খালেদার প্রতি কৃতজ্ঞ জামায়াত

  06-12-2016 12:34AM

পিএনএস ডেস্ক : নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে বিএনপির চেয়ারপারসন ও ২০-দলীয় জোটের প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার প্রস্তাবে কিছুটা স্বস্তি বোধ করছে জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামী। তাদের মতে, এটি পরিস্থিতি অনুযায়ী খালেদার জিয়ার কৌশলী প্রস্তাব।

অবশ্য জোটভুক্ত রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্টজনদের অনেকে খালেদা জিয়ার প্রস্তাবকে ইতিবাচক হিসেবে মন্তব্য করেছেন। আর সরকারি দলের পক্ষ থেকে এই প্রস্তাবকে অন্তঃসারশূন্য ও অবাস্তব বলে আখ্যা দেয়া হয়।

খালেদা জিয়ার দেয়া প্রস্তাবে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের আগে সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে রাষ্ট্রপতিকে আলোচনা করার আহ্বান জানানো হয়। দৃশ্যত এ বক্তব্যে জোটের অন্যতম শরিক জামায়াত ইসলামীর সঙ্গে আলোচনার কোনো সুযোগ নেই। এই অংশটায় জামায়াত কিছুটা নাখোশ। তবে বিএনপি-প্রধানের প্রস্তাবের আরেক অংশে স্বাধীনতার পর এখন পর্যন্ত সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে এমন রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও আলোচনার যে কথা বলা হয়েছে, তাতে খুশি জামায়াত।

বিএনপি জোটের অন্যতম মিত্র দলটি মনে করে, সংসদে প্রতিনিধিত্বকারীদের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দিয়ে কৌশলে জামায়াতকেও আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন খালেদা জিয়া। আর তাতেই ভেতরে ভেতরে দারুণ খুশি নানামুখী চাপে থাকা জামায়াতের নেতারা।

তাদের এই সন্তুষ্টির কথা জানা গেছে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ২০ দলের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে। জামায়াতের প্রতিনিধি তার বক্তব্যে প্রস্তাব নিয়ে তাদের সন্তুষ্টির কথা জানান বলে ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন একাধিক নেতা নিশ্চিত করেন।

বর্তমান ইসির পর নতুন নির্বাচন কমিশন কীভাবে গঠিত হবে, সেই কমিশনের অধীনে কীভাবে আগামী নির্বাচন হবে- সে বিষয়ে গত ১৮ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির পক্ষ থেকে ১৩ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন বেগম খালেদা জিয়া।

সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া বলেন,এই কমিশন হতে হবে ‘সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, অথবা স্বাধীনতার পর প্রথম জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে এমন সকল রাজনৈতিক দলের’ মতৈক্যের ভিত্তিতে।

২০১২ সালে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ‘সার্চ কমিটির’ মাধ্যমে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসি গঠন করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান। আগামী ফেব্রুয়ারিতে বর্তমান কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে। এরপর নতুন যে ইসি দায়িত্ব নেবে, তার অধীনেই ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত হবে একাদশ সংসদ নির্বাচন।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে,আগেরবারের মতো এবারও ‘সার্চ কমিটি’ করে রাষ্ট্রপতি নতুন কমিশন নিয়োগ দেবেন।
২০-দলীয় জোটের নেত্রী খালেদ জিয়া ইসি নিয়ে আলোচনার জন্য বেশি জোর দিয়েছেন ‘সকল নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল অথবা স্বাধীনতার পর প্রথম জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে এমন সকল রাজনৈতিক দলকে’ ইসি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যুক্ত করার দিকে।

জানা গেছে, নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে খালেদা জিয়ার প্রস্তাব উপস্থাপনের আগে জোট নেতাদের সঙ্গে কোনো বৈঠক করেনি বিএনপি। সংবাদ সম্মেলনে প্রস্তাব উপস্থাপনের ১০ দিন পর গত ২৯ নভেম্বর গুলশানের নিজ রাজনৈতিক কার্যালয়ে জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন খালেদা জিয়া। ওই বৈঠকে মূলত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হলেও এতে ইসি পুনর্গঠন-সংক্রান্ত খালেদার প্রস্তাবের বিষয়টি উঠে আসে।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জোটের একটি শরিক দলের চেয়ারম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিএনপির মহাসচিব বিষয়টি আলোচনায় তোলেন। তখন জামায়াতের প্রতিনিধি আব্দুল হালিম প্রস্তাবের বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, ‘ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) বুঝে-শুনে প্রস্তাব দিয়েছেন। সরাসরি আমাদের (জামায়াত) দলের কথা বলেননি। পরিস্থিতি বুঝে কৌশল অনুযায়ী বক্তব্য দিয়েছেন।’

এ সময় জামায়াত-ঘেঁষা দল হিসেবে পরিচিত একটি দলের চেয়ারম্যান বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন তার প্রস্তাবে ইসি গঠনের আলোচনায় জোটের সব দলকে রেখেছেন।

এ ছাড়া জামায়াত নেতা বৈঠকে জানান, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবে জামায়াত।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া। তিনি বলেন, ‘মূলত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হলেও নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসনের দেয়া প্রস্তাব নিয়েও কথা হয়েছে। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রস্তাবে জামায়াতের সুযোগ না থাকলেও সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার কথা বলায় তারা কিছুটা স্বস্তি অনুভব করছে। বৈঠকে দলটির নেতার বক্তব্যে এমনটাই মনে হয়েছে।’

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন