নতুন বার্তা, বেড়েছে প্রত্যাশা

  26-10-2016 07:05AM

পিএনএস: আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় কমিটির পরিবর্তনকে দলের জন্য ইতিবাচক বার্তা হিসেবে দেখছেন নেতাকর্মী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। প্রেসিডিয়াম ও সম্পাদকমণ্ডলীতে যে পরিবর্তন এসেছে তা দলের পরবর্তী লক্ষ্য অনুযায়ী করা হয়েছে। সম্মেলনের দিন প্রেসিডিয়াম ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে নাম ঘোষণা করা হয়। এর একদিন পর গতকাল সম্পাদকমণ্ডলীর ২২ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের বাকি সদস্যদের নামও ঘোষণা হবে খুব শিগগিরই। এতো দ্রুত সময়ে কমিটি ঘোষণাকেও রাজনীতির জন্য ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। দুই ধাপে ঘোষিত পদগুলোর মধ্যে যে পরিবর্তন এসেছে এবং সম্মেলন থেকে যে বার্তা দেয়া হয়েছে তাতে দলের তৃণমূলে গতি আসবে বলে মনে করছেন নেতারা। এদিকে আওয়ামী লীগের সম্মেলন সফল হওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য বিরাজ করছে। তারা বলছেন, এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রতি দেশবাসীর প্রত্যাশা বেড়েছে। আগামী দিনে এই কমিটির নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ আরো শক্তিশালী হবে। পাশাপাশি দেশের উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রাখবে। আওয়ামী লীগের কাউন্সিল ও নতুন নেতৃত্বের মূল্যায়ন করে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, শেখ হাসিনা দলের সভাপতি থাকবেন এটি অবধারিত ছিল। সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন এসেছে।

সভাপতিমণ্ডলীতেও নতুন মুখ এসেছেন। দলের দায়িত্বে যারা এসেছেন তারা সবাই অভিজ্ঞ। বহুদিন ধরে দলের জন্য কাজ করছেন। তাদের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে- এটি আমাদের প্রত্যাশা। একই সঙ্গে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে, জনগণের কল্যাণের জন্য তাদেরকে দায়বদ্ধ হতে হবে। তিনি বলেন, যে নেতৃত্ব এসেছে তা যদি সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে আসতো তাহলে আরো ভালো দৃষ্টান্ত হতো। তিনি বলেন, আমরা আশা করি নতুন নেতৃত্ব এমন কর্মসূচি হাতে নেবেন যাতে দেশে সত্যিকারের ইতিবাচক রাজনীতি ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আরো এগিয়ে যাবে। তারা রাজনৈতিক সমঝোতা গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখবেন। নতুন নেতৃত্বকে খেয়াল রাখতে হবে কোনো ধরনের সন্ত্রাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বা সুবিধাভোগীরা কোনোভাবেই দলীয় আশ্রয় না পায়। নতুন কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান জানিয়েছেন, দলের কাউন্সিল দেশবাসীকে একটি নতুন বার্তা দিয়েছে। সামনে দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী দলের নেতাদের প্রতি যে আহ্বান জানিয়েছেন এর গুরুত্ব সুদূরপ্রসারী। দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী আগামীতে দলের উন্নয়ন রোডম্যাপ তৈরি হবে। তিনি বলেন, নতুন কমিটির কাজ হবে সারা দেশে সংগঠনকে সুসংগঠিত করা। সংগঠন শক্তিশালী হলে গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে। দেশের উন্নয়নে গতি আসবে। তিনি বলেন, সামনের সময়ে দলীয় লক্ষ্য অর্জন হলে জাতীয় নির্বাচনেও তা দলের জন্য শুভ ফল বয়ে আনবে। এদিকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর আরো ২২টি পদে নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এতে যোগ হয়েছেন ৮ নতুন মুখ। বাদ পড়েছেন কয়েকজন। নতুন কমিটিতে যাদের রাখা হয়েছে তারা প্রায় সবাই অভিজ্ঞ। দলের নেতাকর্মীরা মনে করছেন, দলে যে পরিবর্তন এসেছে তা মূলত সামনের নির্বাচনকে গুরুত্ব দিয়েই। কাউন্সিল থেকে নির্বাচনের বার্তাটিকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কাউন্সিলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী যে আহ্বান জানিয়েছেন তাও মূলত নির্বাচনকে সামনে রেখেই। দলের হাইকমান্ড মনে করছে, সামনের জাতীয় নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। এ নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশ নেবে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক দুনিয়ার পুরো নজর থাকবে এ নির্বাচনের ওপর। নির্বাচনে দলের সাফল্য ধরে রাখতে হলে এখন থেকেই মাঠ তৈরি করতে হবে। নেতাকর্মীদের জনগণের কাছে যেতে হবে। এ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েই নতুন কমিটিতে নেতা নির্বাচন করা হয়েছে। এবং নির্বাচিত নেতাদের এই বার্তাটিই দেয়া হবে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে। নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও জানিয়েছেন, সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই আর নির্বাচন প্রস্তুতিই হবে এই মুহূর্তে দলের প্রধান এজেন্ডা।

গত ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ না হওয়ায় এ নিয়ে অস্বস্তি ছিল সর্বত্র। আন্তর্জাতিক দুনিয়া থেকে নির্বাচনের পর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়। দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও ছিল মিশ্র প্রতিক্রিয়া। প্রধান বিরোধী জোটের বর্জনে অনেকটা একতরফা হয়ে পড়েছিল ওই নির্বাচন। এছাড়া, সংসদের বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টিও সঠিক ভূমিকা পালন করতে পারছে না। এ নিয়ে সরকারি জোটে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে রয়েছে অস্বস্তি। এমন পরিস্থিতি এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের জন্য জরুরি বলে মনে করেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা। আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন বিএনপি ও তাদের মিত্ররা বর্জন করলেও সামনে নির্বাচনে তারা অংশ নেবে। আওয়ামী লীগ নেতাদের মতে বিএনপি আগে যে ভুল করেছিল সামনে আর সে ভুল করতে যাবে না। বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে অংশ নিলে সেই নির্বাচন অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। এ নির্বাচনে জয়লাভের জন্য দলীয় প্রার্থীদেরও কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়তে হবে। বিষয়টি মাথায় রেখেই এখন থেকে নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু করতে চায় আওয়ামী লীগ। তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠনকে শক্তিশালীকরণ, সরকারের পক্ষে জনমত গঠন এবং সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচি জনসমক্ষে তুলে ধরতে কর্মসূচি হাতে নেবে নতুন কমিটি।

সম্মেলন পরবর্তীতে শুক্রবার দলের নতুন কমিটি বৈঠকে বসছে। এ বৈঠকে নতুন নেতৃত্বের দিকনির্দেশনা দেবেন দলীয় সভানেত্রী। এছাড়া, দলের পরবর্তী করণীয় ও কর্মসূচি নিয়েও আলোচনা হবে এ বৈঠকে। সর্বশেষ সোমবার সন্ধ্যায় নবনির্বাচিত কমিটির নেতারা দলীয় সভানেত্রীর সঙ্গে গণভবনে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি সংক্ষিপ্ত দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন। তিনি নেতাদের নির্দেশ দেন মানুষের মন জয় করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে। সামনে নির্বাচনের জন্য যে আর খুব বেশি সময় নেই এটিও নেতাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।

এদিকে পুরো কাউন্সিল প্রক্রিয়াকে দলের জন্য ইতিবাচক বার্তা হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগ। দীর্ঘ প্রস্তুতির পর সুশৃঙ্খলভাবে কাউন্সিল সম্পন্ন হওয়ায় সন্তুষ্ট দলের নেতারা। একই সঙ্গে কাউন্সিলে যে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়েছে এ নিয়ে দলে কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া নেই। বরং সর্বসম্মতভাবেই নতুন নেতৃত্বকে স্বাগত জানাচ্ছেন নেতাকর্মীরা। এছাড়া সম্মেলনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিদেশি অতিথি অংশ নেয়াকেও ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন নেতারা। সম্মেলনে যে ঘোষণাপত্র অনুমোদন হয়েছে তার আদলেই তৈরি হবে দলের পরবর্তী নির্বাচনী ইশতেহার।




পিএনএস/বাকিবিল্লাহ্

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন