সীমান্তবর্তী হাসপাতালে সক্ষমতা বাড়াতে হবে

  10-06-2021 10:19AM


পিএনএস ডেস্ক: ঈদের পর বুধবার সারা দেশে করোনা শনাক্ত ছিল সর্বোচ্চ দুই হাজার ৫৩৭ জনের মধ্যে। অন্যদিকে গতকাল করোনায় মারা গেছে ৩৬ জন। করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের (ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট) কমিউনিটি সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণেই হঠাৎ একদিনে আড়াই হাজারের ঘর অতিক্রম করেছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।

আইইডিসিআরের তথ্য অনুসারে এমন কিছু মানুষের নমুনায় ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে যাদের ভারতে ভ্রমণ করার ইতিহাস নেই। প্রথম দিকে বিপজ্জনক এই ভ্যারিয়েন্টের অস্তিত্ব কেবল ভারতফেরত আক্রান্তদের মধ্যেই পাওয়া গেছে। কিন্তু এখন রাজধানীতেও চলে এসেছে ভারতীয় করোনার ধরন। জিনোম সিকোয়েন্স আরো বাড়ানো হলে আরো বেশি ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের অস্তিত্ব পাওয়া যেত বলে চিকিৎসকেরা মনে করছেন।

করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরনটি ইউকের কেন্ট করোনা ধরনের চেয়েও ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ দ্রুততার সাথে মানুষকে আক্রান্ত করে থাকে। ফলে করোনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে এখনকার চেয়ে আরো বেশি টেস্ট করতে হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। গতকাল বুধবার সকাল পর্যন্ত পূর্বের ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ২০ হাজার ৫৮৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। নমুনা পরীক্ষা সাপেক্ষে গতকাল করোনা শনাক্তের হার ছিল ১২.৩৩ শতাংশ। গত মঙ্গলবার শনাক্তের হার ছিল ১২.১২ শতাংশ। চিকিৎসকরা বলছেন, র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট বেড়ে যাওয়ার কারণে আরো অনেক বেশি নমুনা একদিনে পরীক্ষা করা সম্ভব। যত বেশি নমুনা পরীক্ষা করা যাবে তত বেশি সংক্রমিতদের শনাক্ত করা সম্ভব।

ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট নিয়ন্ত্রণে সীমান্ত সংলগ্ন হাসপাতালগুলোর করোনা চিকিৎসার সক্ষমতা বাড়াতে হবে বলে অভিমত প্রকাশ করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা: মোজাহেরুল হক। তিনি বলেন, ভারত থেকেই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তরা আসছে বেশি। ফলে বাংলাদেশের সীমান্তসংলগ্ন সবগুলো উপজেলা হাসপাতাল ও অন্যান্য হাসপাতালের করোনা চিকিৎসার সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এ ছাড়া যেখানে সংক্রমণের সংখ্যা বেশি সেখানে অঞ্চলভিত্তিক লকডাউনে যেতে হবে।

তিনি বলেন, করোনায় অপেক্ষাকৃত কম বয়সীদেরও আক্রান্ত করে কিন্তু এদের মৃত্যু হয় না। মোট জনসংখ্যার যে ২০ শতাংশের বয়স ৬০’র ঊর্ধে তাদের বেশি সমস্যা হয় এবং এ বয়সীদের মধ্যেই মৃত্যু বেশি। এ বয়সী লোকদের সংক্রমণের সাথে সাথে চিকিৎসা শুরু করে দিতে পারলে তাদের নিরাপদ করা সম্ভব যদি উপজেলা হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করা হয় এবং অক্সিজেন ব্যবহারের জন্য অক্সিজেন মাস্ক ও হাইফ্লো নেজাল ক্যানোলার ব্যবস্থা করা যায়। কারণ এখনকার করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে ফুসফুসের ক্ষতি হতে শুরু করে। ফলে আক্রান্ত রোগীর মধ্যে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। সে জন্য শুরু থেকেই চিকিৎসা শুরু করে দিতে পারলে বৃদ্ধ মানুষগুলোকে বাঁচিয়ে রাখা যায়। এ জন্য উপজেলা হাসপাতালগুলোকে শুধুমাত্র অক্সিজেন, মাস্ক ও নেজাল ক্যানোলা দিয়ে সজ্জিত করলেই হবে।

অধ্যাপক মোজাহেরুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী অঙ্গীকার অনুযায়ী জেলা সদরের হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ, এইচডিইউ এবং ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা করতে পারলে জটিল রোগীগুলোকে সেখানে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তোলা সম্ভব। সীমান্ত এলাকার হাসপাতালগুলোতে এই ব্যবস্থাগুলো হয়ে যাওয়ার পর পর্যায়ক্রমে দেশের অন্যান্য উপজেলা হাসপাতালকে এই ব্যবস্থাগুলো দিয়ে সজ্জিত করতে পারলে মৃত্যু কমে যাবে। পাশাপাশি পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা করতে পারলে করোনা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কমে যাবে।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাসটি খুব তাড়াতাড়ি নির্মূল হয়ে যাবে না। করোনা টিকা ব্যবস্থা করতে পারলেও দেশের সব মানুষকে টিকা দিতে কিছুটা সময় লাগবে। তাছাড়া অক্সিজেন, মাস্ক, নেজাল ক্যানোলা, আইসিইউ, এইচডিইউ, ভেন্টিলেটর যে শুধু করোনা রোগীদের জন্য প্রয়োজন হয় এমন নয়, অন্যান্য জটিল রোগেও রোগীদের এই যন্ত্রগুলোর প্রয়োজন হয়। এই যন্ত্রপাতি ও পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ অব্যাহত রাখতে পারলে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থারও উন্নয়ন হবে।

খুলনা ব্যুরো জানায়, খুলনা বিভাগে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে । সেই সাথে বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ জনে। এর মধ্যে করোনায় ছয়জন এবং উপসর্গ নিয়ে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে বেড়েছে রোগীর চাপ। ১০০ শয্যার এ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ১৩০ জন।

করোনা ইউনিটের ফোকালপারসন ডা: সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, বুধবার সকাল পর্যন্ত খুলনা করোনা হাসপাতালে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে ছয়জন এবং উপসর্গ নিয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া ভর্তি আছে ১৩০ জন রোগী। খুলনা মেডিক্যাল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা: মেহেদী নেওয়াজ বলেন, মঙ্গলবার রাতে খুমেকের পিসিআর মেশিনে ২৭৯ নমুনায় ৮১ জনের পজিটিভ এসেছে।

খুলনা সিভিল সার্জন অফিসের মেডিক্যাল অফিসার (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা: শেখ সাদিয়া মনোয়ারা ঊষা জানান, খুলনায় মোট নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্তের হার ২৪ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় খুলনা জেলা ও মহানগরীর তিনজন মৃত্যুবরণ করেছেন।

সাতক্ষীরা সংবাদদাতা জানান, করোনা উপসর্গ নিয়ে গত ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ (সমাকে) হাসপাতালে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল বুধবার ভোর রাত ১টার মধ্যে বিভিন্ন সময়ে তাদের মৃত্যু হয়। মৃত ব্যক্তিরা হলেন- সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার নৈকাটি গ্রামের মৃত কাঁলাচান শেখের ছেলে আব্দুস সামাদ শেখ (৫৫), একই উপজেলার জয়নগর গ্রামের মৃত মাজেদ বক্সের ছেলে এলেন বক্স (৮০), সদর উপজেলার আখড়াখোলা গ্রামের মৃত বাকের আলীর ছেলে মিজানুর রহমান (৫০) ও শহরের রাজারবাগান এলাকার মৃত পুনাই মিস্ত্রীর ছেলে নাসির আলী মিস্ত্রি (৭০)। এ নিয়ে জেলায় করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন কমপক্ষে ২৩৬ জন ব্যাক্তি। আর করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন অর্ধশতাধিক।

প্রসঙ্গত সাতক্ষীরায় পঞ্চম দিনের মতো লকডাউন চলছে। তারপরও করোনা সংক্রমণের হার কমেনি। গতকাল সংক্রমণের ঊর্ধগতি ছিল। সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গত ১৮২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১০৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়। পরীক্ষা বিবেচনায় সাতক্ষীরায় করোনা শনাক্তের হার ৫৯.৩৪ শতাংশ। শহরের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ প্রহরায় লোকজনের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হলেও গতকাল শহরে জনসমাগম বেশি লক্ষ্য করা গেছে। এর মধ্যেই শহর ও গ্রামের মধ্যে যাতায়াত অব্যাহত আছে।

নাটোর সংবাদদাতা : নাটোরে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে আরো দুইজন মারা গেছেন গতকাল বুধবার। এ দুইজন হলেন রমজান আলী (৯০), দিলীপ কুমার পাইন (৬২)। নাটোরে এ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে ৩০ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় নাটোরে ১৬৮টি নমুনা পরীক্ষা করে ৪৪ জনকে করোনা শনাক্ত করা হয়েছে। নাটোর ও সিংড়া পৌরসভায় সাত দিনের লকডাউন চলছে।

রাজশাহী ব্যুরো জানায়, করোনা সংক্রমণ ও উপসর্গ নিয়ে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে আরো আটজনের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে গতকাল বুধবার সকাল ৯টার মধ্যে হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মারা যান তারা। এদের মধ্যে চারজন মারা গেছেন করোনায়।

রামেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা: সাইফুল ফেরদৌস সাংবাদিকদের জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় রামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে আটজন মারা গেছেন। এর মধ্যে তিনজন মারা গেছেন আইসিইউতে। তাদের মধ্যে চারজন প্রাণঘাতী করোনা সংক্রমণ নিয়ে মারা গেছেন। তাদের মধ্যে তিনজন রাজশাহী জেলার বাসিন্দা। অন্যজন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বাসিন্দা। উপসর্গ নিয়ে যে চারজনের মৃত্যু হয়েছে তাদের তিনজন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার, অন্যজন রাজশাহী জেলার বাসিন্দা।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন