‘রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে কী না, বলতে চাই না’

  19-01-2017 06:52AM

পিএনএস: বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সংলাপের আহ্বানের প্রসঙ্গ টেনে দলের মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, রাষ্ট্রপতিও বলেছেন সংলাপ করা উচিৎ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে। আমরা দেশবাসীকে মনে করিয়ে দিতে চাই, এই সংলাপ যখন আমরা আহ্বান করেছি, তখন তারা (আওয়ামী লীগ) নাকোচ করে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি জানি না, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে কী না? সে কথাও আমরা বলতে চাই না, বলতে পারি না। শুধু এই কথা বলতে চাই, রাষ্ট্রপতি যদি সত্যিকার অর্থে আন্তরিক হয়ে এ কথা বলে থাকেন। তিনি সত্যি কথা বলেছেন। এদেশের মানুষ সংলাপের মধ্য দিয়ে সংকটের নিরসন চায়। তারা জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়। সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে চায়।’
রাজধানীর গুলিস্তানে মহানগর নাট্যমঞ্চে বুধবার (১৮ জানুয়ারি) বিকালে এক আলোচনা সভায় তারা এ কথা বলেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এর আয়োজন করে বিএনপি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পরিষ্কার করে বলতে চাই, আমরা আলোচনা ও সংলাপ চাই। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনার মধ্যে দিয়ে দেশে একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি হউক এটাই চাই। আমাদের দেশনেত্রী খালেদা জিয়া সেই কথা বলেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের। আগেই প্রধানমন্ত্রী সেটা নাকোচ করে দিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘দেশনেত্রী খালেদা জিয়া নিজ উদ্যোগে নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন। সাথে সাথে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক (ওবায়দুল কাদের) এটা অন্তঃসার শূন্য বলে নাকোচ করে দিলেন। তারপর রাষ্ট্রপতি যখন ডাকলো আমরা তখন একটু অবাকই হয়েছি। সরকার দল তারা আলোচনা করতে চায় না। প্রেসিডেন্ট সাহেব ডাকলেন কেন। আমরা জানি না, এই ডাকার মধ্যে কোনো ছলছাতুরি আছে কি না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করতে চাই, আন্তরিকতার সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ডেকেছেন এবং আন্তরিকতার সঙ্গেই একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। যার মধ্যে দিয়ে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে। আর যদি তা না হয়ে থাকে, তাহলে আগের মতই মেরুদণ্ডবিহীন সরকারের বশংবদ নির্বাচন কশিমন গঠন করা হবে। যা কোনদিন এ দেশের মানুষ মেনে নেবে না।
সবাইকে সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য আহ্বান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘গোটা বাংলাদেশ এখন অবরুদ্ধ। সব অধিকার কেড়ে নেওয়া
হয়েছে। এর বিরুদ্ধে সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে অধিকার ফিরিয়ে আনতে লড়াই করতে হবে।’
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংলাপের যে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন সেটি পাতানো ষড়যন্ত্র বলেও অভিযোগ করেন ফখরুল।
প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার প্রস্তাব অনুযায়ী নিরপেক্ষ ইসি গঠন করে নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হবে। তা না হলে সৃষ্ট রাজনৈতিক সংকটের সমাধান হবে না।’
আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে নিরপেক্ষ ইসি হলেও কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে না। কারণ ৭৩ সালের নির্বাচন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। ইসি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেনি। কিন্তু সহায়ক সরকার বা নির্দলীয় সরকারের অধীনে যত নির্বাচন হয়েছে সব নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। সেজন্য দলীয় সরকারকে রেখে ইসিকে একশভাগ শক্তিশালী করা হলেও কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে না।
তিনি বলেন, নিরপেক্ষ ইসি গঠন প্রথম পদক্ষেপ। এরপর ইসিকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে প্রয়োজন সহায়ক সরকার গঠন।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে মওদুদ বলেন, ‘একমাত্র আন্দোলন ছাড়া আর আমাদের সামনে কোনো বিকল্প নেই। আন্দোলনে সফল না হলে সবাই ব্যর্থ বলবে। সেজন্য খালেদা জিয়ার নেতৃত্ব সকল রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ করে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে।’
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো নতুন কমিটি হচ্ছে। নতুন করে সংগঠন গুছিয়ে আরেকবার আন্দোলন করে এই সরকারকে পরাজিত করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে।
দলীয় সরকারের আনুগত্য আছে এমন ব্যক্তিদের দিয়ে সার্চ কমিটি গঠনের কথা শোনা যাচ্ছে জানিয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘সার্চ কমিটিতে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে, তারা শুধু আওয়ামী লীগই নয়, তারা
আওয়ামী লীগের চামচা। এদেরকে নির্বাচন কমিশন গঠনের দায়িত্ব দিলে তাহলে বুঝতে হবে সরকার আবার রকিব উদ্দিনের মতো কমিশন করে প্রহসনের নির্বাচন করতে চাইছে।’
তিনি বলেন, ‘ওই ধরনের নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না। সেজন্য নিরপেক্ষ সার্চ কমিটির মাধ্যমে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন করতে হবে, যাতে নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে। সেই নির্বাচন হলে আমরা বিশ্বাস করি, জনগণ বিএনপিকে ক্ষমতায় নিয়ে আসবে। সেজন্য দলের নেতাকর্মীদের একযোগে কাজ করতে হবে।’
ইসি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতি সংলাপের দিকে ইঙ্গিত করে হাফিজউদ্দিন বলেন, ‘লোক দেখানোর জন্য আলোচনা করছে। নির্বাচন কমিশনের কাদের নিয়োগ দেওয়া হবে তা দুই বছর আগেই আওয়ামী লীগ ঠিক করে রেখেছে। সার্চ কমিটির মাধ্যমে আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা নিয়োগ পেলে মানবো না।’
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের অবদানের কথা স্মরণ করে বিএনপি নেতারা বলেন, তিনি ছিলেন রাষ্ট্রের ভাগ্য পরিবর্তনের নায়ক। তার জাতীয়তাবাদী দর্শন আমাদের সংস্কৃতি-কৃষ্টি-ঐতিহ্য জিয়াউর রহমান উপলব্ধি করার সুযোগ করে দিয়েছেন। বারবার ক্রান্তিকালে জাতির হাল ধরেছেন। সেই জায়গায় জিয়াউর রহমান সবার থেকে আলাদা। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণের জন্য জিয়াউর রহমান বিএনপির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বলে মন্তব্য করেন তারা।
মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য দেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, সেলিমা রহমান, অর্থনীতিবিদ মাহবুব উল্লাহ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. খন্দকার মোস্তাহিদুর রহমান। সভা সঞ্চলনা করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন