তৈরি হচ্ছে নির্বাচনী ইশতেহার : সরকারে গুণগত পরিবর্তন আনতে চায় বিএনপি

  10-12-2016 09:36AM


পিএনএস ডেস্ক: আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে 'ইশতেহার' তৈরির কাজ শুরু করেছে দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আরও দুই বছর বাকি থাকলেও নানা হিসাব-নিকাশ করে আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। বিএনপিকে 'অপ্রস্তুত' রেখে নির্বাচন দেওয়া এবং দুর্নীতির মামলায় দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাবন্দি হতে পারেন- এই আশঙ্কা থেকে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাগুলো চূড়ান্ত করে ফেলছে তারা। এরই মধ্যে আগামী নির্বাচনকালীন 'নিরপেক্ষ সহায়ক' সরকারের 'রূপরেখা'র খসড়াও তৈরি করছে এক দশক ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি।

সূত্র জানায়, বিএনপির নির্বাচনী ইশতেহারের সম্ভাব্য শিরোনাম 'আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশ :গুণগত পরিবর্তনের অঙ্গীকার'। ইশতেহারে প্রযুক্তিকে প্রাধান্য দিয়ে সরকারে

গুণগত পরিবর্তন আনার প্রচেষ্টার কথা থাকবে। উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের মধ্যে থাকবে- সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে 'গণশুনানি'র মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া, জিয়াউর রহমানের 'গণভোট' আবার প্রবর্তন, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, উচ্চকক্ষে বিশিষ্ট জ্ঞানীজন, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে তদন্ত কমিটি গঠন ইত্যাদি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিএনপি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার মতো প্রস্তুতি তাদের সব সময় রয়েছে। অবশ্য নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির বিষয়ে তিনি অবগত নন বলে জানান। ড. মোশাররফ বলেন, এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো নির্বাচন নিরপেক্ষ ও অবাধ হবে কি-না? নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন ছাড়া কেমন নির্বাচন হয়- জাতি সেটা দেখেছে। তাই নিরপেক্ষ কমিশন গঠনের জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। জাতি এখন একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশা নিয়ে অপেক্ষা করছে।

দলের অপর স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, যে কোনো সময় নির্বাচনের জন্য বিএনপি প্রস্তুত। বিএনপি একটি জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। জনগণের প্রতি তাদের আস্থা রয়েছে। জনগণই তাদের শক্তি। আগামীতে ক্ষমতায় এলে বিএনপি কী করবে তার সংক্ষিপ্ত রূপরেখা এর আগে দলের জাতীয় কাউন্সিলে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন। নির্বাচনী ইশতেহারে তা পূর্ণ রূপ পাবে।

সূত্র জানায়, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পরামর্শে এরই মধ্যে দলের থিঙ্কট্যাঙ্ক আগামী সংসদ নির্বাচনে দলের ইশতেহার তৈরির কাজ শুরু করেছে। ২০০১ এবং ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে এবং বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বক্তব্যে দেওয়া 'ভিশন-২০৩০' সামনে রেখেই ইশতেহার তৈরি করা হচ্ছে।

নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির সঙ্গে জড়িত একজন বলেন, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর নির্বাচনী ইশতেহারে জনআকাঙ্ক্ষাকে মর্যাদা দিয়ে, তাদের সম্পৃক্ত করেই রাষ্ট্র পরিচালনা করার কথা থাকবে। সুধীসমাজ, গণমাধ্যম, জনমত জরিপ, জনগণের দৈনন্দিন চাওয়া-পাওয়া, বিশেষজ্ঞদের মতামত ও সব ধরনের জ্ঞান কাজে লাগিয়ে দেশ পরিচালনা করাই বিএনপির লক্ষ্য।

সূত্রমতে, ইশতেহারে গণতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক সুশাসনের জন্য নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, আইন কমিশন ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের মতো সাংবিধানিক ও আধা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে দুর্নীতি, অনিয়ম ও দলীয়করণমুক্ত করা হবে। আইনি ও প্রক্রিয়াগত বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে এগুলোর দক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার কথা থাকবে। ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ। সন্ত্রাসী ও জঙ্গি তৎপরতার বিরুদ্ধে সব সময় সক্রিয় থাকবে বিএনপি। ইশতেহারে বাংলাদেশের মাটি থেকে অন্য কোনো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতাও মেনে নেবে না বলে ঘোষণা দেবে তারা। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সৌহার্দ্য, বন্ধুত্ব ও আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার বিষয়ও থাকবে ইশতেহারে।

সূত্র আরও জানায়, সংবিধানে জিয়াউর রহমান প্রবর্তিত গণভোটের ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার অঙ্গীকার থাকবে। দলটি মনে করে, গণভোট হচ্ছে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনগণের সম্মতি গ্রহণের পন্থা।

এ ছাড়া বিএনপির ইশতেহারে সব কালা-কানুন বাতিল করার কথা থাকছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং আটক অবস্থায় দৈহিক-অমানবিক নির্যাতনের অবসান ঘটানো হবে। আটকাবস্থায় মৃত্যুর প্রতিটি ঘটনার জন্য তদন্তের ব্যবস্থা থাকবে। উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের যোগ্যতা ও পদ্ধতি-সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করবে বিএনপি। নিয়োগের জন্য বাছাই বা সুপারিশকৃতদের ব্যক্তিগত তথ্য ও সম্পদবিবরণী জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।

সূত্র জানায়, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও অখণ্ডতা সুরক্ষার লক্ষ্যে প্রতিরক্ষা বাহিনীকে আধুনিক প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি ও সমর-সম্ভারে সুসজ্জিত, সুসংগঠিত, যুগোপযোগী এবং সর্বোচ্চ দেশপ্রেমের মন্ত্রে উজ্জীবিত করে গড়ে তোলার অঙ্গীকার থাকবে ইশতেহারে। দলটি মনে করে, প্রধানমন্ত্রীর একক নির্বাহী ক্ষমতা সংসদীয় সরকারের আবরণে একটি স্বৈরাচারী একনায়কতান্ত্রিক শাসনের জন্ম দিয়েছে। এ অবস্থার অবসানকল্পে প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতার ক্ষেত্রে ভারসাম্য আনার ঘোষণা থাকবে ইশতেহারে। রাষ্ট্রের এককেন্দ্রিক চরিত্র অক্ষুণ্ন রেখে বিদ্যমান সংসদীয় ব্যবস্থা সংস্কারের অংশ হিসেবে বিভিন্ন সম্প্রদায়, প্রান্তিক গোষ্ঠী ও পেশার জ্ঞানীগুণী ও মেধাবী ব্যক্তিদের সমন্বয়ে জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা করা হবে।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন