তিন কারণে পদ হারালেন আশরাফ

  28-10-2016 07:38AM



পিএনএস ডেস্ক: দেশের সবচেয়ে প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলন ঘিরে আলোচনার কেন্দ্রে ছিল সাধারণ সম্পাদক পদ। ক্ষমতাসীন দলটির গুরুত্বপূর্ণ এ পদ কে পাচ্ছেন, সৈয়দ আশরাফ না ওবায়দুল কাদের- তা নিয়েই ছিল যত জল্পনা-কল্পনা। শেষ পর্যন্ত ওবায়দুল কাদের জয়ী হন। কিন্তু তবু থামেনি এ পদটি নিয়ে নানা আলোচনা।

দুইবারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ কেন বাদ পড়েছেন, এখন সে আলোচনায় মুখর রাজনৈতিক অঙ্গন। কেউ বলছেন, তৃণমূলের সঙ্গে আশরাফের দূরত্ব। কারও ধারণা, শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজনদের ‘অপছন্দ তালিকায়’ নাম থাকায় বাদ পড়েছেন জাতীয় চারনেতা পরিবারের এ সন্তান। তবে দলের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজনের নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সৎ ও দুর্নীতিমুক্ত সৈয়দ আশরাফের বাদ পড়ার কারণ তিনটি।

সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে সৈয়দ আশরাফের ছিটকেপড়া নিয়ে বিশ্লেষণ করছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা থেকে তৃণমূল পর্যন্ত। এ বিশ্লেষণে বেশ কয়েকটি কারণ বেরিয়ে আসছে। কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বললে তারা কেউ এ নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাননি।

আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, আশরাফকে বাদ দেয়ার প্রথম কারণ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তারা বলছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করতে চায়। এজন্য তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে জোর দিচ্ছে দলটি। এ কাজে আশরাফের চেয়েও বেশি ‘ক্যাপাবল’ ওবায়দুল কাদের। নতুন এ সাধারণ সম্পাদক সরকারে যেমন সরব, দলেও তেমন। রাজনীতিতে স্পষ্টবাদী এবং সরকারের সবচেয়ে পরিশ্রমী মন্ত্রী হিসেবেও সাধারণ মানুষের কাছে প্রিয় তিনি।

ছাত্রজীবন থেকে সাংগঠনিকভাবে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছেন ওবায়দুল কাদের। ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন তিনবার। ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রথম যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনবার সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতাও রয়েছে তার।

সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আশরাফের দুই মেয়াদে তার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ ছিল, তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা না করা। তবে এ ব্যাপারে বরাবরই সুনাম রয়েছে ওবায়দুল কাদেরের। মন্ত্রী হিসেবেও তিনি মাঠেঘাটে ঘুরে বেড়িয়েছেন। তাই নির্বাচন সামনে রেখে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তাকে নির্বাচন করা হয়েছে।

দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মতে দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ সরকারের দুই মেয়াদে কাজ করতে করতে এখন অনেকটা ‘টায়ার্ড’ হয়ে পড়েছেন। এ জন্য তিনি তার ‘রানিংমেট’ হিসেবে সাংগঠনিকভাবে বিচক্ষণ ও পরিশ্রমী নেতাকে চেয়েছেন। যিনি কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত চষে বেড়াতে পারবেন। তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখবেন। প্রতিটি জেলায় সফর করতে পারবেন। আর এ কাজের জন্য সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের চেয়ে ওবায়দুল কাদেরকে যোগ্য মনে করেছেন দলীয় সভাপতি। ইতোমধ্যে ওবায়দুল কাদের মন্ত্রী হিসেবে দেশের বিভিন্ন জেলায় সফর করছেন।

দশম জাতীয় সংসদে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রী থাকাকালে এক এমপির প্রশ্নের জবাবে তিনি নিজেই বলেছেন, “সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রিত্ব- এক সঙ্গে দুটি দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা যায় না। এ কারণে নিয়মিত মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং করা যায় না।”

তৃতীয় কারণ, আওয়ামী লীগের কিছু নেতা, যারা শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত, তারা তৃতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে চাননি। এ কারণে তাকে এ পদ থেকে বাদ দেয়া হয়েছে বলে মনে করছেন দলটির অনেক নেতা।

এছাড়া রাজনৈতিক মাঠে জনশ্রুতি রয়েছে, গত আগস্টে সৈয়দ আশরাফের চীন সফর তার সাধারণ সম্পাদক পদ হারানোর অন্যতম একটি কারণ। বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। ওই দেশটির প্রভাবশালী একটি রাজনৈতিক দলের গুরুত্বপূর্ণ এক নেতার প্রভাবে আশরাফকে এ পদ থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে নবনির্বাচিত কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, “সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম খুবই সৎ ও দুর্নীতিমুক্ত মানুষ ছিলেন। কূটনৈতিভাবে তিনি সফল ছিলেন। তবে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তার খুব একটা যোগযোগ ছিল না। অন্যদিকে ওবায়দুল কাদেরের বরাবরই তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে একটা সুসম্পর্ক রয়েছে। সাংগঠনিক দক্ষতার পরিচয় বারবার দিয়েছেন তিনি।”

সম্পাদকমণ্ডলীর ওই সদস্য আরো বলেন, “ওবায়দুল কাদেরের সাংগঠনিক দক্ষতার জন্য ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দলীয় সভাপতি ‘বেসামাল’ ছাত্রলীগের তদারকির বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছিলেন তাকে। এ কাজটিও তিনি সফলভাবে পালন করেছেন।”

তবে তৃণমূলের সঙ্গে সৈয়দ আশরাফের সম্পর্ক আরো বেশি থাকলে তাকে এ পদ হারাতে হতো না বলে মনে করছেন অনেক নেতা।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন