মোদির সঙ্গে হাসিনার একটি হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠছে : ঢাকায় বিজেপি নেত্রী

  24-10-2016 08:58AM



রুপা গাঙ্গুলি। অভিনেত্রী-রাজনীতিবিদ। ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) প্রতিনিধি হিসেবে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে বাংলাদেশে এসেছিলেন। রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে দৈনিক আমাদের সময়ের সঙ্গে রাজনীতির বাইরেও কথা বলেন শিল্প-সংস্কৃতি নিয়ে। চুম্বক অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো- তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যয়ের বিরোধিতার সমালোচনা করে ভারতের বিজেপি নেতা ও রাজ্যসভার সদস্য রুপা গাঙ্গুলি বলেছেন, আমরা ছোট ছোট রাজনৈতিক সুবিধা থেকে বের হয়ে আসব। আমি চাইব, এটি থেকে রাজনীতিকে ঊর্ধ্বে রাখতে। রাজনীতি মানেই শুধু মানুষের জন্য কাজ করা। মানুষের কল্যাণে কাজ করা। যেটি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেমন বিশ্বাস করেন, তেমনিভাবেই আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও বিশ্বাস করেন।

রুপা গাঙ্গুলি। ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী অভিনেত্রী। বর্তমানে বাস করেন পশ্চিমবঙ্গে। রুপা গাঙ্গুলির আদি নিবাস বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জে। সে হিসেবে বাংলাদেশের সঙ্গে রুপা গাঙ্গুলিীর রয়েছে রক্তের সম্পর্ক। রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছেন দেড় বছর। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে মহাভারতের দ্রৌপদীখ্যাত এ অভিনেত্রী বিজেপিতে যোগ দেন। হয়েছেন রাজ্যসভার সদস্য। রুপা গাঙ্গুলি মানুষের সেবা করতে চান। মানুষের বিশ্বাস অর্জন করে পাশে থেকে কাজ করতে চান।

ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশে এসেছিলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে যোগ দিতে। রাজনীতিবিদ রুপা গাঙ্গুলির এটিই প্রথম বাংলাদেশ সফর। এর আগেও একাধিকবার এখানে এসেছেন। উঠেছিলেন রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে। একান্ত এক আলাপচারিতায় দুই দেশের সম্পর্ক, শিল্প, সংস্কৃতি ও রাজনীতি নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, রাজনীতিতে নামার পর সাধারণ মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ হচ্ছে। সিনেমার কাজে অডিয়েন্সের ভালবাসা তৈরি হয়। অনেকে পছন্দ করেন। কিছু ফ্যান-ফলোয়ার তৈরি হয়, যেটি মহাভারতের দ্রৌপদী চরিত্রে অভিনয় করে আমি পেয়েছি। কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছে আন্তরিকভাবে পৌঁছতে গেলে রাজনীতিই হচ্ছে সবচেয়ে বড় মাধ্যম।

রাজনীতিবিদ হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সম্মেলনে যোগ দিয়ে কেমন লেগেছে, জানতে চাইলে রুপা গাঙ্গুলি বলেন, অসাধারণ একটি অনুভূতি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে বিজেপির প্রতিনিধিত্ব করতে আমি বাংলাদেশে এসেছি। অনেক সুন্দর একটি সম্মেলন করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একটা জিনিস দুর্দান্ত লেগেছে। একটি সাংস্কৃতিক দল আট ভাষায় অনুষ্ঠান করল। অসাধারণ। আমি ব্যক্তিগতভাবে এখান থেকে আইডিয়া নিয়েছি এবং পশ্চিমবঙ্গ বিজেপিতে কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায় তা নিয়ে কাজ করব। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিষয়গুলো জানিয়েছি।

বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বিরাজমান সমস্যা নিয়ে রুপা গাঙ্গুলি বলেন, বিজেপির মানুষ হিসেবে একটি বিষয় ভাবলে আমার গর্ব হয়, এতগুলো বছর সীমান্ত সমস্যা ও ছিটমহল সমস্যা মেটানো যাচ্ছিল না। হয়তো কোনো সমস্যার কারণে সমাধান হয়নি। এত বছর পর ছিটমহল সমস্যা সমাধান হলো। যখন দুটি পাশাপশি দেশ একসঙ্গে থাকে, একে অপরের ভালো মন্দ নিয়ে ভাবে, তখন দুই দেশের মানুষেরই উপকার হয়। হয়তো কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। তিস্তা চুক্তি সমস্যা রয়ে গেছে। দুটি দেশ বসে সমস্যাগুলো সমাধান করা হবে। এমনভাবে সমস্যার সমাধান করা হবে, যাতে দুই দেশই উপকৃত হয়।

বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশ ও শেখ হাসিনা উচ্চ স্থানে যাচ্ছেন জানিয়ে রুপা গাঙ্গুলি বলেন, আজকে দেখুন কতখানি এগিয়ে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা খুব শক্ত হাতে সন্ত্রাসবাদ দমন করছেন। এটি খুব কঠিন একটি কাজ। উনি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। আমরা খুব খুশি। নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে শেখ হাসিনার একটি হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠছে। সম্মেলনে শেখ হাসিনা শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীকে তার প্রাপ্য সম্মান দিলেন। এটিই তো রাজনীতি। এটিই হওয়া উচিত।

বাংলাদেশের অনেক জঙ্গি পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নিচ্ছে, এ বিষয়ে রুপা গাঙ্গুলি বলেন, ভারতে কেন্দ্রে বিজেপি সরকার থাকলেও পশ্চিমবঙ্গে আমরা বিরোধী। তারপরও আমাদের অবস্থান থেকে সোচ্চার হয়ে থাকি। শেখ হাসিনা নিজে আছেন। নরেন্দ্র মোদি আছেন। আর সন্ত্রাসবাদ রাজ্যের সমস্যা নয়, এটি জাতীয় সমস্যা। দুই দেশ খুব শক্তভাবে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কাজ করছে।

শিল্প সংস্কৃতির মানুষ হিসেবে সাংস্কৃতিক বিনিময়ে কীভাবে ভূমিকা রাখবেন- এমন প্রশ্নে রুপা গাঙ্গুলি বলেন, আমাদের ভীষণভাবে ইচ্ছা ছিল চলচ্চিত্রটি দেখা। যদি দুই দেশের মধ্যে এক করতে পারি তাহলে দুই দেশই বিশেষ করে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ উপকৃত হবে। ধরুন আমরা পরিচালকদের বিনিময় করলাম। কলকাতা থেকে দুই পরিচালক এখানে এলেন ছবি প্রযোজনা ও পরিচালনা করবেন। আবার এখান থেকে দুজন পরিচালক কলকাতা গেলেন ছবি পরিচালনা ও প্রযোজনা করলেন। তাহলে মানুষের কাজ বাড়বে। সিনেমা হলগুলো ভালো ছবি পাবে। বাংলাদেশের ছবির কনটেন্টে একটু ঘাটতি আছে। যথেষ্ট পরিমাণে কনটেন্ট তৈরি হয় না। এসব বিষয় নিয়ে একটা ডায়ালগ ওপেন করা এবং এক সক্রিয়ভাবে করা খুব জরুরি। আমরা খুব চেষ্টা করব। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্র্রি দিল্লি আর ঢাকা দেখে। তারপরও আমরা চেষ্টা করব এটিকে এগিয়ে নেওয়ার। শেখ হাসিনা যেহেতু আমাদের ভয়ানকভাবে সমর্থন দিচ্ছেন সুতরাং আমি ফিরে গিয়ে এ বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্রের মানুষদের সঙ্গে কথা বলব- কীভাবে আমরা আরও গভীরভাবে কাজ করতে পারি। সাংস্কৃতিক বন্ধনকে দৃঢ় করতে পারি।

বাংলাদেশি চ্যানেল ভারতে দেখানোর বিষয়ে রুপা গাঙ্গুলি বলেন, বাংলাদেশি চ্যানেলগুলো পশ্চিমবঙ্গে তথা ভারতে দেখানো ভীষণভাবে প্রয়োজন। বাংলাদেশি চ্যালেনগুলো যত আমাদের ভারতবর্ষে আসবে তত বাংলাদেশের শিল্পীরা বেশি করে জনপ্রিয় হবে। এতে বন্ধন আরও সুদৃঢ় হবে। আমরা সবাই লাভবান হব। সূত্র: আমাদের সময়

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন