ওয়াসার পানিতে মিলেছে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী রাসায়নিক

  24-01-2021 05:31AM

পিএনএস ডেস্ক: রাজধানীর ওয়াসার কলের পানিতে ক্যান্সারসহ মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর মারাত্মক সব রাসায়নিক উপাদানের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ক্ষতিকারক এসব উপাদানের মধ্যে আছে- টেক্সটাইল, জাহাজ ভাঙারি, তেল পরিশোধন, প্রসাধন সামগ্রী, পরিষ্কারক এবং শিল্প-কারখানায় ব্যবহৃত বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ। দূষিত এই পানি গ্রহণ মারাত্মক স্বাস্থ্য বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশ্বব্যাপী শিল্প উৎপাদনে বহুল ব্যবহৃত দুই রাসায়নিক যৌগ হল পারফ্লুরোঅকটানোয়িক এসিড (পিএফওএ) এবং পারফ্লুরোঅক্টেন সালফোনিক এসিড (পিএফওএস)। সাম্প্রতিককালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় সারফেস বা পৃষ্ঠজল এবং কলের পানি- উভয় জায়গাতেই উপাদান দুটির উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

বিশেষজ্ঞরা নগরের পানি সরবরাহ ব্যবস্থা থেকে দ্রুততার সাথে ক্ষতিকর পদার্থগুলো অপসারণের পরামর্শ দিয়েছেন। তা না হলে, বিষাক্ত এই পানি মানবদেহে প্রাণঘাতী প্রভাব ফেলতে পারে।

ঢাকার লালমাটিয়া, বনানী এবং সাভারের পানপাড়া বাজার থেকে ২০১৯ সালে নমুনা হিসেবে পানি সংগৃহীত হয়। পরবর্তীতে বেসরকারী সংস্থা এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ইএসডিও) তত্ত্বাবধানে যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন ইউনিভার্সিটির গবেষণাগারে নমুনা পরীক্ষিত হয়। সম্প্রতি ‌‌'পিএফএএস বাংলাদেশ সিচুয়েশন রিপোর্ট ২০২০' গবেষণার প্রতিবেদনে ভয়ংকর এসব তথ্য উঠে এসেছে।

স্টকহোম কনভেনশন পার্সিস্ট্যান্স অর্গানিক পলুট্যান্টস (পিওপিএস) রিভিউ কমিটি ২০১৭ সালে পারফ্লোরোএক্টনোইক এসিডের সঙ্গে মানুষের শরীরে মারাত্মক অসুস্থতা-যেমন, উচ্চ কোলস্টরেল, আলসার, থাইরয়েডের অসুখ, জননতন্ত্রের ক্যান্সার, কিডনি ক্যান্সার, গর্ভধারণ সংক্রান্ত উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদির সম্পর্ক এবং বিভিন্ন প্রতিষেধক এর বিরুদ্ধে কতটা অকার্যকর সেটি প্রকাশ করেছিলো।

পারফ্লোরোএক্টনোইক এসিড (পিএফওএ) এবং পারফ্লোরোএক্টেন সালফোনিক এসিডের (পিএফওএস) পিএফএএস গোত্রভুক্ত অন্যান্য রাসায়নিকের সঙ্গে একত্রে মানব স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

২০১৯ সালে ঢাকার লালমাটিয়া, বনানী এবং সাভারের পানপাড়া বাজার থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করে এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশনের (এসডো) তত্ত্বাবধানে যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়।

পিএফওএ ও পিএফওএস মূলত পলিফ্লুরো আলকালাইল সাবস্ট্যান্সের (পিএফওএস) গোত্রভুক্ত রাসায়নিক। পানিতে দ্রুত মিশে যাওয়া এবং সব ধরনের প্রাকৃতিক পরিস্থিতি সহনীয় হওয়ার ফলে সর্বত্রই এই রাসায়নিকের উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়।

একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী লালমাটিয়া থেকে সংগৃহীত নমুনায় প্রতি ট্রিলিয়নে (পিপিটি) ৮ পিপিটি, পানপাড়া এলাকার পানিতে ৬.৮ পিপিটি এবং বনানী এলাকার পানিতে ৫.১৮ অংশ পিপিটি পিএফওএ’এর উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। অপরপক্ষে ২.৩ পিপিটি পিএফওএস লালমাটিয়াতে, ২.৬ পিপিটি পানপাড়ায় এবং ৫.১৮ পিপিটি বনানীর পানির নমুনায় শনাক্ত হয়েছে।

এসডোর রিপোর্টে ঢাকা ও এর আশেপাশের এলাকার জলাভূমিতে পিএফএএস গোত্রের ক্ষতিকর আরো ১৩ প্রকারের রাসায়নিকের উপস্থিতির বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ক সংস্থা এ জাতীয় রাসায়নিকের নিরাপদ গ্রহণমাত্রা ৭০ পিপিটি নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রের পৃথক রাজ্যের এসব রাসায়নিক গ্রহণমাত্রার বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রার নির্দেশনা রয়েছে।

পিএফওএস এবং এই গোত্রের রাসায়নিকের বিভিন্ন খাতে বহুবিধ ব্যবহার রয়েছে। অগ্নির্বাপক যন্ত্রে ব্যবহৃত ফোম, কার্পেট, চামড়া শিল্প, আসবাব মোড়কজাত করার কাজ,কারখানা ও বাড়িঘর পরিষ্কার করার রাসায়নিক, কীটনাশক, ছবি তোলার সরঞ্জামে ব্যবহার, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিতে, হাইড্রোলিক আঠা, ক্যাথেটার এবং ধাতব প্লেটিংসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার বিষয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

পিএফওএ এর সমধর্মী রাসায়নিক যেমন সাইড চেইন ফ্লুরিনেটেড পলিমার বস্ত্রশিল্পে কাপড়ের স্থায়িত্ব বৃদ্ধির কাজে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশে গার্মেন্টস শিল্পের বিকাশের ফলে পানিতে পিএফওএ ও পিএফওএস এর উপস্থিতি ক্রমশ বৃদ্ধি পাবার সম্ভবনা তৈরি হয়েছে।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন