মার্চের মধ্যেই আন্দোলনের রোডম্যাপ বিএনপির

  15-01-2017 01:10PM


পিএনএস: আগামীতে একটি গ্রহণযোগ্য নতুন জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে আবারো রাজপথে নামার উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষায় রয়েছে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। আসছে মার্চের মধ্যেই দলটি আন্দোলনের নতুন রোডম্যাপ চূড়ান্ত করে রাজপথে ফিরে আসার পরিকল্পনা করছে। নির্বাচন কমিশন গঠন ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য শোনার পর বিএনপি নেতারা নতুন করে তাদের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কর্মকৌশল নির্ধারণে সক্রিয় হয়েছেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় বর্ষপূতিতে বৃহস্পতিবার রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এ সময় তিনি বলেছেন, নির্ধারিত সময় শেষে সাংবিধানিকভাবেই আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচনে সব দল অংশ নেবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন। এ ছাড়া নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়েও আওয়ামী লীগের অবস্থান স্পষ্ট। দলটির শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতি সবার সঙ্গে আলোচনা করে যে সিদ্ধান্ত নেবেন তা তারা মেনে নেবেন।

প্রধানমন্ত্রীর জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণের পরপরই বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া তার বক্তব্যের পর্যালোচনা করেন। দলের কয়েক সিনিয়র নেতার সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। এরপরই তাৎক্ষণিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে হতাশা প্রকাশ করে মির্জা আলমগীর বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে জাতি হতাশ হয়েছে। তিনি দেশের রাজনৈতিক সঙ্কট এড়িয়ে গেছেন।

বিএনপির এক নীতিনির্ধারক জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে, ক্ষমতাসীনরা আগামী নির্বাচনও তাদের ইচ্ছামতো করতে সব ধরনের চেষ্টা করবে। এতে কোনো দ্বিধা নেই। আমাদের দাবি আদায় করতে হলে রাজপথেই নামতে হবে। আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ের কাজটা কঠিন। তারপরও মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে হলে এ ছাড়া আমাদের অন্য কোনো পথ নেই। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পরও বিএনপি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির কী ভূমিকা পর্যবেক্ষণ করে দেখবে। রাষ্ট্রপতি কীভাবে, কাদের দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করেন তা দেখার পরই বিএনপি ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কর্ম-কৌশল নির্ধারণ করবে। বিএনপির নেতারা জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে একটি সমঝোতার উদ্যোগ চলমান। আমরা এই উদ্যোগের পরিণতিটা দেখতে চাই।

বিএনপির একটি সূত্র জানায়, সব দলের আলোচনার ভিত্তিতে যদি রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন গঠন না করে ক্ষমতাসীনদের পছন্দমতো লোকদের দিয়ে কমিশনার নিয়োগ করেন তাহলে তাৎক্ষণিকভাবেই বিএনপি আন্দোলনের কর্মসূচি দেবে। নির্বাচন কমিশন গঠনের ইস্যু নিয়েই রাজপথে ফিরবে। এরপর জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে একটি সহায়ক সরকারের দাবিতে ধাপে ধাপে অল আউট কর্মসূচিতে যাবে বিএনপি। তবে মোটামুটি গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের দিয়ে যদি নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয় তাহলে বিএনপি নির্বাচনকালীন একটি সহায়ক সরকারের দাবিতে সোচ্চার হবে। ইতিমধ্যে বিএনপি চেয়ারপার্সনের নির্দেশে দলের কয়েক নেতা নির্বাচনকালীন একটি সহায়ক সরকারের রূপরেখা তৈরির কাজ করছেন। রূপরেখা চূড়ান্ত হলে তা জাতির সামনে উপস্থাপন করার কথা রয়েছে।

সম্প্রতি ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়ে খালেদা জিয়া নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, সময়মতোই আন্দোলনের কর্মসূচি দেব। এবার সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামতে হবে। শনিবার রাজধানীতে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় রাজপথে সক্রিয় কর্মসূচি নিয়ে ফিরে আসার কথা আরো স্পষ্ট করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, সময়-সুযোগমতো আবারো রাজপথে আসবে বিএনপি। তিনি বলেন, আমরা একটা কথা পরিষ্কার করে বলতে পারি, আমরা শেষ পর্যন্ত লড়ে যাব। মির্জা আলমগীর আরো বলেন, আন্দোলন কৌশলের ব্যাপার। রাজনীতিতে উত্থান-পতন আছে, কখনো আমার ভালো সময় যাবে, কখনো খারাপ সময় যাবে। আমরা প্রতিবার রাজপথে আসছি, সময়মতো-সুযোগমতো অবশ্যই আবারো রাজপথে আসব। আমরা গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনবার জন্য, শহীদ জিয়াউর রহমানের আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য, জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও সংগ্রাম করব, লড়াই করব। সেই লড়াইয়ে সফল হব, ইনশা আল্লাহ।

গত প্রায় আড়াই বছর ধরেই রাজপথে অনেকটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে বিএনপি। এমনকি প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া সাদামাটা কর্মসূচিও পালন করতে পারছেন না দলটির নেতাকর্মীরা। ঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষমতা নিয়ে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যেই উঠেছে নানা প্রশ্ন। এমন অবস্থায় সক্রিয় আন্দোলনের কর্মসূচি কতটা সফল হবে তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।

উল্লেখ্য, আগামী ফেব্রুয়ারিতে বর্তমান নির্বাচন কমিশনারদের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। সাংবিধানিকভাবে এরপর নতুন নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে। আর নবগঠিত নির্বাচন কমিশনের অধীনেই আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। ১৮ ডিসেম্বর বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দলটির প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপতির সংলাপ শুরু হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের সঙ্গেও রাষ্ট্রপতি বৈঠক করেছেন। এখন রাষ্ট্রপতি ফেব্রুয়ারির বর্তমান নির্বাচন কমিশনারদের মেয়াদ শেষ হলেই নতুন কমিশনারদের নিয়োগ দেবেন।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন