ইসি গঠনে যেসব বিষয়ে একমত আ. লীগ-বিএনপি

  19-01-2017 08:39AM


পিএনএস ডেস্ক: নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন ইস্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ শেষ হয়েছে চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি (বুধবার)। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর শুরু হওয়া ধারাবাহিক এই আয়োজনে বুধবার পর্যন্ত মোট ৩১টি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন রাষ্ট্রপতি। এর মধ্যে প্রধান দু’টি রাজনৈতিক দল—আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রস্তাবের মধ্যে কয়েকটি বিষয়ে ঐকমত্যের বিষয়টি ফুটে উঠেছে। এছাড়া অন্য দলগুলোর প্রস্তাবের মধ্যেও কিছু বিষয়ে হুবহু মিল আছে।

রাজনৈতিক দলগুলোর লিখিত প্রস্তাব পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এখনই ইসি গঠনে আইন চায় না আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এক্ষেত্রে আর আওয়ামী লীগের ভাষ্য, ইসি ইস্যুতে আইন করা একটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এখনই আইন নয়। তবে পরবর্তী ইসি গঠনের আগে এই আইন করা যেতে পারে। আর বিএনপি মনে করে, চলতি সংসদ অনির্বাচিত সংসদ। এই সংসদে নির্বাচন কমিশন আইন হলে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না।

এ ব্যাপারে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, এলডিপি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিসহ মহাজোটের বাইরের দলগুলোও বিএনপির সঙ্গে একমত পোষণ করেছে। এ প্রসঙ্গে সাবেক নির্বাচন কমিশনার বি. জে. (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আইন নিয়ে দুই দলের কোনও দলই সিরিয়াস হতে চায় না।’

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠকে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল
ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতিকে সিদ্ধান্ত নিতে আওয়ামী লীগ একক এখতিয়ার দিলেও রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তির ওপরই জোর দিয়েছে বিএনপি।

গত ১৮ ডিসেম্বর বিএনপির সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে সংলাপ শুরু করেন রাষ্ট্রপতি। এরপর ১১ জানুয়ারি ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। এর আগে গত বছরের ১৮ নভেম্বর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গুলশানের একটি হোটেলে ইসি গঠনে প্রস্তাব দেন। এ লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতিকেই উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। এরপর ১২ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপের আমন্ত্রণ জানান।

সংলাপে অংশ নিয়ে বিএনপি ইসি গঠনে সার্চ কমিটির ওপর জোর দেয়। খালেদা জিয়া সার্চ কমিটির বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন। ইসি গঠনে সব দলের ঐকমত্যের ওপরও জোর দেয় বিএনপি। এছাড়া ইসিকে শক্তিশালী করতে ভোটারতালিকা হালানাগাদের প্রস্তাবও দেয় দলটি। বিএনপি চায় ছবিযুক্ত ভোটারতালিকা। আওয়ামী লীগও ছবিযুক্ত ভোটার তালিকার পক্ষে।

এদিকে নতুন ইসি গঠনে চারটি প্রস্তাব ও ১১ দফা সুপারিশ করে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে একটি প্রস্তাবের আংশিক বিএনপির সঙ্গে মিলে যায়। ক্ষমতাসীন দলটির তৃতীয় প্রস্তাবটি ছিল, নতুন ইসি গঠনে সম্ভব হলে এখনই একটি আইন প্রণয়ন অথবা অধ্যাদেশ জারি করা। সময় স্বল্পতার কারণে তা সম্ভব না হলে, পরবর্তী ইসি গঠনের সময় যেন তা বাস্তবায়ন করা হয়। তবে এখন থেকেই সেই উদ্যোগ নিতে হবে। আর বিএনপিও চায় না এখনই আইন হোক। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ভাষ্য, ‘এই সংসদে এই আইন প্রণয়নের প্রশ্নই আসে না। বিএনপি-জোটের শরিক বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণি বলেন, ‘অনির্বাচিত সংসদে ইসিগঠনের মতো গুরুত্বপূর্ণ আইন হলে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করা হবে।’

প্রস্তাব দিয়ে এসে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘নতুন ইসি গঠনে বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐকমত্য হবে।’

রাষ্ট্রপতিকে প্রস্তাব দিতে গিয়ে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকীও বলেছিলেন, ‘এই সংসদের আইন করার অধিকার নেই।’ এদিকে চলতি সংসদেই আইন করার পক্ষে প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় পার্টি ।

সার্চ কমিটিতে বেশিরভাগ দলের ঐক্যমত
সার্চ কমিটির মাধ্যমেই ইসি গঠনের পক্ষে প্রায় বেশিরভাগ দলমত দিয়েছে। এরমধ্যে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, এলডিপি, বিকল্পধারা, ইসলামী ঐক্যজোট, তরিকত ফেডারেশন, সাম্যবাদী দল, জাকের পার্টি, ইসলামী ফ্রন্ট, ন্যাপ উল্লেখযোগ্য।

নারী সদস্য রাখা
ইসিতে অন্তত একজন নারী সদস্য রাখার প্রস্তাব দেয় বিএনপি। এরপর অনেক দলই নারী সদস্যের পক্ষে মত দেয়। তবে ধর্মভিত্তিক দলগুলো ইসিতে নারী সদস্য রাখতে অনাগ্রহী। তারা সার্চ কমিটি ও ইসিতে একজন আলেম রাখার পক্ষে। এর মধ্যে খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, খেলাফত আন্দোলন, ইসলামী ঐক্যজোট উল্লেখযোগ্য। তবে তরিকত ফেডারেশন ইসিতে নারী সদস্য রাখার পক্ষে। বিজেপিসহ কয়েকটি দল একাধিক নারী সদস্য রাখার সুপারিশ করেছে।

প্রসঙ্গ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রাধান্য
ইসি ও সার্চ কমিটিতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাধান্য দিতে প্রস্তাব উঠে এসেছে। এক্ষেত্রে তরিকত ফেডারেশন, সাম্যবাদী দল, জাসদের প্রস্তাব উল্লেখযোগ্য।

নতুন আঙ্গিক, নতুন বিষয়
সার্চ কমিটিতে কবি-সাংবাদিক রাখার পক্ষে তরিকত ফেডারেশন। সাম্যবাদী দল সার্চ কমিটিতে সাংবাদিক চেয়েছে। ভোটকেন্দ্রের ভেতরে সিসি ক্যামেরা লাগানোর পক্ষে বিজেপি। রাষ্ট্রপতিকে প্রধান করেই সার্চ কমিটি খুঁজতে পরামর্শ দিয়েছে জাকের পার্টি। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়ে সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে সাম্যবাদী দল। ব্যবসায়ী সমাজের প্রতিনিধিদের সার্চ কমিটি ও ইসিতে রাখার সুপারিশ করেছে বিজেপি। দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদের প্রস্তাব করেছে জেএসডি। আর কোনও সার্চ কমিটিই চায় না বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট। ব্যতিক্রম সিপিবি। দলটি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিয়েও সংলাপের বিরোধিতা করেছে।

মূল উদ্যোগ নেবেন রাষ্ট্রপতি
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর বিদ্যমান ভুল বোঝাবুঝি দূর করতে হবে। রাষ্ট্রপতিও এরই মধ্যে বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের প্রয়োজন। এটিই মূল কথা। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলকে তার কথা শুনতে হবে। এখন তো তারা শক্ত, জাতি দুর্বল। রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটির মাধ্যমে ইসি গঠন করলেও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সময়ের বিতর্ক থেকে যাবে। এ কারণে সমঝোতার জন্য ক্ষমতাসীনদের নির্দেশ দিতে পারেন রাষ্ট্রপতি নিজেই। কারণ, তিনি নিজে কিছু করতে পারবেন না।’

বঙ্গভবন থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিতে সব রাজনৈতিক দলকে সহযোগিতামূলক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন