`বিএনপিই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিতর্কিত করেছে’

  16-01-2017 12:55AM

পিএনএস: আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিম বলেছেন, ‘কেয়ারটেকার গভর্নমেন্ট (তত্ত্বাবধায়ক সরকার) করেছিলাম আমরা। বিতর্কিত করেছেন কে? আমরা আন্দোলন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এনেছিলাম। তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে বারবার বিতর্কিত করেছে এই খালেদা জিয়ার দল।’
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে রবিবার (১৫ জানুয়ারি) বাংলাদেশ জাতীয় জোট (বিএনএ) এর দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেছেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট বলে দিয়েছে, সংবিধান অনুযায়ী ইলেক্টেড প্রাইম মিনিস্টারের অধীনে নির্বাচন হবে। কেয়ারটেকার গভর্নমেন্ট করেছিলাম আমরা, বিতর্কিত করেছেন কে? ইয়াজ উদ্দিনকে কোন কারণে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান বানানো হলো? বিতর্কিত করেছে খালেদা জিয়ার দল। আমরা আন্দোলন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এনেছিলাম। বারবার বিতর্কিত করেছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে এই খালেদা জিয়ার দল। কোনো বিচারপতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হতে চায় না, বিব্রত হয় তারা। যে কারণে সুপ্রিম কোর্ট বলে দিয়েছে নির্বাচন হবে ইলেক্টেড প্রাইম মিনিস্টারের অধীনে।’
এ ক্ষেত্রে আমেরিকা, ভারত, ইউরোপ সারা বিশ্বে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের উদাহরণও দেন নাসিম।
বিএনপির সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে নাসিম বলেছেন, ‘আলোচনা যদি করতে হয় তাহলে নির্বাচন কমিশন গঠনের পর তাদের সাথে করেন। আমরা কি আলোচনা করব? আপনি একটা দল, আমরা একটা দল। আলোচনা করে লাভও হয় না। অতীতে হয়নি। একটা ফ্যাশন হয়ে গেছে আলোচনা করেন। এ ফ্যাশন বাদ দিতে হবে। আলোচনা করব মাঠে, জনগণের ভোটের মাধ্যমে আলোচনা করব। জনগণ যাকে রায় দেবে; ঘরের মধ্যে কোনো আলোচনা নাই। খুনিদের সঙ্গে কোনো আলোচনা নাই।’
মঞ্চে উপস্থিত প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত উন্নয়ন বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও সাবেক মন্ত্রী নাজমুল হুদাকে উদ্দেশ্য করে রসিকতাও করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘প্রথমে শুনেছিলাম চাচা-ভাতিজার সভা হবে এখানে। এই শুনে আমি আসলাম। চাচা-ভাতিজা একসাথে বসবে, অনেকদিন পর তাদের একসঙ্গে দেখব। আমরা সবাই খুশি হয়েছি।’
নাজমুল হুদার দল তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব হিসেবে অনুষ্ঠান থেকে অভিনেতা আহমেদ শরীফের নাম ঘোষণা করা হয়। তাকে অভিনন্দন জানিয়ে নাসিম বলেন, ‘জনাব আহমেদ শরীফ সাহেব। অভিনন্দন জানাই। কিন্তু ভিলেন কেন দলের মহাসচিব হয়েছেন! অসুবিধা নাই আমাদের আওয়ামী লীগে নায়ক আছে।’
অনেক দলকে নতুন নির্বাচন কমিশনের সংলাপে ডাকলেও নাজমুল হুদার দল তৃণমূল বিএনপি বা জোট বিএনএ’র এখনও ডাক পড়েনি। তাই দলটিকে রাষ্ট্রপতির সংলাপে আমন্ত্রণ জানাতে ব্যবস্থা নেবেন বলেও আশ্বাস দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘আমি মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ করেছিলাম একটা বড় জোট, কতগুলো দল, একজন সাবেক মন্ত্রী নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার বিষয়টা একটু বিবেচনা করেন। রাষ্ট্রপতি আশ্বাস দিয়েছেন আমি অবশ্যই তাকে চায়ের দাওয়াত দেব। কোনো অসুবিধা নাই আপনারা দেখা করতে পারবেন।’
প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ঐক্যে বিশ্বাস করেন উল্লেখ করে নাসিম বলেছেন, ‘এখানে ইনু সাহেব বসে আছেন, পার্লামেন্টে তার কয়জন সদস্য আপনারা জানেন। তারপরও শেখ হাসিনা তাকে মন্ত্রী বানিয়েছেন। আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকেও তিনি মন্ত্রী বানিয়েছেন। এমনকি আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর একজন পার্লামেন্ট মেম্বার, একজন না দুইজন, তারপরও তাকে মন্ত্রী বানিয়েছেন। প্রয়োজন ছিল না, তারপরও বানিয়েছেন। কেন? জাতীয় ঐক্যমতের কারণে বানিয়েছেন। এমনকি বিএনপিকেও বলেছিল, আসেন নির্বাচনকালীন সরকারে আপনারা অংশগ্রহণ করেন, তারা করেননি।’
একই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তথ্য মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে বাংলাদেশে প্রধান বাধা জঙ্গি ও সন্ত্রাস। তারা এতো শক্তি পেত না যদি বিএনপি এবং খালেদা জিয়া তাদের সমর্থন না দিত। যদি জঙ্গি উৎপাদন ও সাম্প্রদায়িকতা নির্মূল করতে চান তবে জঙ্গির সঙ্গী, জঙ্গির পৃষ্ঠপোষক ও জঙ্গির উস্কানিদাতা বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপিকে রাজনীতির ময়দান থেকে হটিয়ে দিতে হবে।এখন পর্যন্ত জঙ্গি, সন্ত্রাস ও যুদ্ধাপরাধীদের যৌথ ক্লাবের সভাপতি হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়া। আর গণতান্ত্রিক ক্লাবের নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশকে পথে রাখতে হলে জঙ্গি সন্ত্রাস ও যুদ্ধাপরাধের ক্লাবকে এই পথ থেকে হটিয়ে দিতে হবে। বহুজন চেষ্টা করছেন গণতন্ত্রের ক্লাবের সঙ্গে জঙ্গি, সন্ত্রাস ও যুদ্ধাপরাধের ক্লাবের একটা মিটমাট করতে। আমি মনে করি মিটমাটের কোনো জায়গা নাই। যারা মিটমাটের চেষ্টা করছেন তারা জঙ্গি সন্ত্রাসীদের আরেকার জীবন দেওয়ার চেষ্টা করছেন।’
তৃণমূল বিএনপির সভাপতি নাজমুল হুদার সভাপতিত্বে বিএনএ’র জোটের নেতারা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
সভাপতির বক্তব্যে নাজমুল হুদা বলেছেন, ‘সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন দিতে কোনো ভয় নাই। আমি মনে করি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে দেশ যে উন্নয়নের পথে হাটছে তাতে সুষ্ঠু নির্বাচন হলেও আওয়ামী লীগ পরাজিত হবে না। আমরা সবসময় তাদের সঙ্গে আছি।’

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন