ভোটের আওয়াজ, দুই শিবিরেই প্রস্তুতি, তবে...

  26-10-2016 07:24AM


পিএনএস ডেস্ক: হঠাৎই ভোটের আওয়াজ। নির্বাচন, নির্বাচন আবহাওয়া। যদিও নির্বাচন বহুদূরে। পাক্কা দুই বছর দুই মাস। কিন্তু আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে যেন আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতির শো-ডাউনই হয়ে গেলো। দফায় দফায় তৃণমূল নেতাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিষয় একটাই নির্বাচন। কাউন্সিলে দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছেন। পরে গণভবনে আলাদা সভায়ও নেতাদের একই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ভোট কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি করে ভোটারদের কাছে যেতে। সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম জনগণের সামনে তুলে ধরতে নেতাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মূলত নির্বাচন প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই ওবায়দুল কাদেরকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। সদ্য বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ভাবমূর্তির কোনো সংকট না থাকলেও দুই মেয়াদে সাধারণ সম্পাদক থাকাকালে তিনি দলকে যথেষ্ট পরিমাণে সময় দেননি বলে অভিযোগ রয়েছে। তৃণমূলের সঙ্গে তার তেমন কোনো সংযোগ গড়ে ওঠেনি। অন্যদিকে, মাঠের রাজনীতিবিদ ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে তৃণমূল নেতাদের রয়েছে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। সাংগঠনিক দক্ষতার জন্যও খ্যাতি রয়েছে তার। সেই সাংগঠনিক ক্যারিশমা তিনি নির্বাচনের মাঠে দেখাতে পারবেন বলেই মনে করেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব।

অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের মতো প্রকাশ্য নয়, তবে বিএনপিতেও একধরনের নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। বিশেষ করে আগামী নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা নিয়ে দলটির ভেতরে কাজ চলছে। মামলাজনিত কারণে প্রার্থী সংকট তৈরি হলে বিকল্প প্রার্থীর তালিকাও প্রস্তুত করা হচ্ছে। সংস্কারপন্থি হিসেবে পরিচিত নেতাদেরও নির্বাচনী মাঠে দেখা যেতে পারে। তাদের বেশ কয়েকজনের সঙ্গেই বিএনপির হাইকমান্ড যোগাযোগ করেছে। তবে সাংগঠনিকভাবে বিএনপি তার দুর্বলতা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি বলেই মনে করেন বেশির ভাগ পর্যবেক্ষক। দলটির তৃণমূল পর্যায়ে পুনর্গঠন নিয়ে বছরের পর বছর কাজ চললেও সে কাজ এখনো শেষ হয়নি। অনেক কেন্দ্রীয় নেতা অকার্যকর হয়ে পড়েছেন। কেউ ইচ্ছায়, কেউ অনিচ্ছায়।

প্রস্তুত হচ্ছে আওয়ামী লীগ: সদ্য সমাপ্ত কাউন্সিলে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতির প্রথম পর্ব সেরে ফেলেছে আওয়ামী লীগ। পুরো সম্মেলনই আবর্তিত হয়েছে নির্বাচনের প্রস্তুতি ঘিরে। অন্যান্য প্রসঙ্গও এসেছে। তবে প্রাধান্য পেয়েছে নির্বাচনের কৌশলের বিষয়টিই। নতুন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের টপ এজেন্ডাতেও রয়েছে নির্বাচন। বেশি ইস্যু নিয়ে কাজ করবেন না তিনি। নিজেই বলেছেন, এক ঝুড়িতে বেশি ডিম রাখলে তা ভেঙে যেতে পারে। এ কারণে হাতে এজেন্ডা রেখেছেন কম। তার প্রধান এজেন্ডা নির্বাচনের প্রস্তুতি। এ কারণেই তাকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকরা। প্রখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর রওনক জাহান এ প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকে বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মতো দলে প্রধান ব্যক্তির পরিবর্তন হবে এমনটা কেউ আশা করেন না। সাধারণত সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন হয়। আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে এবার সেটাই হয়েছে। স্বাধীনতার পরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদে একটানা দুই মেয়াদের বেশি কেউ থাকেননি। তাই সাধারণ সম্পাদক পদে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের জায়গায় এবার ওবায়দুল কাদের এসেছেন। তার মতে, বর্তমান কমিটি আগামী নির্বাচন পরিচালনা করবে। সে ক্ষেত্রে দল এমন একজনকে বেছে নিয়েছে, যার সাংগঠনিক দক্ষতা আছে। কর্মীদের পাশে থাকার মানসিকতা আছে। সেটা আগামী নির্বাচনের জন্য দলকে প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে খুবই জরুরি।

কাউন্সিলে দলের নেতাদের নির্বাচন নিয়ে নির্দেশনা দেয়ার পর গণভবনে আলোচনায়ও নেতাদের একই নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জেলা নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, সামনে ইলেকশন, মনে রাখতে হবে। ইলেকশনের প্রস্তুতি নিতে হবে। জনগণের জন্য কী কী কাজ করলাম, জনগণকে তা জানাতে হবে। আওয়ামী লীগকে ভোট দিলে আরো উন্নয়ন হবে। অর্থনীতিকে সুসংহত করার জন্য যে কাজগুলো আমরা করে যাচ্ছি এই কথাগুলো না বললে মানুষজন জানবে কিভাবে? এখন থেকেই কাজ শুরু করার তাগিদ দেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।

পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেয়ায় ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগকে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়নি। কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হয়নি প্রার্থীদের। চ্যালেঞ্জ ছিল প্রশাসনিক। বিএনপি-জামায়াতের নির্বাচন ঠেকানোর আন্দোলন মোকাবিলা করা হয়েছে প্রশাসনিকভাবেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এক্ষেত্রে সফলতার পরিচয়ও দিয়েছে। সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে এক পর্যায়ে আন্দোলন থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয় বিরোধী শিবির। নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপও ছিল সরকারের ওপর। অত্যন্ত কৌশলে সে চাপ মোকাবিলা করে সরকার। এখন আর সরকারের ওপর কোনো চাপ নেই। অনেকেই মনে করেন, যে কোনো পরিস্থিতিতে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারে বিএনপি। এ অবস্থায় কিছুটা হলেও ভোটের মাঠে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া লাগতে পারে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের। এ কারণেই এখন থেকে ভোটের প্রস্তুতি নেয়া শুরু হয়েছে।

বিএনপির তৎপরতা: মাঠের আন্দোলনে ব্যর্থতার বাস্তবতা বিএনপির অনেকেই এখন স্বীকার করেন। মূলত সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণেই কোনো কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি দলটি। জ্বালাও-পোড়াওয়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ভাবমূর্তি। বহুদিন থেকেই বিএনপির কোনো সাংগঠনিক কর্মসূচি নেই। দলটি বলে আসছিল সংগঠন গোছানোর কথা। কেন্দ্রীয় কমিটি প্রায় গঠন হলেও তৃণমূলে এখনো সে কাজ অনেক বাকি। সহযোগী সংগঠনগুলোর পুনর্গঠনও হয়নি এখনো। তবে বিএনপি নেতারা সবসময়ই বলে আসছেন, মামলা-হামলার কারণেই দলের এই বিপর্যস্ত অবস্থা। পরিস্থিতি যাই হোক, আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। এর বাইরে দলটির সামনে তেমন কোনো বিকল্পও নেই। তবে কী পরিস্থিতিতে বিএনপিকে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে হয় সে ব্যাপারে নিশ্চিত নন দলটির নীতিনির্ধারকরা। নাটকীয় কোনো পরিস্থিতির উদ্ভব হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে দলটিতে। একটি মামলায় উচ্চ আদালতে এরইমধ্যে সাজার রায় হয়েছে বিএনপির দ্বিতীয় প্রধান নেতা তারেক রহমানের। আপিল না করলে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলাটিও চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এ মামলাতেও তারেক রহমান আসামি। অন্যদিকে, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অন্তত দুটি মামলা শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এর কোনো মামলাতে সাজা হলে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি-না সে প্রশ্নও রয়েছে। বিএনপির আরো অন্তত একশ’র বেশি নেতা এ ধরনের ঝুঁকিতে রয়েছেন। এসব বিষয় মাথায় রেখেই বিএনপিতে এক ধরনের নির্বাচনী প্রস্তুতি নেয়া শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচন করতে না পারলে ডা. জোবায়দা রহমান রাজনীতিতে আসতে পারেন- এ ধরনের একটি আলোচনাও দলের ভেতরে রয়েছে। তার উচ্চ শিক্ষা এবং ইতিবাচক ভাবমূর্তি দলের জন্য সহায়ক হতে পারে বলে কেউ কেউ মনে করেন। যদিও বিএনপি চেয়ারপারসন এ ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। তবে প্রতিটি আসনেই দলে বিকল্প প্রার্থী ঠিক করার কাজ চলছে। নেতাকর্মীরা যেন নতুন করে মামলায় না জড়ান সে বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে হাইকমান্ড। কর্মীদের যথাসম্ভব আইনি সহায়তা দেয়া হচ্ছে। নীরবে বিএনপির ভেতরে এক ধরনের প্রস্তুতি শুরু হলেও সাংগঠনিক দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে দলটি।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন