হত্যা মামলায় বাদীর অভিযোগপত্র ‘পাল্টে দিয়েছে পুলিশ’

  23-06-2021 08:52PM

পিএনএস ডেস্ক : বরিশালের গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটকেন্দ্রে প্রতিপক্ষের বোমা (ককটেল) হামলায় নিহত মৌজে আলী মৃধার ছেলে এবং ওই হত্যা মামলার বাদী মো. নজরুল ইসলাম মৃধা সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

আজ বুধবার দুপুর ১টায় গৌরনদী বন্দরে একটি পার্টি অফিসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন নজরুল ইসলাম। তিনি অভিযোগ করেন, ‘তার অগোচরে গৌরনদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুর রব হাওলাদার নিজে উদ্যোগী হয়ে বাদীর চাচা বিজয়ী ইউপি সদস্য পদপ্রার্থী ফিরোজ মৃধাকে তার পিতার হত্যা মামলার ১ নম্বর আসামি করেছেন। একই সাথে তিনি মূল হত্যাকারীদের বাদ দিয়ে ভুক্তভোগী পরিবারের অন্য সদস্যদের আসামি করে গ্রেপ্তারের জন্য হয়রানি করছেন।’

নজরুল ইসলাম বলেন, ‘গত সোমবার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ইউপি সদস্য পদেপ্রার্থী ছিলেন তার চাচা মো. ফিরোজ মৃধা। চাচার সমর্থক হিসেবে তারা যখন ভোটকেন্দ্রে ভোট প্রদান করছিলেন, তখন প্রতিপক্ষ প্রার্থী মো. মন্টু হাওলাদার তার নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরে একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তার সমর্থকদের নিয়ে আমাদের কর্মী-সমর্থকদের ওপর বোমাবাজি করে হামলা চালায়। বোমার আঘাতে আমার পিতা মৌজে আলী মৃধা ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন। পিতার হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রার্থনা করে ছেলে হিসেবে আমি (মো. নজরুল ইসলাম মৃধা) গৌরনদী মডেল থানায় গিয়ে ১৬ জন আসামির নাম উল্লেখ করে একটি লিখিত অভিযোগ দেই। কিন্তু গৌরনদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুর রব হাওলাদার উল্লিখিত ১৬ জন মূল আসামির ১৩ জনকে বাদ দিয়ে আমার (বাদীর) অগোচরে আমার চাচা বিজয়ী ইউপি সদস্য প্রার্থী মো. ফিরোজ মৃধাকে হত্যা মামলার ১ নম্বর আসামি করেন। একই সাথে ভুক্তভোগী পরিবারের অন্য সদস্যদের আসামি করে অভিযোগ দায়ের করে ফিরোজ মৃধাকে কোর্টে চালান দেন ও অন্যদের গ্রেপ্তারের জন্য হয়রানি করছেন, যা সম্পূর্ণটাই তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে।’

মামলার বাদী আরও বলেন, ‘মূলত কী কারণে এবং কেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এ কাজ করেছেন, তা তার বোধগম্য নয়। হত্যাকাণ্ডে জড়িত মূল আসামিদের বাদ দিয়ে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের আসামি করে তিনি হত্যার বিচার কার্যকে বিঘ্নিত করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে এ সময় মো. নজরুল ইসলাম মৃধার পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।‘

এক প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুর বর হাওলাদারের নির্দেশে পরিদর্শক (তদন্ত) মো. তৌহিদুজ্জামান সোহাগ আমার দেওয়া অভিযোগপত্রটি পাল্টে ফেলে তাদের তৈরি করে আনা মনগড়া অভিযোগত্রে আমার স্বাক্ষর নেয়, যেটি ঢেকে রাখা হয়েছিল। নিয়ম থাকলেও অভিযোগপত্রটি আমাকে পাঠ করে শোনানো হয়নি।’ এ বিষয়ে জানতে পরিদর্শক (তদন্ত) মো. তৌহিদুজ্জামান সোহাগের নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে গৌরনদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুর রব হাওলাদার বলেন, ‘ঘটনার দিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে আমি আমার অফিসে চলে যাই। বাদীর সঙ্গে ওই রাতে আমার দেখাই হয়নি। পরিদর্শক (তদন্ত) মো. তৌহিদুজ্জামান সোহাগ ফোনে আমাকে জানিয়েছিলেন, নিহতের ছেলে এসেছে অভিযোগ নিয়ে। আমি তাকে বলেছি, অভিযোগ নিয়ে এফআইআর করে ফেলেন। এর বাইরে কোনো কথা হয়নি।’

সংবাদ সম্মেলনের পরপরই ওই এলাকার তিন শতাধিক নারী-পুরুষ মিলে গৌরনদী মডেল থানা ঘেরাও করে গ্রেপ্তার হওয়া বিজয়ী ইউপি সদস্য প্রার্থী মো. ফিরোজ মৃধার অবিলম্বে মুক্তি ও হত্যা মামলার আসামি থেকে মো. ফিরোজ মৃধাসহ নিহতের স্বজনদের নাম বাদ দিয়ে মূল হত্যাকারীদেরকে আসামি করে অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানাতে থাকেন। একপর্যায়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আফজাল হোসেন তাদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে ঘেরাওকারীরা শান্ত হয়ে বাড়ি ফেরেন।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন