ভাসানচর নিয়ে আল-জাজিরায় প্রতিবেদন

  20-04-2021 12:12PM

পিএনএস ডেস্ক: কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা টিভিতে গত ১ ফেব্রুয়ারি “অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার’র মেন” (ALL THE PRIME MINISTER'S MEN) শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন সম্প্রচার হয়। বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে প্রতিবেদনটিকে ‘ভিত্তিহীন ও অপপ্রচারমূলক’ দাবি করে প্রতিবাদ জানয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিবৃতিতেও প্রতিবেদনটির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়ে।

সেই আল-জাজিরা এবার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নতুন আশ্রয়স্থল ভাসানচর নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

ভাসানচলে বিভিন্ন এনজিও রোহিঙ্গাদের মানবিক সেবা দিচ্ছে। গেল সপ্তাহে জাতিসংঘের কারিগরি দলও তাদের প্রাথমিক প্রতিবেদনে ভাসানচর নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেছে। ভাসানচর ঘুরে এসে পশ্চিমা রাষ্ট্রদূতেরাও সন্তোষজনক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

কিন্তু গতকাল সোমবার (১৯ এপ্রিল) আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ত্রাণ সংস্থাগুলো ওই দ্বীপের ঝুঁকির ব্যাপারে সতর্ক করেছে।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনা নিপীড়ন ও গণহত্যার মুখে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা কক্সবাজার ও এর আশপাশের অঞ্চলসমূহে আশ্রয় নেয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গার একটি বড় অংশকে নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তর করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েক হাজার রোহিঙ্গাকে সেখানে নেয়া হয়েছে।

সেখানে পরিবেশ-পরিস্থিতি ও স্থানান্তরিত রোহিঙ্গারা কেমন সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে, তা দেখতে গেল ১৭ মার্চ প্রথমবার ভাসানচরে সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন জাতিসংঘের ১৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল।

কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির ও এর বাইরে অবস্থান নিয়ে থাকা প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে নিয়ে সৃষ্ট সামাজিক সংকটের প্রেক্ষাপটে দুই বছর আগে তাদের একটি অংশকে (প্রায় ১ লাখ) নোয়াখালীর হাতিয়ার কাছে মেঘনা মোহনার দ্বীপ ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেয় সরকার।

বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ২৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে মোটামুটি ১৩ হাজার একর আয়তনের ওই চরে ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করে ১ লাখের বেশি মানুষের বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন বা কক্সবাজারের ওপর থেকে চাপ কমাতে তাদের একাংশ সাময়িকভাবে অন্যত্র স্থানান্তরের বিরোধীদের নানা ধরনের স্বার্থ রয়েছে। আন্তর্জাতিক অনেক এনজিওর সদস্যরা কক্সবাজারে কাজ করার ক্ষেত্রে ঝুঁকি ভাতা পায়। ভাসানচরে স্থানান্তরিত রোহিঙ্গাদের সেবা দিতে গিয়ে তারা সেই ভাতা সুবিধা পাবে কিনা, তা নিয়ে তাদের ভাবনা আছে।

তাছাড়া ভূ-রাজনৈতিক কারণেও স্বার্থাণ্বেষী অনেক মহল কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বা অন্যত্র স্থানান্তরে সক্রিয় সহযোগিতা করছে না। এর এসব মহলই রোহিঙ্গাদের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বাংলাদেশ সরকারের বিপুল অর্থ ঢেলে ভাসানচরকে বাসযোগ্য করার উদ্যোগের সমালোচনা বা বিরোধিতা করছে।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ‘ভাসানচর সরেজমিনে ঘুরে আসা জাতিসংঘের প্রতিনিধিদল সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারকে প্রাথমিক একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। ওই প্রতিবেদন বেশ ইতিবাচক।’

তিনি বলেন, ‘আশপাশের দ্বীপগুলোর চেয়েও ভাসানচর নিরাপদ। ব্রিটিশ একটি প্রতিষ্ঠানের পরামর্শ অনুযায়ী ওই দ্বীপের বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। সেটিকে আরও উন্নত ও উঁচু করার কাজ চলছে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের আমরা কক্সবাজারে, নোয়াখালীর ভাসানচরে, বরিশালে না অন্য কোথাও রাখলাম সেটি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর দেখার বিষয় নয়। তাদের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা বলা আছে, তারা বাংলাদেশে আশ্রিতদের সহায়তা দেবে। সেখানে নির্দিষ্ট কোনও স্থানের আশ্রিতদের কথা লেখা নেই।’

ড. মোমেন আরও বলেন, ‘মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলো ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের সেবা না দিলে আমরা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অনুপাতে ভাসানচরের রোহিঙ্গাদের জন্য তহবিলের ভাগ চাইবো। কারণ তারা রোহিঙ্গাদের দেখিয়েই এই তহবিল সংগ্রহ করে।’

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সেনা নিপীড়ন, গণধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াও ও গণহত্যার মুখে নতুন করে ৭-৮ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত ও সাগর পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে আশ্রয় নেয়। এরপর বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে দফায় দফায় প্রতিশ্রুতি দিয়ে এবং আন্তর্জাতিক চাপের মুখেও নিজেদের নাগরিকদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিচ্ছে না মিয়ানমার।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন