দল গুছিয়ে আনছে বিএনপি

  23-01-2017 08:46AM


পিএনএস: দীর্ঘ এক দশক ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি এখন দল গোছানোয় ব্যস্ত। আগামী দিনের আন্দোলন-সংগ্রাম বিবেচনায় নিয়ে বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন পুনর্গঠনের মাধ্যমে শক্তিশালী হচ্ছে বিএনপি। এ মুহূর্তে সরকারবিরোধী কঠিন আন্দোলনে নেমে শক্তি ক্ষয় করতে চায় না দলটি। তবে সুবিধামতো সময়ে বিএনপি ফের ঐক্যবদ্ধভাবে চূড়ান্ত আন্দোলনে যাবে বলে দলটির সিনিয়র নেতারা আভাস দিয়েছেন।

গত বছরের ১৯ মার্চ ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের পর দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হয় ৬ আগস্ট। এরপর ধাপে ধাপে বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরীর কমিটি ঘোষণা করা হয়। ইতোমধ্যে কয়েকটি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নতুন কমিটি ঘোষণা করেছে দলটি। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাতে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি আংশিক ঘোষণা করা হয়। এর আগে সোমবার মধ্যরাতে জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। তবে কৃষক দল, শ্রমিক দল, তাঁতী দল, মৎস্যজীবী দল এবং ওলামা দলের কমিটি হয়নি বহু দিন ধরে। ফলে এসব সংগঠনের অবস্থা খুবই নাজুক।

জানা যায়, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের পর আন্দোলনে যায় বিএনপি। টানা তিন মাসের আন্দোলন শেষে দল গোছানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তারপর নানা শঙ্কা আর উদ্বেগের মধ্যেও ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল করেছে বিএনপি। শুরু হয় বিএনপির কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের পুনর্গঠন। এখন ধাপে ধাপে চলছে নতুন কমিটি ঘোষণা।
স্বেচ্ছাসেবক দল : দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর গত বছরের ২৭ অক্টোবর সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিএনপির অন্যতম অঙ্গসংগঠন জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের নতুন কমিটি গঠন করা হয়। শফিউল বারী বাবুকে সভাপতি আর আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছেন ইয়াসিন আলী। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কমিটির অনুমোদন করেন। বাবু আগের কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন এবং আবদুল কাদের ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন। নতুন কমিটিতে সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সহসভাপতি গোলাম সারোয়ার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ ও সাদরাজ্জামান। তবে সংগঠনটির কোনো কাউন্সিল হয়নি।

স্বেচ্ছাসেবক দলের সর্বশেষ সভাপতি ছিলেন হাবিব উন নবী খান সোহেল। বর্তমানে তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব। বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এক নেতার একাধিক পদে থাকার নিয়ম নেই। এ কারণে আগের কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে পদ ছাড়তে হয়েছে। তবে এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়া হলেও তা কার্যকর হয়নি আজো।

মহিলা দল : গেল বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর বিএনপির গঠনতন্ত্রের ১৩ ও ৮ (১) ধারার অর্পিত ক্ষমতাবলে দলের চেয়ারপারসনের নির্দেশে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের কেন্দ্রীয় কমিটি, ঢাকা মহানগর উত্তর এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার কমিটি দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অনুমোদন করেন। কেন্দ্রীয় কমিটির নতুন সভাপতি হন আফরোজা আব্বাস। নূরজাহান ইয়াসমিন সিনিয়র সহসভাপতি, জেবা খান সহসভাপতি, সুলতানা আহমেদ সাধারণ সম্পাদক এবং হেলেন জেরিন খান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

যুবদল : এ দিকে দীর্ঘ প্রায় অর্ধযুগ পর চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি মধ্যরাতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তিন বছরের জন্য জাতীয়তাবাদী যুবদলের পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা দেয়া হয়। যুবদলের নতুন কমিটিতে সভাপতি হয়েছেন সাইফুল আলম নীরব। সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন সুলতানা সালাউদ্দিন টুকু। অন্য তিনটি শীর্ষ পদ পেয়েছেন সিনিয়র সহসভাপতি পদে মোরতাজুল করিম বাদরু, প্রথম যুগ্ম সম্পাদক নূরুল ইসলাম নয়ন ও সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান। একই সাথে যুবদল ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণেরও আংশিক কমিটি করা হয়েছে।

জাসাস : এ ছাড়া গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. মামুন আহমেদকে সভাপতি এবং হেলাল খানকে সাধারণ করে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) ৩০ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক জাতীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। কমিটিতে পদপ্রাপ্ত অন্যরা হলেন সিনিয়র সহসভাপতি বাবুল আহমেদ, সহসভাপতি রাহিজা খানম ঝুনু, মনিরুজ্জামান মনির, নূর উদ্দিন আহমেদ নূরু, আনিসুল ইসলাম সানি, ইথুন বাবু, শায়রুল কবির খান প্রমুখ।

বিএনপির যে কয়েকটি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন আছে তার অন্যতম জাসাস। অতীতে দেশের বরেণ্য পেশাজীবী ব্যক্তিদের নিয়ে সংগঠনের কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী দিনে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে একটি সুস্থ ধারায় ফিরিয়ে আনার সুদূরপ্রসারী উদ্দেশ্য নিয়ে বিএনপি জাসাসকে ফের নতুনভাবে সাজাচ্ছে বলে বিএনপি সূত্র জানিয়েছে। দলটির নেতারা জানিয়েছেন, জাসাস হচ্ছে একটি সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন। রাজপথে আন্দোলন আর সংগ্রাম করে নয় সাংস্কৃতিকভাবে কিভাবে অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায় সে ব্যাপারে কার্যক্রম পরিচালনা করাই হবে জাসাসের মূল লক্ষ্য।

ছাত্রদল : এ দিকে মেয়াদ শেষ হলেও নতুন কমিটি ঘোষণা হয়নি ছাত্রদলের। ফলে সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করছে। নতুন কমিটির দাবিতে ইতোমধ্যে নয়াপল্টনে বর্তমান কমিটির সিনিয়র নেতারা বিক্ষোভ করেছেন। ঐক্যবদ্ধভাবে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শতাধিক নেতাকর্মী। দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তালাও লাগিয়ে দিয়েছিলেন তারা। দ্ইু বছর মেয়াদি বর্তমান রাজীব-আকরাম কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত বছরের ১৪ অক্টোবর। দিন যতই যাচ্ছে ছাত্রদলের কমিটি গঠনপ্রক্রিয়া নিয়ে আবার উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে।

এ মুহূর্তে নতুন কমিটির শীর্ষ পদে কয়েকজনের নামই বেশি আলোচিত হচ্ছে। তাদের সবার সাথেই ছাত্রদলের তৃণমূল এবং সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সাংগঠনিক যোগাযোগ ভালো। সম্পাদক বা সহসম্পাদক-পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে শীর্ষপদে আলোচনায় আছেন বর্তমান সহসভাপতি নাজমুল হাসান, আলমগীর হাসান সোহান, আবু আতিক আল হাসান মিন্টু, যুগ্ম সম্পাদক মফিজুর রহমান আশিক, মো: গোলাম মোস্তফা, বায়েজিদ আরেফিন, শফিকুল ইসলাম শফিক, মির্জা ইয়াসিন আলী, কাজী মোখতার হোসেন, রাজীব আহসান পাপ্পু, সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভুইয়া, রাশিদুল ইসলাম রিপন প্রমুখ। গোলাম মোস্তফা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। তিনি ও আশিক ওয়ান-ইলেভেনের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। এ ছাড়া সহসভাপতি মামুন বিল্লাহ, ইখতিয়ার রহমান কবির আলোচনায় আছেন।

তৃণমূল পুনর্গঠন প্রক্রিয়াধীন : এ ছাড়া সারা দেশে বিএনপির তৃণমূল পুনর্গঠনের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। দফায় দফায় সময় দিয়েও নির্ধারিত সময়ে তা শেষ করতে পারেনি বিএনপি। ফলে এখনো বহু জেলায় নতুন কমিটি গঠন করতে পারেনি দলটি। বিএনপির ঢাকা বিভাগের সহসাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, কেন্দ্র নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবং ডিসেম্বর বিজয়ের মাস হওয়ায় আমরা তৃণমূল পুনর্গঠনের কার্যক্রম শেষ করতে পারিনি। এরপর পুলিশি বাধায় আমরা অনেক জায়গায় সম্মেলন করতে পারিনি। তবে পুনর্গঠন আমাদের চলমান প্রক্রিয়া। দ্রুত তৃণমূল পুনর্গঠন কার্যক্রম শেষ হবে।

তিনি বলেন, দল পুনর্গঠনের মাধ্যম আমরা আরো বেশি সংগঠিত হতে পারব। এরপর একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক চূড়ান্ত আন্দোলনে নামব আমরা। তিনি বলেন, বর্তমান স্বৈরাচার এবং নব্য বাকশাল সরকারকে হটিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে কোনো বিকল্প নেই।

ঢাকা মহানগর : এ দিকে বিভিন্ন কারণেই থমকে আছে ঢাকা মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম। তবে সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করতে ঢাকা মহানগর বিএনপির দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখছেন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ঢাকা মহানগরকে উত্তর এবং দক্ষিণে ভাগ করার প্রক্রিয়াও অনেকটা চূড়ান্ত বলে জানা গেছে। প্রসঙ্গত ২০১৪ সালের ১৮ জুলাই সাদেক হোসেন খোকা ও আবদুস সালামকে সরিয়ে মির্জা আব্বাসকে আহ্বায়ক এবং হাবিব উন নবী খান সোহেলকে সদস্যসচিব করে ৫২ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি করা হয়।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন