বিএনপিকে আস্থায় আনতে চার সিটিতে নিরপেক্ষতা

  10-12-2016 12:09PM


পিএনএস ডেস্ক: এ টি এম শামসুল হুদার বিদায়ের পর ২০১২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেয় কাজী রকীব উদ্দিনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশন। দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে তারা এ পর্যন্ত দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও উপনির্বাচন, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ ও সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন পরিচালনা করেছে। বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর ওই বছর ২০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় প্রথমবারের মতো রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। দেশের সব সিটি করপোরেশন নির্বাচনেই রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থিত প্রার্থী থাকলেও ব্যতিক্রম ঘটে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। দলীয় কোন্দলের কারণে প্রার্থী সমর্থন দেয়া নিয়ে নিজ ঘাঁটিতে জাতীয় পার্টির নাটক, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সতর্ক অবস্থান আর প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নির্বাচন বর্জনে ফিকে হয়ে যায় ভোট উৎসব।

পরের বছর ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে অনুষ্ঠিত হয় খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন। সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি বিএনপির অনাস্থা ও চলমান আন্দোলনের সময় এই নির্বাচন কিছু শান্তিপূর্ণ করে আস্থা ফেরানোর চেষ্টা করে ইসি।

এর অব্যবহিত পরে অনুষ্ঠিত নবগঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তৎকালীন বিরোধী দল বিএনপিসহ প্রায় সব রাজনৈতিক দল ওই নির্বাচনের ফল মেনে নেয়। ভোট কিছুটা শান্তিপূর্ণ হলেও ইসির বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ছিল অব্যাহত। আচরণবিধি লঙ্ঘন হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি ইসি।

রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট এবং সর্বশেষ গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিভিন্নপর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কমিশনকে সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়েছে। নির্বাচনী আচরণবিধির যথেচ্ছ লঙ্ঘনে কমিশন ছিল অনেকটা অসহায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ মাঠপর্যায়ে কর্মকর্তাদের অনেকেই কমিশনের নির্দেশ যথাযথভাবে পালন করেনি। অনেক ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে খোদ ইসির কর্মকর্তারাই পড়েছেন কমিশনের রোষানলে। এ ছাড়া জাতীয় সংসদের সীমানা পুনর্বিন্যাস ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২ (আরপিও) সংশোধনসহ নানা ক্ষেত্রে কমিশন তার ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ইশারা-ইঙ্গিতেরই প্রতিফলন ঘটেছে।

গাজীপুর সিটির নির্বাচনী প্রচারণার শেষ সময় পার হওয়ার পরদিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কর্মীরা একাধিক বাসে গাজীপুরে যান। ওই সময় বহিরাগতদের নির্বাচনী এলাকায় যাওয়া এবং ইঞ্জিনচালিত বাহন চলাচল নিষিদ্ধ ছিল। এই নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ পেয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা মতিয়ার রহমান গাজীপুরের সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আয়েশা আক্তারকে সেখানে পাঠান। তিনি প্রথমে স্থানীয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। তাকে না পেয়ে তিনি নিজেই ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই বাসগুলোর চাবি আটক করে নিয়ে যান; কিন্তু ওপরের নির্দেশে ভোটের আগের দিন আয়েশা আক্তারকে ঢাকায় ইসি কার্যালয়ে তলব করে নিয়ে আসা হয়। আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ায়ই তাকে শাস্তি ভোগ করতে হয়।

এর আগে চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে রাজশাহীতে গ্যাস সংযোগ চালু ও ওই অনুষ্ঠানে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের বক্তব্য নিয়ে গণমাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। শেষ মুহূর্তে বিরোধী দলের লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শুধু শোকজ করেই ক্ষান্ত থাকে কমিশন।

চার সিটি নির্বাচনে আংশিক ইভিএম ব্যবহার করতে গিয়ে কমিশনকে বিভিন্নমুখী জটিলতায় পড়তে হয়। বরিশালে পলিটেকনিক কলেজ কেন্দ্রে নির্বাচনী কর্মকর্তারা ইভিএম কার্ড খুলে ফেলায় ভোটারদের মধ্যে ভোট নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। নারায়ণগঞ্জের ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে কমিশনের উচিত ছিল চার সিটি নির্বাচনে ইভিএমে ভোট গ্রহণ থেকে বিরত থাকা। চার সিটি নির্বাচনে কিছু কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করে ধাক্কা খাওয়ার পর গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কমিশন ইভিএম ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নেয় ইসি।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন