কি বলছেন বিশ্লেষকরা: ওবায়দুল কাদের পরিবর্তন আনতে পারবেন কি?

  25-10-2016 11:43AM



পিএনএস ডেস্ক: সদ্য শেষ হওয়া সম্মেলনে নতুন কমিটি পেয়েছে আওয়ামী লীগ। সভাপতি শেখ হাসিনা থাকলেও সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন ওবায়দুল কাদের।

ক্ষমতাসীন দলের নতুন সাধারণ সম্পাদক কি বড় কোনো পরিবর্তন আনতে পারবেন?

নতুন সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বা দেশের রাজনীতিতে কতটুকু ভুমিকা রাখতে পারবেন?

এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন সাধারণ সম্পাদক রাজনীতিতে তেমন কোনো পরিবর্তন আনতে পারবেন না। তবে ‘মাঠ-ঘাটের নেতা’ ওবায়দুল কাদেরকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে নির্বাচনের কথা ভেবে। সৈয়দ আশরাফ কর্মীদের থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন। ওবায়দুল কাদের কর্মীদের সংগঠিত করতে পারবেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, ‘তারা এই সম্মেলনের মাধ্যমে কী ধরনের কর্মসূচি নিয়েছে সেটা দেখতে পারলে ভালো হতো। তবে আমার মনে হয়, রাজনীতিতে খুব একটা পরিবর্তন হবে না। তারা যেভাবে কাজ করে এসেছে সেভাবেই কাজ করবেন। দুই বছর পর নির্বাচন। এই সময়টা তারা কিভাবে ক্ষমতায় আসবে সেটা নিয়েই কাজ করবে। যিনি সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তার ব্যাপারে অভিযোগ আছে তিনি নিষ্ক্রিয় ছিলেন। সভাপতিকে বলে বলে তাকে সক্রিয় করতে হয়েছে। আর ওবায়দুল কাদের নিজে থেকেই সক্রিয়। তিনি কাজ-পাগল মানুষ। নিজের মন্ত্রণালয়ের কাজও তিনি দৌড়ে দৌড়ে করেন। ফলে তিনি যে দলের জন্য ভূমিকা রাখবেন সেটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহাদুজ্জামান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আরো বেশি সংগঠিত হতে চেষ্টা করবে। সামনের নির্বাচনে তারা একটা ইতিবাচক ভুমিকা রাখার চেষ্টা করবে। নতুন সাধারণ সম্পাদকের প্রচুর রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা আছে। আওয়ামী লীগ সরকারের জনমত বাড়াতে তিনি একটা ভূমিকা রাখার চেষ্টা করবেন। এছাড়া তোফায়েল-আমুদের বাদ দেয়া হয়েছে, কারণ, তারা গায়ের জোরে রাজনীতি করতে চান। ওবায়দুল কাদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন। আমরা আশা করি তিনি আরো গঠনতান্ত্রিকভাবে আওয়ামী লীগকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলছেন, কেন্দ্রের সঙ্গে মাঠের নেতাদের যোগাযোগ কমে গেছে। বলা যায়, এক ধরনের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এমন কথা অনেক দিন ধরেই দলীয় সভানেত্রীর কাছে বলা হচ্ছে। সাধারণ সম্পাদকই মূলত এই সম্পর্ক দেখভাল করেন। এ কারণে হয়তো ওবায়দুল কাদেরকে দায়ীত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি কমবেশি সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। নির্বাচনের আরো দুই বছর বাকি আছে। এই সময়ের মধ্যে সব জেলা সফর, প্রার্থী মনোনয়নসহ নানা কাজ রয়ে গেছে। ওবায়দুল কাদেরকে এ কাজগুলোই করতে হবে। তা ছাড়া বিগত উপজেলা, ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা নির্বাচন পরিচালনায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। এই নির্বাচনগুলোয় আওয়ামী লীগ ব্যাপকভাবে জয়লাভ করেছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওয়ায়দুল কাদেরের সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো হতে পারে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি সম্পর্কে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. রুহুল আমিন বলেন, ‘শুধু বাংলাদেশ নয়, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে রাজনীতির যে প্র্যাকটিস আছে তার বাইরে আওয়ামী লীগ যেতে পারবে না। দলের যিনি প্রধান, তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে তো কেউ যায় না, যেতে পারে না। ওবায়দুল কাদের ভালো মানুষ। তার একটা গ্রহণযোগ্যতা আছে। কিন্তু তিনি কী করতে পারবেন? আমরা আগেও দেখেছি, এখনো দেখছি- খুব যে পরিবর্তন আসবে তা বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। দলের যিনি প্রধান থাকেন তিনিই সিদ্ধান্ত নেন এবং সেটাই বাস্তবায়ন হয়। ফলে আওয়ামী লীগের প্রধান তো শেখ হাসিনাই আছেন। তার নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ হবে। এই সম্মেলনে তারা গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন করেছে। মানুষের কাছে ভালো-মন্দ উপস্থাপন করেছে। তারা এই সম্মেলনের মাধ্যমে নির্বাচনের এক ধরনের প্রস্তুতিও নিয়ে ফেলল বলে মনে হচ্ছে।’

তবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মনে করেন, আগামী দিনে রাজনীতিতে কোনো পরিবর্তন আসবে কি-না সেটা আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণকরাই বলতে পারেন।

তিনি বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের একজন স্বচ্ছ রাজনীতিক। তিনি সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এখন আগামী দিনে তিনি কী ভুমিকা রাখতে পারবেন সেটা নির্ভর করবে তার উপর। তার কাছে আমাদের প্রত্যাশা দেশে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করার জন্য তিনি ভূমিকা রাখবেন।’

এই সামর্থ্য তার আছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা তার উপরই নির্ভর করবে?’ সূত্র: ডয়চে ভেলে

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন