জানুয়ারির শুরুতেই মাঠে নামছেন খালেদা জিয়া

  29-11-2016 08:26AM


পিএনএস: নতুন বছরের শুরুতেই মাঠে নামার পরিকল্পনা করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এরই অংশ হিসেবে জানুয়ারিতেই ঢাকায় একটি মহাসমাবেশ করা হবে। পাশাপাশি কয়েকটি বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করবেন দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এছাড়া বড় জেলাগুলোয়ও সমাবেশ করা হতে পারে।

নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ইস্যু এবং সরকারবিরোধী জনমত তৈরির লক্ষ্যেই রাজপথে নামার পরিকল্পনা করছে দলটি। আর যদি সরকার একতরফা নির্বাচন কমিশন গঠন করে, সেক্ষেত্রে এ ইস্যুতে আন্দোলন জোরদার করা হবে। দেশের বিভিন্ন বিভাগে খালেদা জিয়ার সফরসূচি নিয়ে এরই মধ্যে নীতিনির্ধারকরা নিজেদের মধ্যে প্রাথমিক আলোচনা সম্পন্ন করেছেন। চেয়ারপারসনের পরামর্শ নিয়ে এটি চূড়ান্ত করা হবে।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী সূত্রে আরও জানা গেছে, কেউ কেউ আগামী ৫ জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে মাঠে নামার পরামর্শও দিচ্ছেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচনের দিনকে বিএনপি ‘গণতন্ত্র হত্যা’ দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। তবে ৫ জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে সহিংস কোনো পরিস্থিতি যাতে সৃষ্টি না হয়, সেদিকে সতর্ক দলটির হাইকমান্ড।

জ্বালাও-পোড়াও নয়, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির পক্ষেই বেশিরভাগ নেতা। তবে শুধু ৫ জানুয়ারিকে টার্গেট করে রাজপথে নামতে চান না দলটির হাইকমান্ড।

জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকারবিরোধী জনমত তৈরিতে দ্রুতই চেয়ারপারসনের ঢাকার বাইরে সফরে যাওয়ার চিন্তাভাবনা ছিল। কিন্তু নাসিক নির্বাচনের আগে তা সম্ভব হচ্ছে না। এ নির্বাচনকে আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি।

তিনি বলেন, ডিসেম্বরের শেষদিকে অথবা জানুয়ারির শুরু থেকে বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করার টার্গেট নেয়া হয়েছে। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ওইসব সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন। তার সফরসূচি নিয়ে প্রাথমিক আলোচনাও হয়েছে। সবার মতামত নিয়ে চেয়ারপারসন সফরসূচি চূড়ান্ত করবেন।

ফখরুল বলেন, স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে চেয়ারপারসন একটি রূপরেখা দিয়েছেন। ক্ষমতাসীনরা প্রত্যাখ্যান করলেও তা প্রায় সব মহলই ইতিবাচকভাবে নিয়েছে। এ রূপরেখার প্রতি জনসমর্থন আদায়ে দল ও জোটের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি নেয়া হবে।

সূত্র জানায়, ডিসেম্বরের শুরুতেই বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করার চিন্তাভাবনা ছিল বিএনপির হাইকমান্ডের। কিন্তু নাসিক নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা ও ওই নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্তের পর আগের অবস্থান থেকে সরে আসা হয়। নাসিক নির্বাচনকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেয়ায় দলের সিনিয়র নেতারা এ নিয়েই ব্যস্ত থাকবেন।

নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষেরও নজর থাকবে নাসিক নির্বাচনের দিকে। নির্বাচনের আগে বিভাগীয় সমাবেশ করা হলে গণমাধ্যমও ততটা গুরুত্ব দেবে না। সবদিক বিবেচনা করে সফর পেছানোর সিদ্ধান্ত হয়।

দলের একজন নীতিনির্ধারক বলেন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনকে টার্গেট করেই তারা মাঠে নামতে চান। আগামী ফেব্র“য়ারিতে নতুন কমিশন গঠন করা হবে। এর আগে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিশন গঠনে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হবে।

বিভাগীয় সমাবেশের পর ঢাকায় মহাসমাবেশের মাধ্যমে স্বাধীন কমিশন গঠনে সরকারকে আলটিমেটামও দেয়া হতে পারে। সবার মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন করা না হলে এ ইস্যুতে আন্দোলন জোরদার করার পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের।

সূত্র জানায়, ঢাকার বাইরে সফরে যাওয়ার আগে দলের তৃণমূল পুনর্গঠন কাজও শেষ করার প্রক্রিয়া চলছে। এরই মধ্যে অনেক জেলার নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি কমিটিগুলো ডিসেম্বরের মধ্যে গঠন করার কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে।

নাসিক নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর জয়-পরাজয় উভয়কেই কাজে লাগানোর চিন্তা রয়েছে দলটির হাইকমান্ডের। ওই নির্বাচনে কারচুপি করা হলে ইসি পুনর্গঠনে তাদের দাবি আরও জোরালো হবে। বিভিন্ন মহল থেকেও তারা নৈতিক সমর্থন পাবেন।

পক্ষান্তরে সুষ্ঠু নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী জয়ী হলে সেটাও দলের জন্য ইতিবাচক হবে। সরকারের জনপ্রিয়তা নেই- এ বিষয়টি জনগণের সামনে তুলে ধরা যাবে।

সূত্র জানায়, ডিসেম্বরে ঢাকায় ব্যাপক শোডাউনের চিন্তাভাবনা ছিল বিএনপির। বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে ঢাকায় সমাবেশের বিষয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু জানুয়ারিতে ঢাকায় মহাসমাবেশ করার চিন্তাভাবনা থাকায় আপাতত সেই পরিকল্পনা থেকে সরে আসা হয়েছে। তবে বিজয় দিবস উপলক্ষে ঢাকায় বিজয় র্যালি করবে দলটি। সেখানেও ব্যাপক লোক সমাগমের টার্গেট রয়েছে।

জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও তৃণমূল পুনর্গঠনের সমন্বয়ক মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, স্বাধীন নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও সরকারবিরোধী জনমত তৈরিতে দলের চেয়ারপারসনের ঢাকার বাইরে সমাবেশ করার ব্যাপারে আলোচনা চলছে। এখনও চূড়ান্ত না হলেও নাসিক নির্বাচনের আগে সম্ভব হচ্ছে না, এটা মোটামুটি নিশ্চিত। নাসিক নির্বাচনের পরই সফরসূচি চূড়ান্ত করা হতে পারে।

সূত্র জানায়, বিগত সরকারবিরোধী দুটি আন্দোলনে ব্যর্থতার পর নেতাকর্মীরা মানসিকভাবে অনেকটা ভেঙে পড়েন। সরকারের মামলা-হামলা ও নির্যাতনে এখনও তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মী এলাকাছাড়া। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন থেকেই নেতাকর্মীদের মানসিকভাবে চাঙ্গা করা প্রয়োজন।

সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি নেতাকর্মীরা মানসিকভাবে উজ্জীবিত হলে তা দলের জন্য ইতিবাচক হবে। খালেদা জিয়া ছাড়া তৃণমূলকে চাঙ্গা করা কঠিন হবে। জেলায় জেলায় সম্ভব না হলেও অন্তত বিভাগীয় সমাবেশের মাধ্যমে ওই এলাকার নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করা যাবে। আগামী নির্বাচনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে চেয়ারপারসনের দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও চাঙ্গা করা সম্ভব হবে।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, নেতাকর্মীদের চাঙ্গা এবং সরকারবিরোধী জনমত সৃষ্টির জন্য নানা পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে দলের চেয়ারপারসনসহ সিনিয়র নেতাদের ঢাকার বাইরে যাওয়ার বিষয়টিও আছে। এখনও চূড়ান্ত না হলেও চেয়ারপারসনের বিভাগীয় সমাবেশের বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা চলছে। দ্রুতই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হতে পারে।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন