রত্যয় বাসিন্দাদের একটি সুন্দর ও ধুলা-বালু মুক্ত হাউজিং উপহার দেওয়া।‘

ঢাকা উদ্যান এলাকা সিসি টিভির আওতায় আসার বিষয়টিকে ভালো উগ্যোগ বলে সাধুবাদ জানান মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ। তিনি বলেন, এটা খুবই ভালো বিষয়। ব্যক্তি উদ্যোগে এলাকার নিরাপত্তা বাড়াতে সিসিটিভি যে কেউ লাগাতে পারেন। এটা সারাদেশেই হচ্ছে। ঢাকা উদ্যানে সিসিটিভি ক্যামেরা বসলে ভালো হবে। যে কোনো অপরাধ ঘটলে আমরা দ্রুত আপরাধীকে ধরতে পারব। তবে পুরো বিষয়টা আমার জানা নেই। আমি জানার চেষ্টা করব। তাদের এ উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাই।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন