টিকা না দেওয়ায় বাংলাদেশের ইলিশ থেকে বঞ্চিত ভারত!

  22-06-2021 04:19PM

পিএনএস ডেস্ক:পূর্বের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস প্রতিরোধী টিকা সরবরাহ না করায় এ বছর বাংলাদেশ থেকে পদ্মার ইলিশ পাচ্ছে না ভারত। যদিও সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসকে ইলিশের ‘ভরা মৌসুম’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সেই হিসাবে ইলিশের মৌসুম এখনো আসেনি। ফলে বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সিদ্ধান্ত জানার সময়ও এখনো হয়নি বলেই জানিয়েছে কলকাতাভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা।

মঙ্গলবার (২২ জুন) ভারতীয় পত্রিকাটিতে ‘কোভিড-টিকা পাঠায়নি দিল্লি, ইলিশও আসছে না ঢাকা থেকে, প্রশ্নের মুখে মোদীর সোনালি অধ্যায়’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সেখানে বলা হয়েছে, বর্তমানে দুপক্ষের সম্পর্ক এতটাই আড়ষ্ট হয়ে গিয়েছে, ইলিশ-কূটনীতির আবহাওয়াটাই আর নেই।

আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও তার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বহু বিজ্ঞাপিত ‘ভারত-বাংলাদেশ সোনালি অধ্যায়’-এর রং এই মুহূর্তে যথেষ্ট ফিকে। বাংলাদেশের প্রায় ১৬ লাখ মানুষ ভারতীয় করোনা প্রতিষেধকের প্রথম ডোজ নিয়ে বসে রয়েছেন। অনেক সময় পেরিয়ে গেছে।

ভারত জানাচ্ছে, আপাতত ভ্যাকসিনের আর একটি ডোজও পাঠানো সম্ভব নয়। ঢাকা সূত্রের বক্তব্য, বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ আর চাপা থাকছে না সে দেশে। যার সরাসরি প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে বাঙালির প্রিয় মাছ ইলিশ প্রসঙ্গে।

এতে আরও বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরেই ভারতে ইলিশ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে বাংলাদেশের। তা সত্ত্বেও গত বছর জামাইষষ্ঠীর সময়ে পশ্চিমবঙ্গে দুই হাজার টন ইলিশ রফতানিতে ছাড়পত্র দিয়েছিল হাসিনা সরকার। যদিও এ বছর পশ্চিমবঙ্গের পাতে পড়েনি পদ্মার ইলিশ।

আনন্দবাজার পত্রিকার ওই প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞদের বরাতে বলা হয়েছে, এমন সরলীকরণ করাটাও ঠিক হবে না যে প্রতিশ্রুত টিকা পাঠানো হয়নি বলেই ইলিশ রফতানি বন্ধ থাকল। কিন্তু এটাও ঠিক, দু’পক্ষের সম্পর্ক এতটাই আড়ষ্ট হয়ে গিয়েছে, ইলিশ-কূটনীতির আবহাওয়াটাই আর নেই।

প্রসঙ্গত, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ওঠাপড়ায় ইলিশ এক কূটনৈতিক প্রতীকও বটে। এর আগে স্থল সীমান্ত চুক্তি সই করতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন ঢাকায় গিয়েছিলেন, ইলিশ নিয়ে কিছুটা রসিকতার ঢংয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা হয়েছিল তার।

ভোজের তালিকায় ইলিশের পঞ্চপদ দেখে মমতা হাসিনাকে প্রশ্ন করেছিলেন, কেন তারা ইলিশ আটকে রেখেছেন? হাসিনার জবাব ছিল, তিস্তার পানি এলেই মাছ সাঁতার কেটে ওপারে চলে যাবে।

ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, তিস্তা চুক্তি রুপায়ন নিয়ে সেই আবেগ আপাতত সংযত রেখেছে বাংলাদেশ। কিন্তু সে দেশের রাজনৈতিক সূত্রের মতে, গত এক বছরে পর পর এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে যে বাংলাদেশে ভারত-বিরোধী মেজাজকে সামলানো কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে হাসিনা সরকারের পক্ষে। ঘরোয়াভাবে স্বীকার করে নেয়া হচ্ছে, ইচ্ছা না-থাকলেও চীনকে প্রতিষেধক ক্ষেত্র খুলে দিতে বাধ্য হচ্ছে ঢাকা। ইতোমধ্যেই বেইজিংয়ের উপহার হিসাবে প্রায় ১১ লাখ ডোজ চীনা ভ্যাকসিন ঢাকায় পৌঁছে গেছে। আরও ৩০ লাখ ডোজের দাম দেয়া হয়ে গেছে।

বাংলাদেশ সূত্রের দাবি, টিকার বিষয়টি নিয়ে মার্চের ঢাকা সফরেও প্রধানমন্ত্রী মোদী কথা দিয়েছিলেন সে দেশের শীর্ষ নেতৃত্বকে। কিন্তু ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার পর বাংলাদেশ, ভুটান, শ্রীলঙ্কার মতো প্রতিবেশী দেশগুলিতে টিকা রফতানি স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয় সাউথ ব্লক।

বাংলাদেশের বক্তব্য, টিকার ব্যাপারে ভারতের কাছ থেকে এতটাই আশ্বাস পাওয়া গিয়েছিল, তখন আগ্রহী চীনকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এখন তাদের কাছে হাত পাতায় যথেষ্ট দর কষাকষির জায়গায় পৌঁছে গেছে চীন।

গত বছর আগস্টে চীনের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে এসে করোনার টিকার বিষয়ে প্রাথমিক আলাপ আলোচনা শুরু করেছিল। ঠিক তখনই ঢাকায় আসেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। ভ্যাকসিন-কূটনীতিকে তখন যথেষ্ট গুরুত্ব দেয় মোদী সরকার। সব গুটিয়ে তখন চীনা দলকে ফিরে যেতে দেখা যায় বাংলাদেশ থেকে।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে দেশের অন্যান্য প্রান্ত থেকে পণ্য পাঠানোর জন্য চট্টগ্রাম বন্দর এবং বিমানবন্দর ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ ভারতীয় পণ্যের যাত্রাপথের বড় অংশে বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভূমিকা থাকছে।

ঢাকার রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, ভারত নিয়ে সে দেশের মানুষের মন যদি বিগড়ে থাকে, তা হলে এই সংযোগ প্রকল্পের ক্ষেত্রেও তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। শুধুমাত্র করোনার টিকা দিতে পারার বিষয়টিই নয়, বাংলাদেশের আবেগকে আঘাত করা হয়েছে বলে কখনও ঘরোয়াভাবে, কখনও প্রকাশ্যে অভিযোগ করেছে ঢাকা।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন