নভেম্বর থেকেই মাঠে নামবেন খালেদা জিয়া, জানুয়ারিতেই ঢাকায় মহাসমাবেশ

  27-10-2016 08:42AM


পিএনএস: আসছে জানুয়ারি মাসে আবারো ঢাকায় বড় পরিসরের একটি মহাসমাবেশ করার চিন্তা করছে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। তবে এর আগেই একটি নিরপেক্ষ নতুন নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবিতে রাজপথে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। সে লক্ষ্যে নভেম্বরের শুরু থেকেই বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দেশব্যাপী গণসংযোগে রাজপথে নামবেন। পর্যায়ক্রমে বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশের বিভাগীয় ও বৃহত্তর জেলাগুলোতে সমাবেশ করবে। বিএনপির একাধিক নীতি নির্ধারকের সঙ্গে আলাপকালে তারা এসব তথ্য জানান।

বিএনপি নেতারা গণমাধ্যমকে বলেন, একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রধান শর্ত হলো একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনে বিএনপি ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে চায়। কিন্তু যদি বিএনপি দেখে সরকার তাদের পছন্দমতো নিজেদের অনুগত লোক দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করার উদ্যোগ নিচ্ছে তাহলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তা প্রতিহত করবে। একটি নতুন নির্বাচনের জন্য বিএনপি সব সময় প্রস্তুত রয়েছে।

কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ফেব্রুয়ারিতে। সাংবিধানিকভাবে এই সময়ের মধ্যেই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে সার্চ কমিটি গঠনের ইঙ্গিত দিয়েছে ক্ষমতাসীন সরকার। যদিও বিএনপি সার্চ কমিটি গঠনের সরকারের ইচ্ছার তীব্র আপত্তি জানিয়েছে। বিএনপির দাবি, সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটি করতে হবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, সরকার যাই হোক নির্বাচনের জন্য গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনে সরকারকে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনারও দাবি জানান তিনি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, নতুন নির্বাচন কমিশন যদি বর্তমান কমিশনের মতো হয়, তাহলে বিএনপি মানবে না। তিনি বলেন, জনগণের সেন্টিমেন্ট হচ্ছে আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব এবং নিরাপদে দেব, ওই ধরনের একটি নির্বাচন কমিশন দরকার যারা এটা করতে পারবে। আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, নির্বাচন কমিশন আর যা-ই হোক, বর্তমান রকিবউদ্দীন মার্কা নির্বাচন কমিশন দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। এটা কেউ মেনে নেবে না। নির্বাচন কমিশন কোনো দলকে খুশি বা অখুশি করার জন্য যদি হয়, সেই কমিশন দিয়ে দেশের কোনো মঙ্গল হবে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আপাতত বিএনপি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশনের বিষয়টি সামনে নিয়েই মাঠে নামতে চাইছে। নির্বাচন কমিশন গঠনের ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে দলটি দেশব্যাপী সমাবেশের মাধ্যমে একটি জনমত গড়ে তুলতে চায়। আর সেই লক্ষ্যকে কাজে লাগিয়ে বিএনপি নভেম্বর থেকেই জনসংযোগ কর্মসূচি দেবে। খুব শিগগিরই বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দলের নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডেকে নতুন আন্দোলনের এই রোডম্যাপ চূড়ান্ত করবেন। চূড়ান্ত করা হবে খালেদা জিয়ার বিভাগীয় ও বৃহত্তর জেলার সমাবেশের সফরসূচি। বিএনপির একটি সূত্র জানায়, আসছে জানুয়ারিতে ঢাকায় একটি বৃহত্তর সমাবেশ করার বিষয়টিও বিবেচনা করা হচ্ছে। জানুয়ারিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের তিন বছর পূর্তি হবে। তার আগেই বিএনপি এই সমাবেশ করতে পারে। সেজন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেয়া হচ্ছে।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি একতরফা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে দ্বিতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হয়। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ছাড়াও বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল সেই নির্বাচনে অংশ নেয়নি। নির্বাচন বয়কট করে বিএনপি আন্দোলনে নামে। এরপর আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষপূতিকে সামনে রেখে বিএনপি লাগাতার দুই দফায় হরতাল অবরোধের সহিংস আন্দোলন চালিয়েও দাবি আদায়ে ব্যর্থ হয়। পরবর্তী সময়ে আন্দোলনে বিরতি দিয়ে দল পুনর্গঠনের কাজ শুরু করে বিএনপি। যার ধারাবাহিকতায় ১৯ মার্চ জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে সম্প্রতি বিএনপি তাদের কেন্দ্রীয় কমিটি পুনর্গঠন করেছে। কমিটি পুনর্গঠন হলেও দলটি রাজপথের আন্দোলনে ফিরতে পারেনি।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন