ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে

  29-10-2020 11:53PM

পিএনএস ডেস্ক : স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, হাসপাতালগুলোতে এখন ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ২৮ জন। আর ২৮ অক্টোবর ২৪ ঘন্টায় ভর্তি হয়েছেন ১০ জন। এরা সবাই ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

ঢাকা ও ঢাকার বাইরে মোট ৪১টি হসপাতাল ডেঙ্গু রোগী সম্পর্কে নিয়মিত আপডেট দেয়। আর ১ জানুয়ারি থেকে এপর্যন্ত হাসপাতালগুলোতে মোট ৫৯৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। এই সময়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডেঙ্গুতে এক জনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছে। মোট চারজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন সন্দেহ করা হলেও একজনের ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে বলে পর্যালোচনায় নিশ্চিত হতে পেরেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায় জানুয়ারি মাসে হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগী ছিলো ১৯৯ জন। কিন্তু গত বছর জানুয়ারি মাসে হাসপাতালে কোনো ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হননি। এবছরের ফেব্রুয়ারি মার্চেও ডেঙ্গু রোগী গত বছরের চেয়ে বেশি ছিলো। করোনার কারণে লকডাউন শুরু হলে ডেঙ্গু রোগী কমতে থাকে। এই অবস্থা চলতে থাকে জুলাই পর্যন্ত। আগষ্টে ডেঙ্গু রোগী বেড়ে যায়। ওই মাসে মোট রোগী ৬৮ জন। একজন মারা যায়। সেপ্টেম্বরে রোগী কিছুটা কমে। ওই মাসে মোট রোগী ৪৭ জন। কিন্তু অক্টোবরে রোগী বেশ বেড়ে যায়। অক্টোকরের ২৮ দিনে মোট ১৩১ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। এরমধ্যে শেষ সাত দিনে ৫৫ জন।

জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুর মৌসুম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই সময়ে বৃষ্টিপাতের কারণে স্বচ্ছ পানি জমে্ আর তাতে ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশার প্রজনন হয়। কিন্তু এই সময়ে বাংলাদেশে এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা যায়নি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, এবার অক্টোবর মাসে অস্বাভাবিক বৃষ্টি হয়েছে। সে কারণে এডিস মশার প্রজনন বেড়ে গেছে। এটা হয়তো একটা কারণ। কিন্তু যে সময়ে ডেঙ্গু বেশি হয় সেই সময়ে করোনার কারণে লকডাউন ছিলো। ফলে রোগীরা হাসপাতালে যায়নি বা গেলেও ভর্তি হতে পারেনি। ফলে ভর্তি রোগী ওই সময়ে অনেক কম। কিন্তু এখন লকডাউন উঠে গেছে। হাসপাতালের পরিস্থিতিও স্বাভাবিক হচ্ছে। ফলে ভর্তি রোগী বাড়ছে।

তার মতে, এবছর করেনার কারণে ডেঙ্গুর প্রকৃত চিত্র পাওয়া যায়নি।

গত বছর বাংলাদেশে ডেঙ্গু ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল। মোট আক্রান্ত হয়েছিল এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন। সরকারি হিসাবে মারা গেছে ১৭৯।

কবিরুল বাশার বলেন, গত বছরের তুলনায়ও এবছর প্রথম তিন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেশি ছিলো। এপ্রিল থেকে করোনার কারণে পরবর্তী পরিস্থিতি আর বোঝা যায়নি।

চলতি অক্টোবরে এডিস মশার ঘনত্ব নিয়ে ঢাকার ছয়টি এলাকায় কাজ করেছেন কবিরুল বাশার। এলাকাগুলো হলো: উত্তরা, গুলশান, শাহবাগ, শাখারীবাজার, গোড়ান ও খিলগাঁও৷ তাতে গত বছরের অক্টোবরের চেয়ে ওইসব এলাকায় তিনি এডিস মশার ঘনত্ব বেশি পেয়েছেন বলে জানান।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যালেরিয়া ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ড. আফসানা আলমগীর খান অক্টোবর মাসে ডেঙ্গু রোগী বেড়ে যাওয়ার জন্য অতিবৃষ্টিকেই দায়ী করেন। তবে তিনি বলেন, অনেকেই ঘরে বসে নিজেরাই নিজেদের চিকিৎসা করছেন যা আতঙ্কের কারণ। কেউ ডেঙ্গুকে করোনা মনে করছেন। আবার কেউ করোনাকে ডেঙ্গু মনে করছেন। করোনার সময়ে নানা কারণেই ঘরে বসে চিকিৎসার প্রবণতা বাড়ছে।

তিনি বলেন, এখন হাসপাতাল পরিস্থিতি ভালো। ডেঙ্গুর চিকিৎসারও সুব্যবস্থা আছে। তাই যাদেরই লক্ষণ দেখা যাবে তাদের হাসপাতালে যাওয়া উচিত।

তার মতে নভেম্বর, ডিসেম্বরে বৃষ্টি সাধারণত বৃষ্টি হয়না। ডেঙ্গুও কমে যাবে।

এদিকে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগ কিছু লোক দেখানো তৎপরতার মধ্যেই সীমিত আছে। উত্তরে এতদিন প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাই ছিলো না। তারা পরিস্থিতি খারাপ দেখে বৃহস্পতিবার ডেঙ্গু নিয়ে একটি জরুরি বৈঠক করেছেন।

সূত্র: ডয়চে ভেলে

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন