আ. লীগ নেতাদের থেকে সাবধানে থাক: ছাত্রলীগকে কাদের

  27-11-2016 08:55PM

পিএনএস: আওয়ামী লীগ নেতারা নিজেদের স্বার্থে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ব্যবহার করতে পারেন বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন খোদ ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে ছাত্র সংগঠনটির নেতাকর্মীদের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

রোববার অপরাজেয় বাংলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের হল সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেন, “নেতাদের খুশি করার দরকার নাই। এদেশের ছাত্রসমাজ ও জনগণকে খুশি করতে হবে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের।”

আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের বিষয়ে ছাত্রলীগ কর্মীদের সতর্ক করে সংগঠনটির সাবেক এই সভাপতি বলেন, “পড়াশোনা করে যোগ্যতা অর্জন করতে না পারলে নেতারা তোমাদের তাদের স্বার্থ রক্ষার পাহারাদার হিসাবে ব্যবহার করবে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সেটা কোনোভাবে হতে পারে না।”

ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশ করে অপকর্মের মাধ্যমে কেউ যাতে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে না পারে সেদিকেও সংগঠনটির নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের।

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে যোগ দেওয়ার কথা ছিল তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের, সব প্রস্তুতিও শেষ হয়েছিল।এরইমধ্যে মধ্যরাতে ধানমণ্ডিতে জাতির জনকের বাসভবনে হানা দেয় একদল সেনা সদস্য, পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেন তারা।

বাঙালির ইতিহাসের এই কল্ঙ্কজনক অধ্যায়ের কথা তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, “ক্ষমতার রাজনীতির সঙ্গে ‘বসন্তের কোকিলের’ একটা যোগ আছে। শুধু এটুকু বলব, সতর্ক থাক। কাউকে তাড়িয়ে দিতে বলছি না। দল করে কেউ যদি দলের চেতনা ও আদর্শ নিয়ে কাজ করে তাহলে অসুবিধা নাই। নবাগতকেও স্বাগত জানাই।

“কিন্তু স্বাগত জানাতে গিয়ে দুয়েকটা অপকর্ম সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করবে, তাদের ব্যাপারে কোনো আপস করলে চলবে না।”

নিজে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পিছনে ত্যাগের মূল্যায়ন রয়েছে মন্তব্য করে ছাত্রলীগ কর্মীদের ধৈর্য ধরে রাজনীতিতে লেগে থাকার পরামর্শ দেন তিনি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, “আমার মতো কর্মীর ত্যাগকে স্বীকৃতি দিয়ে সারাদেশের সকল ত্যাগী কর্মীর স্বীকৃতি দিয়েছেন। রাজনীতিতে হারাবার কিছু নাই। কমিটমেন্ট নিয়ে রাজনীতিতে লেগে থাক, ধৈর্য ধরো, তোমার মূল্যায়ন হবেই।”
সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মেধা-যোগ্যতা দিয়ে ছাত্রসমাজ ও দেশবাসীর কাছে আকর্ষণীয় চরিত্র হয়ে উঠে ওঠারও আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের।

রাজনীতি বোঝার জন্য বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ভালোভাবে পড়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “আকর্ষণীয় নেতা হওয়ার জন্য খুব বেশি পড়াশোনা করার দরকার নাই। একটা দিন বসে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীটা পড়বে। এখানকার অনেকে হয়তো আত্মজীবনীটা কিনেছে, কিন্তু বালিশের নিচে রেখে দিয়েছে।”

অনেক নেতাকর্মীর ভিড়ে বাংলাদেশ ‘নেতা উৎপাদনের কারখানা’ হয়ে গেছে বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাদের।

ছাত্রলীগের হল সম্মেলনে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নেতাদের ‘ভালো ভালো’ বক্তব্য দেওয়া নিয়ে তিনি বলেন, “ভাষণে ভাষণে বেলা চলে গেছে। যত ভাষণ হয় তার প্রতিফলন আছে?

“এদেশে ভালো কথা এখন ফুরিয়ে গেছে। টকশো থেকে শুরু করে সব জায়গায় ভালো ভালো কথা বলা হয়, ভালো কথার মতো ভালো কাজের দৃষ্টান্ত কি আমরা স্থাপন করতে পেরেছি?”

ঐতিহ্যের ধারা ফিরিয়ে আনতে ছাত্রলীগের প্রতি আহ্বান জানিয়ে কাদের বলেন, “ঐতিহ্যের সঙ্গে প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটাতে হবে, বাস্তবতার সঙ্গে আদর্শের সমন্বয় ঘটাতে হবে। এই দুইয়ের সংমিশ্রণের মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আমাদেরকেও এগিয়ে যেতে হবে।”

অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, “নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না থাকার কথা বলে বিএনপি আগেই পরাজয়ের বহিঃপ্রকাশ করেছে। জনগণের ভোটের প্রতি বিএনপিনেত্রী খালেদা জিয়ার আস্থা নেই। এ কারণে তিনি সবসময় ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নির্বাচন বানচাল করতে চান।”
এ প্রসঙ্গে ওই সিটি কর্পোরেশনের বিগত নির্বাচনের আগের রাতে বিএনপির ভোট বর্জনের পর দলের প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকারের সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য তুলে ধরেন হানিফ।

“আগের দিন বর্জনের পর তাদের প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার কেঁদেছিলেন। তিনি বলেছেন, ‘আমাকে কোরবানি দেওয়া হয়েছে। কোরবানির আগে গোসলের সুযোগও দেওয়া হয়নি’। এটা তাদের নির্বাচনবিরোধী অবস্থান এবং জনগণের প্রতি আস্থাহীনতাই প্রকাশ করে।”

হল সম্মেলনে ছাত্রলীগের শৃঙ্খলার প্রশংসা করেন আওয়ামী লীগের আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক।

সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত হাজার হাজার নেতাকর্মী এখানে উপস্থিত আছে। কোনো শ্লোগান পাল্টা শ্লোগান, নিজের জায়গা থেকে কেউ উঠে যায়নি। আপনারা এই শৃঙ্খলার বিষয়টিও দেখবেন।”
ছাত্রলীগ নিয়ে নেতিবাচক খবরের বিষয়ে সংগঠনটির সাবেক এই সাধারণ সম্পাদক বলেন, “সাদা পাঞ্জাবিতে একটি বলপেনের দাগ পড়লেও সেটা দেখা যায়। কিন্তু একটি কালো জামায় এক দোয়াত কালি ঢেলে দিলেও বোঝা যায় না। সেদিকে গণমাধ্যমকে লক্ষ রাখতে বলব।”

বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের সভাপতি দারুস সালাম শাকিলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্সসহ ১৮টি হলের বিদায়ী সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বক্তব্য দেন।

ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আবিদ আল হাসান সম্মেলন উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন কবি জসীমউদ্দীন হল শাখার সাধারণ সম্পাদক বি এম এহতেশাম ও ফজিলাতুন নেসা মুজিব হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মারুফা নাবিলা।

এর আগে জাতীয় সঙ্গীত ও দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন এবং জাতীয় পতাকা ও সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করা হয়। বিকালে সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শিরোনামহীনসহ কয়েকটি ব্যান্ডের শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন।

পিএনএস/মো: শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন