জামায়াতে পরিবর্তনের হাওয়া

  20-10-2016 07:01AM

পিএনএস: নির্বাচিত হওয়ার পর বিবৃতি দিয়েই আলোচনায় উঠে আসেন জামায়াতের নয়া আমীর মকবুল আহমাদ। গত সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে প্রায় দুই হাজার শব্দের বক্তব্য দেন তিনি। তার এই বক্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চলছে নানা আলোচনা-পর্যালোচনা। কেউ কেউ এই বক্তব্যকে পরিবর্তনের সুর হিসেবে দেখছেন। ২০১০ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় জামায়াতের আমীর মতিউর রহমান নিজামী গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকেই মকবুল আহমাদ ভারপ্রাপ্ত আমীর হিসাবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। দেশবাসীর উদ্দেশে দেয়া বিবৃতির প্রথম প্যারায় মকবুল আহমাদ বলেন, ‘১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে যে সকল জনগণ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা ও অকৃত্রিম ত্যাগের বিনিময়ে আমরা স্বাধীন-স্বার্বভৌম বাংলাদেশ পেয়েছি তাদের কথা আজ গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি। বিশেষভাবে স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম, জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গণি উসমানীসহ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সকল অবিসংবাদিত নেতাদের আমি স্বশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করছি।’ এ পর্যায়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে বিতর্কিত ভূমিকার জন্য নিন্দিত সমালোচিত জামায়াত নতুন নেতৃত্বের মাধ্যমে কি বার্তা দিতে চায়, দলের রাজনৈতিক কৌশলে কোনো পরিবর্তন আসবে কিনা এমন প্রশ্ন জাগে জনমনে। এ প্রসঙ্গে দলটির ঘনিষ্ঠ পর্যবেক্ষক শাহ আবদুল হান্নান বিবিসি বাংলাকে বলেন, জামায়াতের নতুন আমীরের বিবৃতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় সেটি দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থাকে প্রতিনিধিত্ব করে। শাহ আবদুল হান্নান বলেন, তিনি (নতুন আমীর) মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানিয়েছেন, সবাইকে সম্মান জানিয়েছেন। এবং তারা যে ’৭১-এ রাইট (সঠিক) কাজ করেছেন একথা কোথাও বলেন নাই। তারা শুধু বলেছেন বিচার ওনাদের মতে সঠিক হয় নাই।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক আসিফ নজরুল মনে করেন, দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে চাপে পড়ে কিংবা বাধ্য হয়ে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে পরিবর্তন এসেছে। তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে চেঞ্জ (পরিবর্তন) না হয়, তাহলে তাদের বিশ্বাসে কতটা পরিবর্তন হয়েছে আর কতটা কৌশলগত কারণে হয়েছে, সেটা বলা মুশকিল। তিনি মনে করেন, ১৯৭১ সালে জামায়াতের তৎকালীন নেতৃত্ব যা করেছে সে ‘দায় বা কলঙ্ক’ থেকে বর্তমান নেতৃত্ব যদি মুক্তি পেতে চায় তাহলে নতুন নেতৃত্ব তাদের সামনে বড় সুযোগ এনে দিতে পারে। অধ্যাপক নজরুল বলেন, যেহেতু যারা যোদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের সকলেরই নেতৃত্ব থেকে অপসারিত হয়েছেন বা বাধ্য করা হয়েছে, সেজন্য তারা যদি মনে করেন তারা নতুন যাত্রা শুরু করতে চায়-এটা তাদের জন্য একটা বিরাট সুযোগ এনে দিয়েছে। তবে এ সুযোগ তারা ব্যবহার করবে কিনা সেটা আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি না। অধ্যাপক নজরুল বলেন, জামায়াত যদি সত্যিকার অর্থে দৃষ্টিগ্রাহ্য, গ্রহণযোগ্য কোনো পরিবর্তন চায় তাহলে জামায়াতকে খুবই ফ্র্যাঙ্কলি খোলামেলাভাবে যুদ্ধাপরাধের ভূমিকা নিয়ে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। এটার কোনো বিকল্প নাই। তবে বিশ্লেষকরা বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন নেতৃত্ব যে কলঙ্কজনক ভূমিকা রেখেছে সেখান থেকে বর্তমান প্রজন্ম মুক্তি পেতে চায় কিনা তা দেখার জন্য আরো অপেক্ষা করতে হবে।

ওদিকে দৈনিক নয়া দিগন্তের নির্বাহী সম্পাদক সালাহউদ্দিন বাবর বলেন, জামায়াতকে অনেক কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। একসময় মূলধারার রাজনীতিতে ছিল জামায়াতে ইসলামী, কিন্তু এখন দলটির যে অবস্থা তা খুব একটা স্বাভাবিক নয়। তাদের ভেতরে ভেতরে কাজ করতে হচ্ছে। বিবিসি বাংলাকে দেয়া বক্তব্যে সালাহউদ্দিন বাবর বলেন, জামায়াত ক্যাডারভিত্তিক সংগঠন। এর মজলিশে সূরাই সবকিছু নির্ধারণ করে। একজন শিক্ষক হিসেবে মকবুল সাহেব শান্তশিষ্ট মানুষ, দলকে তিনি ধীরে ধীরে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। তবে সময়ই বলে দেবে নতুন আমীর জামায়াতকে কোনদিকে নিয়ে যাচ্ছেন। তবে তিনি জামায়াতকে আস্তে আস্তে সক্রিয় করার চেষ্টা করবেন এবং তার সহযোগীরাও তাকে সাহায্য করবেন বলে মনে করেন সালাহউদ্দিন। জামায়াতের নতুন আমীর নির্বাচিত হওয়ার পর মকবুল আহমাদ যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে পরিবর্তনের সুর আছে বলে উল্লেখ করেন সালাহউদ্দিন বাবর। তিনি মনে করেন জামায়াতের নতুন আমীর দায়িত্ব গ্রহণের পর মুক্তিযুদ্ধের কথা তুলে দেশের সব নেতার প্রতি তিনি যেভাবে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে বিবৃতি দিয়েছেন সেই ধারা অব্যাহত থাকলে জামায়াত আবার সম্মুখ রাজনীতিতে চলে আসবে।

মকবুল আহমাদের বক্তব্যের শেষ প্যারায় দেশের স্থিতিশীল ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্থান্তর করার দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে অতীতের কোনো রাজনৈতিক বিষয়কে অজুহাত না বানিয়ে সকল দুঃখ, কষ্ট ও বেদনাকে ভুলে গিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ গড়ার কাজে এগিয়ে আসার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।




পিএনএস/বাকিবিল্লাহ্



@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন