লকডাউন আমাদের দেশের জন্য বিপদজনক!

  15-04-2021 08:25PM

পিএনএস ডেস্ক : করোনাভাইরাসের প্রথম ঢেউ চলার সময়েই আক্রান্ত হয়েছিলাম। রক্তে ইনফেকশন হয়েছিল। হায়াত ছিল। ডাক্তার তুষার মাহমুদের চিকিৎসা সেবার উছিলায় বেঁচে আছি। সেই দিনগুলোর কষ্টের কথা বলে বুঝানো যাবে না। এখনো করোনার দীর্ঘমেয়াদী সমস্যায় ভুগছি। অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ভুলে যাই। ঘুম হয় না। খেতে ভালো লাগে না। মাঝে মাঝে হৃদপিণ্ডের স্পন্দন কমে যায়। টেনশন একদমই নিতে পারি না। এক ধরনের ডিপ্রেশন কাজ করে। করোনা থেকে বেঁচে থাকা জীবন যেনো শরীরটাকে সারক্ষণ হুইল চেয়ারে বসিয়ে ঠেলে ঠেলে চলার মতো।

করোনা শরীরে বাসা বেঁধে বিদায় নিয়েছে দীর্ঘদিন হলো। টিকা নিয়েছি। ভাবছেন, আর মনে হয় আমার করোনা হবে না। অনেকে নিজেকে নিরাপদ মনে করছেন। বেশিরভাগ মানুষই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে না। বিনা প্রয়োজনে বাইরে যাচ্ছেন। মাস্ক পরছেন না। স্যানিটাইজার ব্যবহার করছেন না। মানছেন না সামাজিক দূরত্ব। ফলে নিজেরা নতুন করে ভাইরাস-সংক্রমণের শিকার হচ্ছেন। আবার তাদের থেকে আন্যরা আক্রান্ত হচ্ছেন। এমনকি নিজের পরিবারের সদস্যরাও আক্রান্ত হচ্ছে।

একটা রাত বা একটা দিন কুর্মিটোলা হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, মুগদা হাসপাতালে থেকে নিজের চোখে দেখে আসুন পরিস্থিতি। শুনে আসুন বাঁচার জন্য করোনা রোগীর আকুতি আর আপনজনের আহাজারি। জীবিত মানুষগুলো মৃত্যুর সংবাদ শুনতে শুনতে আর চোখের সামনে একটার পর একটা প্রজন্মকে চলে যেতে দেখে মানুষ ভীত হয়ে পড়ছে, ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছে, মনের দিক দিয়ে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। সেখানে গেলে বুঝতে পারবেন সুস্থ থাকা, বেঁচে থাকার মূল্য। বুঝতে পারবেন নিজের অজান্তে বুঝে না বুঝে কত ভুল আমরা করেছি বা করছি।

বিশ্বে করোনায় মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২৯ লাখ ৫৮ হাজার। আক্রান্ত হয়েছে ১৩ কোটি ৭২ লাখেরও বেশি মানুষ।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্যানুযায়ী, মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৮ হাজার ৭৬১ জন এবং নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৫ লাখ ৮৮ হাজার ২৭১ জন। এ নিয়ে বিশ্বে মোট করোনায় মৃত্যু হয়েছে ২৯ লাখ ৫৮ হাজার ৬২৯ জনের এবং আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ কোটি ৭২ লাখ ৫২ হাজার ৬২১ জন। এ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১১ কোটি ৪ লাখ ৩৩ হাজার ১৬৩ জন।

করোনা নিয়ে একটার পর একটা দুঃসংবাদ দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। আবার আশার কথাও শুনাচ্ছে তারা। করোনা মোকাবিলায় দ্বিধা এবং জটিলতার অর্থ হলো এই মহামারি অবসান হওয়ার এখনও অনেক বাকি। তবে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রমাণিত নিয়মগুলো অনুসরণ করা গেলে এই মহামারি কয়েক মাসের মধ্যে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব বলে মনে করে ডব্লিউএইচও।

সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র প্রধান ড. টেড্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমরাও সমাজ এবং অর্থনীতি পুনরায় খোলা দেখতে চাই। দেখতে চাই ভ্রমণ ও বাণিজ্য আবারও সচল হচ্ছে। কিন্তু এই মুহূর্তে অনেক দেশেই নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রগুলোতে উপচে পড়ছে রোগী। আর মানুষ মারা যাচ্ছে। যা সম্পূর্ণভাবে এড়ানো সম্ভব নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘করোনা মহামারি অবসানের এখনও অনেক বাকি। কিন্তু আমাদের আশাবাদী হওয়ার বহু কারণ রয়েছে। এই বছরের প্রথম দুই মাসে আক্রান্ত ও মৃত্যু কমে যাওয়ার মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়েছে এই ভাইরাস এবং এর ভ্যারিয়েন্টগুলো থামানো সম্ভব।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র করোনা বিষয়ক টিম লিডার মারিয়া ভান কেরকোভ ওই সংবাদ সম্মেলনে জানান, মহামারি খুব বেশি হারে বাড়ছে। গত সপ্তাহে আক্রান্ত বেড়েছে নয় শতাংশ। আর বিগত টানা সাত সপ্তাহ ধরে আক্রান্তের হার বাড়ছে। একই সময়ে মৃত্যু বেড়েছে পাঁচ শতাংশ।

সংস্থা প্রধান বলেন, কয়েকটি দেশে সংক্রমণ বাড়তে থাকলেও রেস্টুরেন্ট, নাইট ক্লাবগুলো পূর্ণ থাকছে, মার্কেটগুলোও খোলা থাকছে। আর এসব স্থানে সমবেত হওয়া মানুষের খুব অল্প সংখ্যকই সতর্কতা অবলম্বন করছে।

লকডাউন আমাদের দেশের জন্য বিপদজনক। মধ্যম আয়ের দেশ হলেও বাস্তবতা ভিন্ন। লকডাউন মূলত সেই সকল দেশে চলে যেসব দেশ অর্থ আর খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। যে দেশের সরকার লকডাউনের সময় ঘরে ঘরে খাদ্য অর্থ পৌঁছে দিতে পারবে। লকডাউনের ফলে কর্মসংস্থনের কোন ক্ষতি হবে না।

লকডাউন দিয়ে আমাদের মতো দেশে করোনাভাইরাস কখনোই কমানো, দমানো ও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। যতক্ষণ মানুষ সচেতন না হবে। দরকার জনসচেতনতা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। মানুষ সচেতন হলে, নিয়মিত মাস্ক পরিধান করলে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে লকডাউনের কোন দরকার নেই।

সুতরাং আমরা যারা আপামর সাধারণ মানুষ, আমাদের উচিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, নিয়মিত মাস্ক পরিধান করা এবং স্বাস্থ্য সচেতন থাকা। দরকার হলে সরকারের উচিত প্রশাসনকে কঠোর হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া। যাতে সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বাধ্য হয়। যদি আমাদের মাঝে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রবণতা দেখা যায়, তাহলে হয়তো সরকার লকডাউনের পথ থেকে সরে দাঁড়াবে।

না হয় এই লকডাউনই হবে করোনার থেকে ভয়ানক, লকডাউন ভাইরাসে পরিণত হবে। লকডাউনে করোনাভাইরাস কমবে না, একের পর এক কর্মসংস্থান বন্ধ হতে থাকবে। মানুষ করোনায় মরবে, না খেয়েও মরবে।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন