লাগামছাড়া ছাত্রলীগ

  18-02-2017 08:40AM



পিএনএস ডেস্ক: ‘শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি’ ছাত্রলীগের মূলনীতি হলেও শিক্ষাঙ্গনে অশান্তি সৃষ্টির জন্যই সংগঠনটি সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হয়েছে। গত কয়েক বছরে নেতাকর্মীদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, প্রতিপক্ষের ওপর হামলা, সংঘর্ষ, গোলাগুলি, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অস্ত্র প্রদর্শন, দখল-বাণিজ্যের সঙ্গে কিছুসংখ্যক নেতাকর্মী জড়িয়ে পড়ায় বরাবরই শিরোনামে উঠে এসেছে সংগঠনটির নাম। অথচ ’৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ’৬২ শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৯ গণঅভ্যুত্থান এমনকি ’৯০ আন্দোলনের সংগঠনটি অসামান্য অবদান রেখে উজ্জ্বল্য ছড়িয়েছে। ছাত্রলীগের বর্তমানের কর্মকান্ডের কারণে শিক্ষাবিদ, সুশীল সমাজ থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাও তাদের সমালোচনা করেছে। তাদের কর্মকান্ডে ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে ২০০৯ সালের ৩ এপ্রিল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারপরও যেনো কোনভাবেই থামানো যাচ্ছে না ছাত্রলীগকে। কিছুদিন পরপরই সংঘর্ষ আর শিক্ষার্থী-নেতাকর্মী খুনের ঘটনা ঘটছে। তারা নিজেরাই খুনাখুনি করছে। বর্তমান সরকারের মেয়াদকালেই অন্তত পাঁচ শতাধিক সংঘর্ষে জড়িয়েছে ছাত্রলীগ। প্রতিপক্ষ বিএনপি সমর্থিত ছাত্রদল ও জামায়াত সমর্থিত ইসলামী ছাত্রশিবির মাঠে না থাকায় এসব সংঘর্ষের বেশিরভাগই ঘটেছে নিজেদের মধ্যে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, নেতাকর্মীদের আদেশ-নির্দেশ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে অনেক জায়গায় কমিটি বিলুপ্ত করতে বাধ্য হয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা। অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানও বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছে কর্তৃপক্ষ। এতে একদিকে যেমন নষ্ট হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ, অন্যদিকে সেশনজটসহ আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে পড়তে আসা সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গত এক বছরেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিজেদের মধ্যে দেড় শতাধিক সংঘর্ষ ও হামলা-পাল্টা হামলা হয়েছে। এতে ১০ নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন পাঁচ শতাধিক। প্রতিপক্ষ দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চলছে অহরহ। অতিস¤প্রতি সংগঠনটির কোন্দল ও সংঘাত বেড়েছে কয়েকগুণ। এক সময় ছাত্রলীগকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা ভরসাস্থল মনে করতো; এখন ছাত্রলীগ নাম শুনলেই আতকে উঠে। ছাত্রলীগ মানেই যেন বিভীষিকার নাম।

সর্বশেষ গত ১১ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজার এলাকায় ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত হয় ইয়াসির আরাফাত নামে এক ছাত্রলীগ কর্মী। এসময় হারুনুর রশিদ নামে আরও একজন আহত হয়েছেন। ইয়াসিন সিটি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। কাঁটাকাটি পরে ধাওয়া-পাল্টা-ধাওয়ার একপর্যায়ে আহাদ পক্ষের ছেলেরা ইয়াসিরকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে। এতে তিনি গুরুতর আহত ও পরবর্তীতে মারা যান। ওইদিন রাতেই যশোরের শার্শায় ছাত্রলীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষে, উলাসী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি বিপ্লব হোসেন নিহত হন।

পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত আট বছরে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নিহত হয়েছেন ৫৭ জন। ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চলতি বছর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এসব প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় বন্ধ হয়ে যায় অর্ধশতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। গত এক বছরেই দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দেড় শতাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটিয়েছে। এসব সংঘর্ষে ১১ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজার এলাকায় ছাত্রলীগ কর্মী ইয়াসির আরাফাত ও যশোরে বিপ্লব হোসেন ছাড়াও গত ৩১ জুলাই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে খালেদ সাইফুল্লাহ, ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ’র ছাত্র সোহেল আহমেদ, ২১ মার্চ নোয়াখালীর সরকারি কলেজ এলাকায় ফজলে রাব্বী রাজীব ও সাইফুল ইসলাম ওয়াসিম নিহত হন। এছাড়া সশস্ত্র সংঘর্ষ, পুলিশের ওপর হামলা, পুলিশের সামনে প্রতিপক্ষ ছাত্র সংগঠনের ওপর হামলা, রেলস্টেশন ভাঙচুর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হলের কক্ষ ভাঙচুরসহ নানা ঘটনা ঘটেছে। ছাত্রলীগের সংঘর্ষে বন্ধ করে দেয়া হয় কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট), সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

এর মধ্যে ৩১ জুলাই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে শোকের মাস আগস্ট উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে মোমবাতি প্রজ্বলনের পর গোলাগুলি শুরু হয়। বঙ্গবন্ধু হলে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে খালেদ সাইফুল্লাহ নামে এক শিক্ষার্থী নিহত হন। সংঘর্ষের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকাল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সাইফুল্লাহ বিপণন বিদ্যা বিভাগের সপ্তম ব্যাচের ছাত্র ও কবি নজরুল হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। এতে আহত হয় আরও নয়জন। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার পর হলে তল্লাশি চালিয়ে বঙ্গবন্ধু হলের পানির ট্যাংকের ভেতর থেকে একটি পিস্তল, ৪৫টি ধারালো অস্ত্র এবং ২০টি লোহার রড, ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হল থেকে ৪০টি ধারালো অস্ত্রসহ তিন বহিরাগতকে আটক করে পুলিশ।
২৭ মে বরিশালে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নিহত হন পলিটেকনিক ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম। ২৯ মার্চ চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদায়ী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি করাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুইপক্ষের সংঘর্ষে সোহেল আহমেদ নামে এক শিক্ষার্থী নিহত হয়। সোহেল ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ’র ছাত্র ছিলেন। এই ঘটনায় আহত হয় আরও ২ শিক্ষার্থী। এ ঘটনার জের ধরে নগরীর ওয়াসা ও প্রবর্তক মোড়ের ৫০টির বেশি দোকান ও প্রতিষ্ঠানে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। ভাঙচুর করা হয় ২০টির বেশি সিএনজি। এ ঘটনার পরপরই অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে দেয়া হয়।

২১ মার্চ রাতে নোয়াখালীর সরকারি কলেজের পুরোনো ক্যাম্পাস এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ-সমর্থক দুইপক্ষের গোলাগুলিতে দু’জন নিহত হয়। তারা হলেন, ফজলে রাব্বী রাজীব ও সাইফুল ইসলাম ওয়াসিম। তারা দু’জনই নোয়াখালী কলেজের ছাত্র ছিলেন। সংগঠনের জুনিয়র কর্মীদের একটি বিরোধের বিষয় নিয়ে ছাত্রলীগ-সমর্থক একটি পক্ষের সঙ্গে তারা কথা বলছিলেন। এ সময় সেখানে বাগ্বিতন্ডার একপর্যায়ে ওই তিনজনকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। এতে ফজলে রাব্বি ঘটনাস্থলেই নিহত এবং মো. ওয়াসিম ও মো. ইয়াছিন গুলিবিদ্ধ হন। ঢাকায় নেয়ার পথেই ওয়াসিমের মৃত্যু হয়।

২০ মার্চ ছাত্রলীগের বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার মশাজান-নোয়াবাদের গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষে তাসপিয়া প্রমি নামের পাঁচ মাসের এক শিশু নিহত হয়। ১৯ জানুয়ারি সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হন ছাত্রলীগ কর্মী কাজী হাবিবুর রহমান।

সাম্প্রতিক কয়েকটি সংঘর্ষের ঘটনা : গত এক বছরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দেড় শতাধিক সংঘর্ষে জড়িয়েছে। সর্বশেষ গত ১২ ফেব্রুয়ারি কথা কাটাকাটি জেরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষে ৮ জন আহত হয়। সংঘর্ষের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহজালাল হলে ৮ থেকে ১০টি কক্ষ ভাঙচুর করে উভয় পক্ষের নেতাকর্মীরা। ৯ ফেব্রুয়ারি বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজে বইমেলার মঞ্চে বসা নিয়ে ছাত্রলীগের দুইপক্ষের সংঘর্ষে ৫ জন আহত হয়। পরবর্তীতে তা আধিপত্য বিস্তারে রূপ নিলে দু’পক্ষে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় তারা দুটি ছাত্রাবাসে আগুন ও দুটি মোটরবাইক ভাঙচুর করে। ২১ জানুয়ারি ঢাকা কলেজে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে ফের ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংগঠনটির অস্ত্রাগার হিসেবে পরিচিত এই প্রতিষ্ঠানে প্রায় সময় সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে থাকে। সর্বশেষ সংঘটিত ওই সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় ছাত্রলীগের ৫ জন আহত হয়। ঢাকা কলেজের নর্থ হলে আহ্বায়ক কমিটি ও বঞ্চিত গ্রুপের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনায় ৭টি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরবর্তীতে পুলিশ তল্লাশি করলে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে। গতবছরের শেষের দিকে ২৮ ডিসেম্বর কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ১৫ জন আহত হয়। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে চলা এই সংঘর্ষ বড় আকার ধারণ করলে বন্ধ ঘোষণা করা হয় কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ (কুমেক)। ১৬ ডিসেম্বর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) বিজয় দিবসের উন্নতমানের খাবার খাওয়াকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে ছাত্রলীগের ৬ কর্মী আহত হয়।

১১ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কয়েকদিন পর বিশ্ববিদ্যালয়টি খুলে দিলে এর ১০ দিন পরেই আবারও সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে তারা। ২০ ডিসেম্বর অধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ সংঘর্ষে জড়ালে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ফের অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ১১ ডিসেম্বর হবিগঞ্জে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ছাত্রলীগ কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে পুলিশসহ আটজন আহত হয়। এ সময় পুলিশের দুটি গাড়িসহ বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে তারা। ৯ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শাটল ট্রেনের সিটে বসাকে কেন্দ্র করে শাহ জালাল ও আমানত হলের সামনে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি পক্ষ ও সাধারণ সম্পাদক অনুসারীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। ৮ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে জুনিয়র কর্মী সিনিয়রকে সালাম না দেয়ায় ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় উভয় গ্রুপের পাঁচ নেতা-কর্মী আহত হন। ১১ নভেম্বর আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) বন্ধ করে দেয়া হয়। ২৭ আগস্ট খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ছাত্রলীগের দুইপক্ষের সংঘর্ষে ২০ জন আহত হয়। ২৩ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এএফ রহমান হলে ঘুম থেকে তুলে ছাত্রলীগের এক নেতাকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে সংগঠনটির অন্য গ্রুপের নেতাকর্মীরা। ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত স্মরণিকায় একটি ভুলকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির গাড়ি ভাঙচুর করে তার বাসভবনের মূল ফটকে তালা লাগিয়ে দেন কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আনুষ্ঠানিকভাবে স্মরণিকাটি বাজেয়াপ্ত করার ঘোষণা দেয়ার পরেও এ হামলার পেছনে ছাত্রলীগের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট কারণ রয়েছে বলে অভিযোগ করেন সংশ্লিষ্টরা।

জুলাইতেই বরিশাল সরকারি বিএম কলেজে ছাত্রলীগের এক পক্ষের হামলায় অপর পক্ষের তিন কর্মী আহত হয়। চট্টগ্রাম কলেজের সামনে জঙ্গিবাদবিরোধী মানববন্ধন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুইপক্ষের মধ্যে গোলাগুলি ও সংঘর্ষ হয়। এ সময় ৩ জন ছাত্রলীগ কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়। নকলে বাধা দেয়ায় রংপুর সরকারি কলেজে ক্লাস চলার সময় শ্রেণিকক্ষে ঢুকে ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী এক শিক্ষকের ওপর হামলার চেষ্টা চালায়। সিলেটের জকিগঞ্জ সরকারি কলেজে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে ১২ জন আহত হন। বরিশালের গৌরনদী উপজেলায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে ১৫ নেতাকর্মী আহত হয়। ২৯ এপ্রিল বরিশাল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুইপক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ১৫ জন আহত হয়। গত বছর ৭ মার্চ সিলেট এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুইপক্ষের সংঘর্ষে ৯ জন আহত হন। গতবছর ১৮ জানুয়ারি মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হন। এ সময় মদ্যপ অবস্থায় আলামীন হোসেন নামে এক ছাত্রলীগ কর্মীকে আটক করে পুলিশ। ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন উপলক্ষে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঠাকুরগাঁও ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে পথচারীসহ ১০ জন আহত হন।

ছাত্রলীগের বক্তব্য : এ বিষয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ এর আগে বলেছিলেন, কিছু কিছু বহিরাগত ছাত্রলীগের ভাবমর্যাদা নষ্ট করার জন্য সংঘর্ষের ঘটনা ঘটায়। তারা চায় আমাদের বিতর্কিত করতে। মূলত এ ধরনের সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িতরা কেউ ছাত্রলীগ করে না। এরা বহিরাগত। এরপরেও যদি ছাত্রলীগের কেউ এর সঙ্গে জড়িত থেকে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার ক্ষেত্রে সহায়তা করা হবে।সূত্র: ইনকিলাব

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন