‘৮২ সালে রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ অসাংবিধানিক ছিল না’

  07-12-2016 06:16AM


পিএনএস : জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, ১৯৮২ সালে তৎকালীন সামরিক বাহিনীর প্রধান হিসেবে রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ অসাংবিধানিক ছিল না।
তিনি বলেন, আমি ১৯৯০ সালের এইদিনে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছিলাম। বিচারপতি সাহাবুদ্দিন সেদিন আমার সাথে বেঈমানি করেছেন। আমার দলের সকল নেতা ও শিশু সন্তানসহ আমার স্ত্রীকে অন্যায়ভাবে জেল খাটিয়েছে, অত্যাচার করেছে। আমি মানুষের দোয়া এবং ভালোবাসায় বেঁচে আছি।
মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে একটি কনভেনশন সেন্টারে ‘সংবিধান সংরক্ষণ দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
এরশাদ বলেন, অনেকে বলে আমি অসাংবিধানিক ভাবে ক্ষমতায় ছিলাম। এটা সত্য নয়। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তার রাষ্ট্র পরিচালনার কাজে ইচ্ছুক ছিলেন না। তাই তিনি আমাকে ক্ষমতা দেননি, দিয়েছিলেন সামরিক বাহিনীকে। ওই সময় আমি সিনিয়র ছিলাম, সামরিক বাহিনীর প্রধান ছিলাম-সেই হিসেবে তিনি আমার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলেন। মনে রাখতে হবে ক্ষমতা দখল এবং ক্ষমতা হস্তান্তর এক নয়।
তিনি বলেন, সংবিধান না থাকলে গণতন্ত্র থাকে না, গণতন্ত্র না থাকলে সংবিধান থাকে না। আমি জোর করে ক্ষমতায় থাকতে চাইনি। সংবিধান ও গণতন্ত্রের স্বার্থে আমাকে আসতে হয়েছিল। সেই সময় সারা দেশে অরাজকতা, সেনাবাহিনীতে ১৯ বার ক্যু, মন্ত্রীর বাড়িতে হত্যা মামলার আসামির আশ্রয়সহ বিভিন্ন অরাজকতায় অসহায় হয়ে পড়েছিলেন সাত্তার সাহেব।
এরশাদ বলেন, যারা আমার পদত্যাগ দাবি করেছিলেন, কীভাবে পদত্যাগ করব-কার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করব তার কোনো রূপরেখা তারা দেননি। আমিই বিচারপতি শাহাবুদ্দিনকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি করেছিলাম, তাকে শপথও করিয়েছিলাম আমি। তারপর তার কাছে সাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলাম। কিন্তু তিনি বেঈমানি করেছিলেন। আমাকে জেলে দিয়েছিলেন, দলের কর্মী সমর্থকদের হয়রানী করেছিলেন। আমাদের নির্বাচন করতে দিতে চাননি।
খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গে সাবেক এ রাষ্ট্রপতি বলেন, পত্রিকায় দেখলাম একজন বলেছেন, বাকশাল আর স্বৈরাচার মিলে দেশকে ধ্বংস করছে। আপনি ক্ষমতায় গিয়ে ১৫ জন কৃষককে মেরেছিলেন। তাদের অপরাধ, তারা সার চেয়েছিল। কানসাটে মানুষ মেরেছেন, কারণ তারা বিদ্যুৎ চেয়েছিল। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে ২৯ জন মানুষ মেরে ফেলেছেন। শুধু তাই না, আপনি এতিমদের টাকাও আত্মসাৎ করেছেন। আর এখন বলছেন স্বৈরাচার আর বাকশাল দেশ ধ্বংস করছে। লজ্জা করে না? যারা এতিমদের টাকা আত্মসাৎ করে তারা রাজনীতি করে কী করে? যারা বাস জ্বালিয়ে মানুষ মারে তারা রাজনীতি করে কী করে? বছরের পর বছর ধরে যারা দেশের বাইরে থাকছে তাদের টাকা কোথা থেকে আসে?
আগামী ১ জানুয়ারি দলের মহাসমাবেশ সফল করতে কর্মী সমর্থকদের তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, মনে রেখ আমরা জনগণের হৃদয়ে আছি। মানুষ পরিবর্তন চায় এবং সেই পরিবর্তন আমরা তাদের দিতে পারি, কিন্তু জনগণের কাছে তোমাদের যেতে হবে। সামনের মহাসমাবেশ আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা পরীক্ষা।
এরশাদ বলেন, মায়ানমার রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায় সম্পর্কে আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলাম আপনিও মায়ের জাতি। নির্বিচারে গণহত্যা চালাচ্ছে- আপনি কথা বলুন। আমি জাতিসংঘের কাছে শান্তি রক্ষীবাহিনী পাঠাতে আহ্বান করবো- গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন বন্ধ করতে।
তিনি বলেন, আমরা ক্ষমতায় যেতে চাই সাংগঠনিক ভাবে শক্তিশালী ও জনগণের কাছে আমাদের গ্রহণ যোগ্যতা আছে। আমরা ৩০০ আসনে প্রার্থী দেব। ভয়ের কোনো কারণ নাই। ১ জানুয়ারি শক্তি প্রদর্শনের দিন এবং ফাইনাল পরীক্ষা। আমার একটাই কথা তোমাদের মিলেমিশে কাজ করতে হবে।
দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএম ফয়সল চিশতির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন জাপার কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের, মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, জিয়াউদ্দিন বাবলু এমপি, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, সুনীল শুভ রায়, এরশাদের উপদেষ্টা রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, আলমগীর সিকদার লোটন প্রমুখ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান, নুর-ই-হাসনা লিলি চৌধুরী এমপি, এসএম মান্নান, মীর আব্দুস সবুর আসুদ ছাড়াও ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, জিয়াউল হক মৃধা এমপি, নুরুল ইসলাম নুরু, জহিরুল ইসলাম জহির, অরিফ খান, দিদারুল আলম দিদার, নাজমা আকতার, এমএ তালহা, বাহাউদ্দিন বাবুল, গোলাম মোহাম্মদ রাজু, মোস্তাকুর রহমান মোস্তাক, জহিরুল আলম রুবেল, ফখরুল আহসান শাহাজাদা, অন্যন্যা হোসাইন মৌসুমী, আবু সাঈদ স্বপন, আব্দুর রাজ্জাক খান, সৈয়দ ইফতেখার আহসান, মিজানুর রহমান মিরু প্রমুখ।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন