কৌশলী অবস্থানে বিএনপি মাঠে নামছেন খালেদাও

  01-12-2016 11:43AM


পিএনএস: কৌশলী অবস্থানে বিএনপি মাঠে নামছেন খালেদাওআগামী নতুন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কৌশলী অবস্থান নিয়েছে বিএনপি। জানা গেছে, পুরোপুরি নির্দলীয় সরকারের দাবি পূরণ না হলেও আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করছে দলটি। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাবনার পর এবার বিএনপি নির্বাচনকালীন একটি সহায়ক সরকারের রূপরেখা তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। আর নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে বিএনপি ইতিমধ্যে ১৩ দফা প্রস্তাবনা পেশ করেছে। সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে তার ১৩ দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। যদিও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাৎক্ষণিকভাবে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে। ক্ষমতাসীনরা বিএনপির প্রস্তাবনা নাকচ করে দিলেও এই নিয়ে সারাদেশে বিভিন্ন মহলে আলোচনা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন গঠনে প্রস্তাব নিয়ে নানা মহলে আলোচনা হওয়াকেই ইতিবাচক হিসেবে দেখছে বিএনপি। বিএনপি মনে করে, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন করতে পারলে নির্বাচনকালীন একটি সহায়ক সরকারের অধীনেও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। তাই এই মুহূর্তে বিএনপির কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা। বিএনপির প্রস্তাব উপস্থাপন ও এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনার মাধ্যমে সেই চাপ সৃষ্টি হয়েছে বলেই মনে করে দলের শীর্ষ নেতারা।

বিএনপির প্রস্তাবনার পর আওয়ামী লীগের ক্ষমতার অংশীদার জাতীয় পার্টিও নির্বাচন কমিশন গঠনে তাদের প্রস্তাব তুলে ধরেছে। নির্বাচন কমিশন গঠনে দলের প্রস্তাবনা রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে তুলে দিতেও বিএনপির পক্ষ থেকে সময় চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। বিএনপি আশা করছে রাষ্ট্রপতি তাদের সময় দেবেন। বিএনপির এক নীতিনির্ধারক বলেন, যে কোনো মূল্যে বিএনপি আগামী জাতীয় নির্বাচনে ভোটের লড়াইয়ে থাকতে চায়। আর তাই আগে থেকেই নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ তৈরির বিষয়ে বিএনপি সোচ্চার হয়েছে। জেলা পরিষদ নির্বাচন বয়কট করলেও আসন্ন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশন গঠনে বিএনপির প্রস্তাবনা শেষ পর্যন্ত সরকার কতটা বিবেচনায় নেয় তা পর্যবেক্ষণ করেই নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে। নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাবনা তুলে ধরার সময়ই বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া নির্বাচনকালীন একটি সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেয়ার কথা তুলে ধরেছিলেন।

একটি সূত্র জানায়, আপাতত বিএনপি মাঠের কর্মসূচির চেয়ে সরকারের ওপর রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টির বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছেন। তাই খুব সহসা মাঠের সক্রিয় আন্দোলনে ফিরছে না। সরকারের ওপর রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টির পাশাপাশি দলটি অঙ্গসংগঠন পুনর্গঠন করবে। জাতীয়তাবাদী যুবদলের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি প্রায় চূড়ান্ত। যে কোনো সময় তা ঘোষণা করা হতে পারে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জাতীয় ক্রান্তিলগ্নে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের বাস্তবসম্মত গ্রহণযোগ্য প্রস্তাব দিয়েছেন। বর্তমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হতে পারে। বিভিন্ন মহল থেকেও আলোচনার প্রস্তাব উঠছে। এটা এখন সরকারের ভেবে দেখা দরকার। মির্জা ফখরুল মনে করেন, স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে পারলে সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে অনেকটা বাধা দূর হবে। বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, বল এখন সরকারের কোর্টে, তারাই নির্ধারণ করবে শান্তিপূর্ণভাবে দেশের রাজনৈতিক সংকটের সমাধান হবে, নাকি দেশ সংঘাতের পথে যাবে। বিএনপি সব সময় আলোচনার মাধ্যমে সংকটের সমাধান চায় বলেও মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। মির্জা ফখরুল বলেন, শক্তিশালী ইসি গঠনে আমাদের প্রস্তাব নিয়ে আমরা রাষ্ট্রপতির কাছে যেতে চাই। কারণ তিনি দেশের সাংবিধানিক অভিভাবক। আমরা সাক্ষাতের সময় চেয়ে চিঠি দিয়েছি। আশা করি তিনি সময় দেবেন। অন্যথায় অন্য প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উনার কাছে আমাদের প্রস্তাব পাঠাব।

এদিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া নিজেই ভোটের ময়দানে নামতে পারেন। ইতিমধ্যে দলীয় প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেনকে বিজয়ী করতে বিএনপি কেন্দ্রীয়ভাবে নির্বাচনী সমন্বয় কমিটি করেছে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে এই কমিটির প্রধান করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে গুলশানের কার্যালয়ে ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। ওই বৈঠকে নারায়ণগঞ্জে ২০ দলীয় জোটের একক প্রার্থী হিসেবে সাখাওয়াতের পক্ষে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নারায়ণগঞ্জে জোটের দুই শরিক দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির দু’জন মেয়র প্রার্থী আছেন। তারা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেবেন। সেখানে ২০ দলীয় জোট বিএনপির প্রার্থীর পক্ষেই মাঠে নামবে। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা ও তাকে বিজয়ী করতে করণীয় নির্ধারণ করতে গতকাল বুধবার রাতেও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে নাসিক নির্বাচনে তিনি নিজে প্রচারণায় নামবেন কি-না তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অধিকাংশ সিনিয়র নেতাই প্রচারণায় দলীয় চেয়ারপার্সনকে অংশ নেয়ার পরার্মশ দিয়েছেন।

জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপার্সনের নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলার নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সময়ে তার সফরসূচি চূড়ান্ত করা হবে।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন