রাজনীতিকে ‘গুডবাই’ জানাতে চান শামীম ওসমান!

  28-10-2016 08:51PM

পিএনএস ডেস্ক : দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনকে ‘গুডবাই’ জানানোর ইঙ্গিত দিলেন, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতা নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ একেএম শামীম ওসমান। মূলত নতুন নেতৃত্বকে সুযোগ করে দেয়ার লক্ষে শামীম ওসমান যখন রাজনীতি থেকে শীঘ্রই অবসরে যাওয়ার মনোভাব প্রকাশ করছিলেন, তখন তিনি অনেকটাই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন।

আগামী ২৯ অক্টোবর আয়োজিত নারায়ণগঞ্জে বিশাল জনসমাবেশ সফল করার লক্ষে মঙ্গলবার রাতে নারায়ণগঞ্জ রাইফেলস্ ক্লাবে মহানগর আওয়ামীলীগের প্রস্তুতি মূলক সভায় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য প্রদান কালে এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন শামীম ওসমান বলে জানান, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা।

শামীম ওসমান বলেছেন, ইচ্ছে করলে আমি কেন্দ্রীয় অনেক বড় পদ নিতে পারতাম। কিন্তু সেই পদ নিলে হয়তো কেন্দ্রের নির্দেশনা মোতাবেক দলের প্রয়োজনে যেকোন সময় দেশের যেকোন স্থানে যেতে হতো। কিন্তু আমি তা পারবো না। কেননা, আমার অনেক বয়স হয়েছে। চিকিৎসার জন্য অনেকবার বিদেশ গিয়েছি। শরীরে একাধিকবার অস্ত্রোপচার হয়েছে। যেই কারনে এখন আর আগের মত কিছু করতে চাইলেও করতে পারিনা।

তিনি আরো বলেছেন, এই উপমহাদেশে রাজনীতিতে অবসর বলতে কোন কথা নেই। মৃত্যুর আগ পর্যন্তও মানুষ রাজনীতি করে। কিন্তু আমি একটু ব্যাতিক্রম করতে চাই। আপনারা দেখবেন, শচীন টেন্ডুলকার যখন সেঞ্চুরী করতো তখন সবাই করতালি দিত। এজন্য তার ফর্ম থাকতেই তিনি ক্রিকেট দুনিয়া থেকে অবসর নিয়েছেন। তাই আমিও চাই যোগ্য নতুন নেতৃত্বের হাতে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে।

শামীম ওসমান বলেন, ৭৫’র পর কখনো ভাবিনি যে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসবে, জাতির পিতার হত্যার বিচার হবে, শেখ হাসিনা বাংলার প্রধানমন্ত্রী হবেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে। কিন্তু আজ সবই হয়েছে।

তিনি বলেন, আমার রাজনৈতিক জীবনের চাওয়া-পাওয়া পূরণ হয়ে গেছে। আমি এখন ক্লান্ত। আগামীতে নতুন নেতৃত্ব আসবে, তাদের হাতেই গড়ে উঠবে সুন্দর নারায়ণগঞ্জ।

সম্প্রতি দেখাগেছে, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের ২০ তম কাউন্সিলে নতুন নেতৃত্বকে সুযোগ করে দেয়ার লক্ষে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা তার সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দেয়ার অভিমত প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু নেতাকর্মীরা তাতে অসম্মতি জানিয়ে আজীবন তাকে দলীয় প্রধান হিসেবে থাকার জোরালো অনুরোধ করেন। যেই কারনে পুনরায় টানা ৮ম বারের মত শেখ হাসিনা আওয়ামীলীগের সভানেত্রী নির্বাচিত হন।

প্রসঙ্গত, আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে একজন দক্ষ সংগঠক হিসেবে বেশ সুনাম অর্জন করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ আলহাজ্ব একেএম শামীম ওসমান। বিগত ১৯৯৬ সালে প্রথম সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর যাকে সন্ত্রাসীরা বানিয়েছিল তাদের ‘গডফাদার’। এখন দ্বিতীয় মেয়াদে সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর ২০১৬ সালে তিনি হয়ে গেছেন নারায়ণগঞ্জের রাজনীতির ‘কিং খান’। যিনি ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে যৌবনকাল পর্যন্ত আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে ছিলেন নিবেদিত প্রাণ। যেই কারনে আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার খুবই আস্থাভাজন বলে যান শামীম ওসমান।

ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মরহুম ভাষা সৈনিক একেএম শামসুজ্জোহার আদর্শ বুকে ধারন ১৯৭৮ সালে সরকারী তোলারাম কলেজে ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হওয়ার পর ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমে শুরু হয় শামীম ওসমানের রাজনৈতিক জীবনে পথচলা।

৯০’ সালে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ব্যানের স্বৈরাচারী এরশাদ সরকার পতনের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ১৯৯১ সালে বিএনপি-জামায়াত চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর জন্মস্থান নারায়ণগঞ্জে আওয়ামীলীগের অস্তিত্ব বিলীন হতে থাকে। তৎকালীন সময়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মতিন চৌধুরীর মদদে নারায়ণগঞ্জে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে ক্রসফায়ারে নিহত দুধর্ষ সন্ত্রাসী মমিন উল্লাহ ডেভিড, সাঈদসহ আরো অনেকে।

তখন তাদের অত্যাচারে এমন কোন নেতা ছিলেন না যিনি আওয়ামীলীগের হাল ধরবেন। কিন্তু ছিলেন একজন বীরপুরুষ শামীম ওসমান। যিনি ৯১’ থেকে ৯৬’ সাল পর্যন্ত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তার কর্মী বাহিনী নিয়ে নারায়ণগঞ্জের মাটিতে আওয়ামীলীগের পতাকা সমুন্নত রাখতে লড়াই চালিয়ে গেছেন।

নেতাকর্মী নিয়ে নারায়ণগঞ্জে প্রবেশ মুখে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার লং মার্চের গাড়ী আটকে দিয়ে দেশব্যাপী আলোচনায় আসেন এই শামীম ওসমান।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন