নাসির গুলশানের সেই ক্লাবেরও সদস্য

  17-06-2021 04:22PM

পিএনএস ডেস্ক : চিত্রনায়িকা পরীমনিকে বোট ক্লাবে ‘ধর্ষণচেষ্টার’ মামলায় গ্রেফতার উত্তরা ক্লাবের সাবেক সভাপতি নাসির উদ্দিন মাহমুদ গুলশানের অল কমিউনিটি ক্লাবেরও সদস্য।

নাসির গ্রেফতার হওয়ার দুদিন পর বুধবার অল কমিউনিটি ক্লাবের সভাপতি কে এম আলমগীর ইকবাল অভিযোগ করেন, গত ৭ জুন মধ্যরাতে পরীমনি ও তার সঙ্গীরা গুলশানে তার ক্লাবে গিয়ে ভাঙচুর করেছেন।

এরপর বনানীতে নিজের বাসায় সাংবাদিকদের সামনে এসে পরীমনি দাবি করেন, মূল ঘটনা থেকে নজর সরাতে ‘উদ্দেশ্যমূলকভাবে’ তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করা হচ্ছে।

রাতে সাংবাদিকদের সঙ্গে তার আলাপে অল কমিউনিটি ক্লাবের সঙ্গে নাসির উদ্দিন মাহমুদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টিও আলোচনায় আসে। পরীমনির মামলায় গ্রেফতার আবাসন ব্যবসায়ী নাসির ইতোমধ্যে ঢাকা বোট ক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যপদ খুইয়েছেন।

এ বিষয়ে অল কমিউনিটি ক্লাবের সভাপতি কে এম আলমগীর ইকবাল বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমকে বলেন, নাসির উদ্দিন মাহমুদ উত্তরা ক্লাবের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। আমাদের ক্লাবেরও উনি সদস্য, কিন্তু উনি কখনো আসেন না। এখনও সদস্যপদে আছেন।

পরীমনি যে অভিযোগ তুলেছেন, নাসির গ্রেফতার হওয়ায় এখন তার পক্ষ নিয়ে এসব অভিযোগ তোলা হচ্ছে কি না-এমন প্রশ্নের উত্তরে ব্যবসায়ী আলমগীর বলেন, এ রকম হওয়ার তো কোনো কারণ নাই। আমরা উনার (পরীমনি) ব্যাপারে কথা বলতেও রাজি না। আপনারা জানতে চেয়েছেন- কী ঘটেছিল? সেই জায়গা থেকে ব্যাখ্যা করেছি। আমাদের আর কিছু করার দরকারও নাই।

আলমগীর জানান, পরীমনির বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নেওয়ার কোনো ইচ্ছা তাদের নাই। ‘এমন কিছু তো করেন নাই উনি। কয়েকটা প্লেট ভেঙেছেন, সেটা যেই মেম্বারের অতিথি হয়ে গিয়েছিলেন সেই মেম্বারই দিতে পারতেন। ক্লাবের মেম্বারের সঙ্গে যারা ক্লাবে আসেন তারা শুধু মেম্বারেরই নন, ক্লাবেরও অতিথি। ’

তবে ভাঙচুরের অভিযোগ অস্বীকার করে পরীমনি সাংবাদিকদের সামনে প্রশ্ন রেখেছেন- সেদিন ক্লাবে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে থাকলে তা আটদিন পর কেন প্রকাশ করা হল?

এ বিষয়ে আলমগীরের ভাষ্য, আমরা তো কোনো ভিডিও করিনি। কিছুই করিনি। উনি ট্রিপল নাইনে কল করে পুলিশ এনেছিলেন, পুলিশ সম্ভবত অনর্থক আনার জন্য নিজেরাই জিডি করেছে। বিষয়টি আমরা জানিই না। কালকেও সাংবাদিকরা এসেছিলেন, আমরা তো এটাও করিনি। সাংবাদিকরা জানতে চাইছে বলে জানিয়ে দিলাম।

ক্লাব কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে পরীমনির বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে আলমগীর বলেন, সে রকম কোনো ইচ্ছা কিংবা পরিকল্পনা তাদের নেই।

‘ছোট একটা বিষয়। যা হবার তা হয়ে গেছে ওইদিন। আমরা কার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেব? কেন নেব? আল্লাহ মানুষের ইজ্জত দিয়েছেন, আল্লাহই সেটা রক্ষা করবেন। উনি টুকটাক ভুল করেছিলেন। সেটা নিয়ে আমাদের কোনো দাবিও নেই, কথাও নেই।’

অল কমিউনিটি ক্লাবে পরীমনি যাওয়ার পরের রাতেই উত্তরার পাশে বিরুলিয়ায় ঢাকা বোট ক্লাবে ধর্ষণচেষ্টার ঘটনা ঘটে। তার চার দিন পর তিনি প্রথমে ফেইসবুকে অভিযোগ করেন, ওই ক্লাবে তিনি ‘ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার’ শিকার হয়েছিলেন।

পরীমনির মামলায় তুমুল আলোচনার মধ্যে ঢাকা বোট ক্লাবের সদস্য ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ গ্রেফতার হওয়ার দুদিন পর বুধবার অল কমিউনিটি ক্লাবের সভাপতি, ব্যবসায়ী কে এম আলমগীর ইকবাল অভিযোগ করেন, গত ৭ জুন মধ্যরাতে পরী মনি ও তার সঙ্গীরা ক্লাবে এসে হাঙ্গামা বাঁধিয়েছিলেন।

ঘটনার বর্ণনায় ক্লাব প্রেসিডেন্ট বলেন, তারপর যেই সদস্যের মাধ্যমে উনারা এসেছিলেন উনিও তাদের চলে যাওয়ার জন্য অনেক অনুরোধ করেন। কিন্তু উনারা যাচ্ছিলেন না বিধায় ওই সদস্যও চলে যান। এরপর উনারা (পরীমনি ও সঙ্গীরা) অকস্মাৎ ক্ষিপ্ত হয়ে যান, চেঁচামেচি শুরু করেন এবং গ্লাস, স্ট্রে ছুড়ে মারতে থাকেন। তখন আর কেউ ছিলেনও না ক্লাবে। দুজন ওয়েটার ছিলেন আর এ তিন-চারজন মানুষ ছিলেন। একপর্যায়ে তারা ট্রিপল নাইনে কল করেন। পুলিশ আসার পর তারা দেখতে পান, উনি ওগুলো ছুড়ে মারছেন। তখন পুলিশ তাদের জিজ্ঞেস করে আপনারা কেন এসেছেন, কেন আমাদের কল করেছেন? তখন তারা বলেন, আমাদের হেনস্তা করা হয়েছে। তখন পুলিশ ভাইয়েরা বলেন, কিছুতো দেখছি না। তারপর পুলিশ সদস্যরা ওয়াকিটকির মাধ্যমে উপরে (ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা) জানতে চান আমরা কি করব। তখন উপর থেকে নির্দেশ আসে উনারা এমন করলে তাদের বের করে দিয়ে আপনারা চলে যান। ওয়াকিটকির সেই আওয়াজ সবাই শুনতে পাচ্ছিলেন। এরপর তারা কিছুটা ঠাণ্ডা হন ও পুলিশের উপস্থিতিতে ঘটনাস্থল থেকে সরে যান। এরপর আর কিছু ঘটেনি। তিনি বলেন, আমরা উনাদের কাউকে চিনতামও না জানতামও না। পরে আমরা শুনেছি উনাদের একজনের নাম পরীমনি।

ক্লাব প্রেসিডেন্ট কেএম আলমগীর ইকবাল বলেন, ক্লাব কর্তৃপক্ষ যেই সদস্যের মাধ্যমে এসেছিল তাকে শোকজ করেছে। তার বিরুদ্ধে ক্লাবের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এটা চলমান অবস্থায় আছে। তিনি বলেন, যেই সদস্য ক্লাবের নিয়মের ব্যত্যয় ঘটান তাকে আমাদের নিয়ম অনুযায়ী তাকে শাস্তি প্রদান করি। তাকে শোকজ, শোকজ গৃহীত না হলে, ৩ মাস, ৬ মাস এবং সদস্যপদ স্থগিতও করা হয়।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে পরীমনি এটিকে ‘ফালতু অভিযোগ’ বলে অভিহিত করেছেন।

৮ জুন পরীমনি ঢাকা বোট ক্লাবে গেলে সেখানে তাকে ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টা হয় বলে অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় সোমবার ৬ জনকে আসামি করে মামলা করেন এ চিত্রনায়িকা। মামলার পর পুলিশ প্রধান দুই আসামিসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে।

পিএনএস/এসআইআর

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন